ছোটদের প্রিয় খেলনা পুতুল। কিন্তু এমন পুতুলও আছে সেগুলি যেমন ভয়ংকর তেমনি রহস্যময়।মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি থেকে ১৭ মাইল দক্ষিণে জোকিমিলকো জেলায় রয়েছে ভয়ংকর এক ‘পুতুল দ্বীপ’। সাধারণ একটি ঘটনা থেকেই এই দ্বীপের রহস্যময় যাত্রা শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। ঘটনাটি আজকের নয়, প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ বছরের আগের ঘটনা।
চারদিক জুড়ে নীল জলরাশির মাঝে সবুজে ঘেরা এই দ্বীপ। স্থানীয়দের ভাষায় দ্বীপটির নাম ইলসা ডে লাস মিউনিকাস, ইংরেজিতে ‘দ্য আইল্যান্ড অব ডেথ ডলস’ বলা হয়। দূর থেকে দেখলে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মন ভরে যাবে। অথচ কাছে গেলেই গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে। কারণ দ্বীপের প্রতিটা গাছে ঝুলছে বীভৎস চেহারার সব পুতুল।কোনোটার মাথা নেই তো কোনোটার হাত পা। আবার কোনটার সারা শরীর কাঁটা-ছেঁড়া। চোখের শেষ সীমানা পর্যন্ত দেখা মিলবে এমন দৃশ্য। মস্তিষ্ক একটু শান্ত হলে, মনে প্রথম প্রশ্ন জাগবে কোথা থেকে এলো এত পুতুল? কে এমন ক্ষতি করল পুতুলগুলোর? কেনইবা গাছে সেগুলো ঝুলিয়ে দিল? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে বেশ কয়েক যুগ পিছিয়ে যেতে হয়।
জানা গিয়েছে, ওই দ্বীপটি ছিল শীতল ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। তিন মেক্সিকান শিশু এই দ্বীপে না কী পুতুল নিয়ে খেলা করছিল। খেলাচ্ছলেই তারা পুতুলের বিয়ে দিয়ে দেয়। আর ঠিক সেইসময়ই হঠাৎ করে একটি শিশু উধাও হয়ে যায়।এরপরই শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। অনেক খোঁজার পর পাশের একটি খালে সেই শিশুটির মৃহদেহ পাওয়া যায়। সেই থেকে সাধারণ মানুষের কাছে এই দ্বীপটি হয়ে ওঠে ভয়ংকর এক দ্বীপ এবং সেই থেকে লোকমুখে কালক্রমে প্রচলিত হয়ে আসছে নানা কাহিনী। মেক্সিকোর অনেক সাহসী বীরেরও বুক কেঁপে ওঠে এই দ্বীপটিতে গেলে।
মানুষের মধ্যে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করার জন্য মেক্সিকান সরকার ১৯৯০ সালে এই দ্বীপটিকে ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ’ ঘোষণা করে দ্বীপটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পর্যটন অঞ্চল বানানোর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু পর্যটকরা কদাকার পুতুল দেখে রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে, এই অজুহাতে এখানে আসতে ভয় পান তাঁরা। সারা মরসুমে ২০-৩০ জনের বেশি পর্যটক এই দ্বাপমুখো হন না বলে জানা গিয়েছে।এরপর পরিবার ত্যাগ করে জনমানবশূন্য এই দ্বীপে বসবাস করতে শুরু করেন ডন জুলিয়ান সান্তানা ব্যারেরা নামক এক ব্যক্তি। তিনি এই দ্বীপে ঝোপ-জঙ্গলে ঢাকা একটি নালায় সেই বাচ্চা মেয়ের ভেসে ওঠা মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এর কিছুদিন পর নালার ঠিক ওই একই জায়গায় একটি পুতুলও ভেসে উঠে। এরপর থেকে সারা দিনই বাচ্চা মেয়ের ফিসফিস শুনতে পেতেন জুলিয়ান। তার খেলার শব্দ, ছুটে বেড়ানোর শব্দও কানে ভেসে আসতো। জুলিয়ান বাচ্চা মেয়েটির আত্মাকে শান্ত করতে নালা থেকে পুতুলটি এনে গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন। এরপর নানা জায়গা থেকে বিভিন্ন পরিত্যক্ত পুতুল এনে দ্বীপের গাছগুলোতে ঝোলাতে শুরু করেন। একটি একটি করে দ্বীপের প্রায় সব গাছই ভরে যায় পরিত্যক্ত পুতুলে।
তারপর ২০০১ সালে ডন জুলিয়ানের রহস্যজনকভাবে মৃত্য হয়। যে নালায় বাচ্চা মেয়েটির মৃতদেহ দেখার দাবি করেছিলেন তিনি, ঠিক সেখানেই ডুবে মারা যান জুলিয়ান। এরপর থেকে পর্যটকরা জুলিয়ান এবং ছোট মেয়েটিকে শ্রদ্ধা জানাতে দ্বীপে পুতুল নিয়ে আসতো। পুতুল এনে পর্যটকরা গাছে ঝুলিয়ে রাখতো। পরবর্তীকালে জুলিয়ানের পরিবার এইসব বিষয় অস্বীকার করে জানায়, তিনি মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না। উল্লেখ্য জুলিয়ানের মৃত্যুর পর ২০০১ সাল থেকেই ওই দ্বীপটির নাম “চায়নাম্পাস”নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।