আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ অবশেষে গ্রেফতার। সিবিআই তাঁকে টানা ১৬ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করে তারপরে গ্রেফতার করেছে। সোমবার তাঁকে তলব করা হয়েছিল নিজাম প্যালেসে। বিকেলে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নিজাম প্যালেসে। তারপরে সেখানেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় বলে সিবিআই সূত্রের খবর। ১৫ অগাস্ট থেকে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তের ভার নিয়েছিল সিবিআই। তারপর থেকে তারা টানা ১৬ দিন জেরা করে সন্দীপ ঘোষকে। মাঝখানে শনি ও রবিবার জেরা হয়নি গত রবিবার সন্দীপের বাড়িতে গিয়েছিল সিবিাই। তারপরে ১৬ দিনের মাথায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। দুর্নীতি মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আর সেই খবর পৌঁছানোর পরই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফার দাবিতে লালবাজার অভিযানের মধ্যেই এক আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘যেটা পুলিশ করতে পারেনি, সেটা সিবিআই করে দেখিয়েছে।’অন্য একজন বলেন, ‘তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করল। অথচ এখনও স্বাস্থ্যভবন থেকে অপসারণ করা হয়নি।’তবে সন্দীপকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে আন্দোলন থামবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অন্য এক চিকিৎসক। ফিয়ার্স লেনে ধরনায় বসে থাকা এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘ধর্ষণের মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেফতার করা করা হয়েছে। তাই দিদির (তরুণী চিকিৎসক) ঘটনায় যাঁরা আসল দোষী, তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলবে।’
গত ৯ অগাস্ট আরজি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। সেই সময় সন্দীপ ছিলেন আরজি করের অধ্যক্ষ। তারপর থেকেই সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। জুনিয়ার ডাক্তাররা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে সরব হয়। তাঁর পদত্যাদের দাবিও উঠতে থাকে। তারপরই সিবিআই-এর হাতে যায় আরজি কর মামলার তদন্ত ভার। ১৬ অগাস্ট মাঝ রাস্তা থেকে তুলে সন্দীপকে নিয়ে যায় সিবিআই এবং জেরা শুরু করে। তারপর থেকে লাগাতার জেরা চলে। দৈনিক প্রায় ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা জেরা করা হয়। তারপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিবিআই-এর দুটি দল আরজি কর নিয়ে তদন্ত শুরু করছে। একটি দল আরজি করের চিকিৎসক খুন কাণ্ডের তদন্ত করছে। অন্য দলটি আরজি করের আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত করছে। আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে সিবিআই ইতিমধ্যেই দিল্লিতে ইডির কর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছে। তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে। গত ২৫ অগস্ট সকালে সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের একটি দল। ৭৫ মিনিট বাইরে অপেক্ষার পর দরজা খোলেন সন্দীপ। ভিতরে ঢোকেন সিবিআই কর্তারা। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। এ ছাড়া, ওই হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্তভারও সিবিআইয়ের হাতে দিয়েছে আদালত। দুটি মামলাতেই কেন্দ্রীয় সংস্থার জোড়া আতশকাচের নীচে রয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। আর্থিক অনিয়মের মামলায় ২৪ অগস্ট এফআইআরও করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, সেই এফআইআরের ভিত্তিতেই সন্দীপের বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআইয়ের দল। তার মাঝে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সন্দীপ-সহ মোট সাত জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করেছিল সিবিআই।
মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকে আরজি করে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাতে আবাসিক চিকিৎসক থেকে পড়ুয়া, সকলেরই অন্যতম দাবি ছিল সন্দীপের অপসারণ কিংবা পদত্যাগ। আন্দোলনের চাপে পড়ে ১২ অগস্ট পদত্যাগ করেন সন্দীপ। স্বাস্থ্য দফতরে গিয়ে নিজের পদত্যাগপত্র জমাও দেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্দীপকে কলকাতার অন্য একটি সরকারি হাসপাতালের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সেখান থেকেও তাঁর অপসারণের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। এর মাঝে মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দেয় সন্দীপকে ছুটিতে যেতে। সেই থেকে ছুটিতেই ছিলেন সন্দীপ। পরে অবশ্য আন্দোলনের চাপে তাঁকে সেই পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।