মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ১০০ দিন পেরতেই হিন্দু-সহ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন হিংসার শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ। অভিযোগ পোড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি,মন্দির। গত শুক্রবার চট্টগ্রামে জুমার নামাজের পর মৌলবাদীরা শান্তনেশ্বরী মন্দিরে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। হিন্দুদের দোকান ও বাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। এই ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। গত সোমবার ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণদাস গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই উত্তাল পদ্মাপার। দিকে দিকে প্রতিবাদে নেমেছে হিন্দুরা। এক আইনজীবীর মৃত্যুতেও উত্তপ্ত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা। চিন্ময় কৃষ্ণদাস গ্রেফতারের প্রতিবাদে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিটি জেলায় শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করে। তবে, এই শান্তিপূর্ণ সভাগুলিতে চরমপন্থী দলগুলি আক্রমণ চালায়। চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে মৌলবাদীরা।
হাজার হাজার বাংলাদেশি হিন্দু তাদের অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে চট্টগ্রামে রাস্তায় নেমে আসে। অভিযোগ উগ্রবাদী ও মৌলবাদীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত জনগণের ওপর হামলা চালালেও প্রশাসন ও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে বসবাসকারী হিন্দুরা টার্গেট হয়েছে। বেছে বেছে হিন্দু বাড়ি ঘর ও তাদের ধর্মীয় স্থানগুলি তেহামলা চালানো হচ্ছে। চলছে খুন-লুঠ, বাদ যাচ্ছেন না মহিলারাও। অত্যাচারিত হচ্ছে মহিলারা। অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে বাড়ির বাইরে পা রাখছেন না। ছাড়ছেন নিজেদের বাসস্থান। ভারত বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হামলার ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে সংসদে দেওয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছেন। হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর যে আক্রমণ চলছে তাতে ভারতের শীর্ষ স্তর থেকেই মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রশাসনকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র 8 শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁদের সুরক্ষা। প্রায় ২০০ টির বেশি হামলার সম্মুখীন হয়েছে সংখ্যালঘুরা। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই, অক্টোবরে এক সমাবেশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাকে অসম্মান করার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকা বিমানবন্দরে হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। তারপরেই নতুন করে অশান্ত হয় বাংলাদেশ। কোর্ট তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ করে দেয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। গ্রেফতারির প্রতিবাদে হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা প্রতিটি জেলায় শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করে। তবে, এই শান্তিপূর্ণ সভাগুলিতে চরমপন্থী দলগুলি আক্রমণ চালায়। চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে মৌলবাদীরা।পোড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ঘরবাড়ি,মন্দির।
এদিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান বদল করে বাংলাদেশ ইসকন বিবৃতি দিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণদাসের আন্দোলনকে সমর্থনের বার্তা দিয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হল, চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে কোনও দূরত্ব তৈরি করা হয়নি। তাঁর আন্দোলনকে সমর্থন করে ইসকন। তবে চিন্ময় কৃষ্ণ সম্পর্কে কিছু বিষয় শুধু স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংগঠনের তরফে বলা হয়, চিন্ময়কৃষ্ণ ইসকন-এর সদস্য নন। তাই তাঁর কোনও কাজের দায় ইসকন নিচ্ছে না। অনুগামীদের আন্দোলনের জন্য ইসকন দায়ী নয়। রাত কাটতে না কাটতেই নিজেদের অবস্থান বদল করল বাংলাদেশের ইসকন।
শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ ইসকনের তরফে নতুন বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আমরা শুধু স্পষ্ট করেছি চিন্ময় কৃষ্ণদাস ইসকনের সদস্য নন। বাংলাদেশের ইসকনের প্রতিনিধিত্ব তিনি করছেন না। চিন্ময়কে তারা সমর্থন করেন। তারা এও জানিয়েছে, বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষার জন্য যে সব ধর্মীয় বা সনাতনী সংগঠন আন্দোলন করছে, সেই সব সংগঠনকেও ইসকন সমর্থন করে। এদিকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক চাপানউতোরের কারণে বড় রকমের ধাক্কা খেতে বসেছে বসিরহাট ঘোজাডাঙা বর্ডারে আমদানী রপ্তানি বানিজ্য। পাশাপাশি ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে পর্যটক কম আসার ব্যাপক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যাবসায়ী এবং ছোট বড় দোকান ও হোটেল ব্যবসায়ীরা। উল্লেখ্য, গত ৫ অগস্ট জনবিক্ষোভের জেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা। সেই থেকে তিনি ভারতেই রয়েছেন। অন্য দিকে, বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা সংশয়।