কৌশিক সরকার
দুটি সংজ্ঞা
মহীসোপান: পৃথিবীর মহাদেশগুলোর চর্তুদিকে স্থলভাগের যে অংশ অল্প অল্প ঢালু হয়ে সমুদ্রের জলের মধ্যে নেমে গেছে তাকে মহীসোপান বলে।
মহীঢাল: মহীসোপানের শেষ সীমা থেকে ভূ-ভাগ খাড়াভাবে নেমে সমুদ্রের গভীরে তলদেশের সাথে মিশে যাওয়া অংশকে মহীঢাল বলে।
নয়া শিক্ষানীতির প্রাসঙ্গিক অংশ
প্রথম শ্রেনিতে পড়ার আগে ৩ বছরের প্রাক স্কুল শিক্ষা ।
থাকছে না ১০ + ২ স্কুল শিক্ষা
বদলে আসছে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থা।
প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেনি আর তার আগের তিন বছর মিলে ৫ বছরে ভিত তৈরি।
তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি প্রস্তুতি পর্ব।
ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মাঝারি পর্বর শিক্ষা ।
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি মাধ্যমিক শিক্ষা।
অনেক বেশি ও বিভিন্ন রকম বিষয় একসঙ্গে পড়ার সুযোগ। মৌলিক চিন্তা উৎসাহ দিতে কমবে পাঠক্রম।
পরীক্ষায় মুখস্থর বদলে প্রয়োগ ও সমাধানে জোর।
তৃতীয় , পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বিশেষ পরীক্ষা।
প্রাক-স্কুল শিক্ষা
নয়া শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার আগে ৩ বছরের প্রাক স্কুল শিক্ষার কথা। শহরে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে সেটি একটি চালু প্রক্রিয়া। বলা ভালো, তাদের অনেকেই পাঁচ বছরে ছেলে বা মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করার আগে তিন বছর কেন, পারলে পাঁচ বছরের প্রাক স্কুল শিক্ষা দিতে পারলেই যেন খুশি হতেন। আর সেই বয়স থেকেই কিন্তু বাচ্চাদের ওপর তৈরি হচ্ছে এক শারীরিক এবং মনস্তাত্ত্বিক চাপ। বাইরের অনেক উন্নত দেশে কিন্তু ছয় বছরের আগে প্রথম শ্রেনিতে ভর্তির ব্যবস্থাই নেই শিশুদের। তা সে ধনী পরিবারের সন্তান হোক বা নির্ধন।
এতো গেল না-হয় শহরের কথা। কিন্তু গ্রাম ? আজও প্রাথমিকে শিশুদের আনতে হলে ব্যবস্থা করতে হয় মিড ডে মিলের। আর তার আগে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রে গিয়েই তাদের ন্যুনতম পুষ্টি এবং অক্ষর জ্ঞানের ব্যবস্থা হয়। গ্রামের একটা বড় অংশের পরিবারেই সন্তানের লেখাপড়ার দিকটি নিজেরা তত্ত্বাবধানের মতো জায়গায় থাকেনা অভিভাকেরা।
তবুও চালু ব্যবস্থাতেই একটা নিদান রয়েছে বটে। প্রশ্ন উঠছে, তার কার্যকারিতা নিয়ে। আর নতুন ব্যবস্থাই বা সেক্ষেত্রে কি পরিবর্তন আনতে পারবে? এদেশের বাস্তবতা সম্পর্কে খানিক ধারণা থাকা ভালো। দেশের পঞ্চম শ্রেণির বেশিরভাগ ছাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির যোগ-বিয়োগ করতে পারে না, বা একটা মাতৃ ভাষায় লেখা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্ররা পাঠ করতে পারে না।
এইট পাশ সার্টিফিকেট
এর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। আবার আছেও। মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণরা এখন সাধারণভাবে কাজের জগতে কিংবা অন্যত্র যে সার্টিফিকেটটা পেশ করেন তা এইট পাশের। সেভেন নয়, নাইনও নয়। আর অষ্টম ক্লাস পর্যন্তও পৌঁছাতে না পারলে ভরসা সাক্ষরতার প্রমাণ। অর্থাৎ এই এইট পাশের একটা সামাজিক বৈধতা কিন্তু রয়েছেই।
কেন্দ্রের নয়া শিক্ষানীতিতেও পঞ্চম, অষ্টম এবং দ্বাদশ-এই তিনটে ধাপে ভাঙা হয়েছে। অষ্টম -র প্রশ্নটা আসছে সেখান থেকেই। অন্যভাবে বলতে গেলে এটি চালু পুরানো একটি ব্যবস্থা।
সমতা ফেরানোর ভাবনা
এরাজ্যেও কিন্তু স্কুল স্তরের পাঠ্যক্রমের অসামঞ্জস্য গুলো দূর করার উদ্দেশ্যেই ২০০১ সালে অধ্যাপক রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি ১৩ সদস্যের কমিটি তৈরি করেছিল বিগত বাম সরকার। দেশের বিভিন্ন বোর্ডের সিলেবাসের ফারাক, প্রশ্নপত্র এবং মুল্যায়ণ পদ্ধতি, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের ফারাক- এমন নানা বিষযে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল রঞ্জু গোপাল মুখোপাধ্যায় কমিটি। যেখানে বলা হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের গভীরতা বেশি হলেও, সিবিএসই-র পাঠক্রমের ব্যপ্তি বেশি। যেমন, অর্থনীতি, পরিসংখ্যান কিংবা ভারতীয় সংবিধানের সম্পর্কে একটি ধারণা সিবিএস-ই তে থাকে। যা মাধ্যমিক বোর্ডে নেই। এখন অবশ্য মাধ্যমিক স্তরের প্রশ্নপত্র এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও এসেছে সিবিএসই-র সেই ব্যবস্থা।
শুধু তাই নয়, অষ্টম শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক সিলেবাস জ যদি বা মহিসোপান হয়, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের সিলেবাসের মধ্যে যেন মোহিঢাল। তল পাওয়া দুস্কর।
রাজ্যের বিগত বাম জমানায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের আমল থেকেই কিন্তু সে কারণে অষ্টম এবং একাদশ শ্রেণি থেকে বিশেষত বৃত্তিমূলক শিক্ষায় জোর দেওয়া শুরু হয়েছিল। কারণ, প্রথাগত শিক্ষায় যারা থাকতে পারবেন না তারা যেন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অন্তত তাদের কর্মযোগ্যতা বাড়াতে পারেন। সারা দেশে যত সংখ্যক শিশু লেখাপড়ার আঙিনায় প্রবেশ করে তার বড়জোর ৬ শতাংশ প্রবেশ করে উচ্চশিক্ষায়।
সমস্যা মিটবে কী ?
এ রাজ্যেও বছর কয়েক আগে থেকেই কলেজ নয়, স্কুলেই উচ্চমাধ্যমিক পড়ানোর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। যদিও তার সঙ্গে পাঠ্যক্রম বা পাঠ্যসূচি নয়, যুক্ত ছিল মূলত পরিকাঠামো এবং শিক্ষাদানের ব্যবস্থাটি। এখন অষ্টম-র পর দ্বাদশ-র যে ব্যবস্থাটি চালু করার কথা বলা হচ্ছে তার ব্যাপ্তি অনেক বেশি। রাতারাতি তা সম্ভবও নয়। সেটা নিছক পরিকাঠামোগত ইস্যুও নয়।