প্রথম পর্ব
দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম সীমান্ত জুড়ে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুদীর্ঘ আন্দিজ পর্বতমালা। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল এবং দক্ষিণ আমেরিকার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই আন্দিজপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমিহয়ে গড়ে উঠেছে, যা আন্দিজকে করেছে অনন্য এবং অসাধারণ। এছাড়া এই অঞ্চল জুড়ে রয়েছে জীববৈচিত্র্য এবং উদ্ভিদজগতের এক অপূর্ব সমাহার। আন্দিজ কোনো একক পর্বত নয়, অনেক পর্বতশ্রেণি নিয়ে গঠিত। তাইআন্দিজ পর্বতমালা বলা হয়। আন্দিজ পর্বতআকরিক এবং লবণের বিশাল ভান্ডার। পুরো বিশ্বের প্রায় ৪৫ শতাংশ তামা, ৩০ শতাংশ রূপো এই আন্দিজের খনি থেকে আসে। সীসা ও দস্তাও পাওয়া যায় আন্দিজে। উল্লেখ্য, আন্দিজে রয়েছে সোনার বিশাল ভাণ্ডার।
কলম্বিয়ার ‘অ্যান্টিওকুইয়া’র অবস্থান আন্দিজ পর্বতমালার বুকের মধ্যে।অ্যান্টিওকুইয়াতে আছে ছবির মত সুন্দর ‘আবুররা’ উপত্যকা। সেই উপত্যকায় আছে ‘অ্যান্টিওকুইয়া’ প্রদেশের রাজধানী মেডেলিন সিটি। যার আর এক নাম, ‘চির বসন্তের শহর’। মেডলিন শহরে পৌঁছনোর জন্যই আন্দিজ পর্বতমালা নিয়ে এত কথা। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে বত্রিশ বছর আগে, ডিসেম্বর মাসের এক সন্ধ্যায়।আন্দিজপর্বতমালার ওপারে তখন সূর্য ধীরে ধীরে মুখ লুকাচ্ছেআর মেডেলিন শহরকঠিন ঠান্ডায় ডুবে যাচ্ছে। সেদিন ওই শহরে ঠান্ডা যেন একটু বেশি জাঁকিয়ে পড়েছিল। তা না হলে ন’বছরের ম্যানুয়েলা অত কাঁপতো না। সেদিন সে ঠান্ডায় এতটাই কাঁপতে শুরু করেছিল যে তার বাবা-মা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়।
এদিকে সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত নামতেঠান্ডার মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। ম্যানুয়েলার দিকে তাকিয়ে ম্যানুয়েলার বাবার মুখ থমথমে হয়ে যায়।তাঁর স্ত্রী মারিয়া ও ছেলে জুয়ানও বিষন্ন মুখে বসে থাকে। ঘরের মধ্যে ফায়ার প্লেস রয়েছে কিন্তু আগুন জ্বালানোর কাঠ নেই। এদিক সেদিক থেকে যে কাঠ জোগার হবে তারও উপায় নেই। কারও কিছু করারও নেই। এদিক ওদিক যাওয়া তো যাবেই না, এমনকি ঘর থেকেও বেরনোর উপায় নেই। কারণ, কলম্বিয়া সরকার ম্যানুয়েলার বাবাকে ধরার জন্য সারা দেশে নাকাবন্দি শুরু করেছিল। কলম্বিয়ার কমান্ডোর দলখ্যাপা হায়নার মতো ম্যানুয়েলার বাবাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাঁরা আশ্রয় নিয়ে আছে গোপন আস্তানায়।সেখানে কয়েকশো প্যাকিং বাক্সে কোটি কোটি ডলারের নোটগুদামজাত হয়ে পড়ে আছে। সেগুলি খরচ করার উপায় ছিল না একই কারণে। ফাঁকা ফায়ারপ্লেসের দিকে তাকিয়ে তাই ম্যানুয়েলার বাবা অসহায় অবস্থায় বসে আছেন। কিন্তু তিনি হটাৎ উঠে দাঁড়ালেন এবং তাঁর দেহরক্ষীদের ডেকে ফিসফিস করে কী যেন একটা বললেন।
দেহরক্ষীরা ঘর থেকে অন্য ঘরের দিকে চলে গেল। কয়েক মিনিট পর তারা ফিরে এল পাঁচটি প্যাকিং বাক্স নিয়ে। সেই পাঁচটি প্যাকিং বাক্স তারা ফায়ার প্লেসে উপুড় করে দিল। বেরিয়ে এল গাদা গাদা ডলারের বান্ডিল। তারপর সেই ডলারের বান্ডিলগুলিতে আগুন জ্বালানো হল। পুড়তে শুরু করল ডলার আর সেই আগুনে বাড়তে শুরু করল ঘরের ভিতরের উষ্ণতা। কমতে শুরু করলো ম্যানুয়েলার কাঁপুনি, বাবার কোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ম্যানুয়েলা। ম্যানুয়েলাকে কোলে করে সারা রাত বসেছিলেন ম্যানুয়েলার বাবা। এভাবেই যখন ফুরিয়ে আসছিল রাত, ততক্ষণে ফায়ার প্লেসে পুড়ে গেল কুড়ি লক্ষ ডলারের নোট। ওভাবেই পুড়তে পারে অত অত টাকা, সে আর বেশি কথা কী! কারণ ম্যানুয়েলার বাবা ছিলেন কলম্বিয়ার বিভীষিকা, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বিত্তবান মাফিয়া পাবলো এসকোবার।