পঞ্চম পর্ব
আহুজা লস্যির দোকান থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকলাম। এল হিন্দু কলেজ। তারপর একটা টোটোয় চেপে এই বাজার ওই বাজারের তস্য গলি দিয়ে স্বর্ণমন্দিরের পিছনের গেটে নামিয়ে দিল। হাঁটতে হাঁটতে মন্দিরের সামনের প্রাঙ্গনে চলে এলাম। সারি দিয়ে দোকানপাট। বোন একটা কড়াই কিনল। চলে এলাম জালিয়ানওয়ালাবাগের সামনে দিয়ে রণজিৎ সিংজীর স্ট্যাচুর সামনে একটা পাঞ্জাবী জুত্তির দোকানে। বোন একটা জুতো কিনল। হাতে বানানো পাকিস্তানী জুতো বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়। আমরা একটা অটো করে হোটেলে চলে এলাম।৮০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়া চায়, নিজেরা রিজার্ভ করলে।
আজ দুপুরে লাঞ্চ করলাম না। দু একটা আহুজার মিষ্টি খেলাম। পানজিরি আর পিন্নি। তারপর ঘুম। সাড়ে চারটের সময় উঠে পরলাম। কফি বানালাম। তারপর চলো স্বর্ণমন্দির। সন্ধ্যার আলোকোজ্জ্বল মন্দিরটা বোনকে দেখাব। দিনের আলো থাকতেই মন্দিরে ঢুকলাম। জলাশয়ে বড়ো সাইজের রঙিন মাছেরা ঘুরছে। প্রার্থনার গান বাজছে।আবার গেলাম মন্দির দর্শনে। এখন ভীড় অনেক কম। তবু প্রায় পঞ্চাশ মিনিট দাঁড়াতে হোলো। এদিকে বর্ষার আবহাওয়াতে আমার ব্লাডার ফুল হয়ে গেছে। কি আর করা যাবে। গানগুলির কথা গুরমুখী ও ইংরাজিতে ডিসপ্লে বোর্ডে দেখছিলাম। সেই জোলো বক্তব্য- হে ঈশ্বর, তুমিই আমাদের সৃষ্টি করেছ। তোমার কাছে যাওয়ার পথ বলে দাও! তোমার কৃপালাভ করলেই শান্তি আসবে। তুমি আমাদের অসুখগুলি জানো। নানক আমাদের তোমার কাছে নিয়ে যাবে। খুব হতাশ লাগে! পাঞ্জাবীদের মধ্যে কি শিক্ষিত লোকজন নেই? তারা কি বিজ্ঞান পড়ে না? তারা কি যুক্তি তর্ক করতে চায় না? এই চূড়ান্ত মূর্খতাকে এতগুলো মানুষ কিভাবে ধরে রাখছে?
মন্দিরের ভিতরে ঢুকে দেখি শয়ে শয়ে টাকা, বেদীতে চড়ানোর চাদর ইত্যাদি জমা পড়ছে। কি ভাবে মানুষের অন্ধবিশ্বাসকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে! তাদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে! ভগবানের মতো একটা কাল্পনিক চিন্তার আফিম খাইয়ে জনগণকে বুঁদ রাখা হচ্ছে। ফায়দা লুটছে সরকারসহ সব ধার্মিক প্রতিষ্ঠানগুলো।হালুয়া খেয়ে ছুটলাম টয়লেটে। তারপর শান্তিলাভ করে বোনকে নিয়ে আলোয় উদ্ভাসিত মন্দির চত্তরে হাঁটছি, ছবি তুলছি। একটু বসলাম। সাতটা নাগাদ পাঠ শুরু হোলো। সবাই সেই তালে তালে মন্ত্রে ধুঁয়া দিতে লাগল। ভক্তিতে সবাই আচ্ছন্ন, নেশাগ্রস্ত। যেন দুয়ারে পাবে শান্তি, নিরাপত্তা! মজার কথা এই যে এখানে পকেটমার ও ছিনতাইবাজদের থেকে সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে। হায়রে ঈশ্বর! তোমার ইচ্ছায় যদি ধর্ষণ হতে পারে, যুদ্ধ হতে পারে, করোনা হতে পারে তবে পকেটমারিই বা হবেনা কেন?
এখানকার লঙ্গরে গেলাম এই প্রথমবার। বিরাট আয়োজন। কোনও লাইন নেই। ঢোকার মুখেই পেলাম একটা করে থালা, জল খাওয়ার বাটি ও চামচ। তারপর একটা বিরাট হলে লম্বা আসনে বসে পরলাম। সাথে সাথেই থালায় পড়ল জিরা রাইস, তরকা, পায়েস। এল একটা রুটি, বাঁধাকপির সবজি। একটা ট্রলিতে এল জল। খাওয়া শেষে খালি পায়ে অনেকটা ঘুরে বাইরের নোংরা পথ হেঁটে পেলাম জুতো ঘরের সন্ধান। বৃষ্টি ভালোই পরছিল। কোনওমতে অটো করে বৃষ্টি মাথায় করেই হোটেলে ফিরলাম। গরম জলে সাবানসহ পা ধুয়ে শুতে গেলাম। অমৃতসর ভ্রমণ সমাপ্ত। কাল সকালে একটু এদিক ওদিক যাবো। তবে তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরব। বিকেল সাড়ে ছটায় অমৃতসর-হাওড়া মেল। নামব লক্ষ্ণৌ স্টেশনে। এই হোটেল মাঝাতেই তিন রাত থেকে গেলাম। সাড়ে সাতশ টাকা প্রতিদিন। তবে কাল সাড়ে পাঁচটায় হোটেল ছাড়ব বলে অতিরিক্ত সাড়ে ছ’শ টাকা দিতে হবে।
চলবে…