কলকাতা ব্যুরো: ৭ আগষ্ট ১৮৭১ থেকে ২০২০। আর ঠিক এক বছর। তারপর ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী পালন হবে আবন ঠাকুরের। কিন্তু তারপর? খীরের পুতুল, রাজকাহিনী র স্রষ্টা আপামর বাঙালির মনে, বিশেষত শিশুদের কাছে সমান জনপ্রিয় থাকবে তো? হ্যারি পটার থেকে দ্যা ক্রনিকল অফ নারিনা জে ভাবে শিশু মনে জাকিয়ে বসেছে আর ছবি, লেখা দিয়ে তেল চুক চুকে, ঝা চক চকে সব বই তাদের হাতে এসে পড়ছে তাতে সন্দেহ টা থেকেই যাচ্ছে। এর ওপর ইন্টারনেট এর যা বাড়বাড়ন্ত, স্মার্ট ফোনের যা বাজার তাতে বাংলার শিশুসাহিত্যিকরা ম্লান হয়ে যেতে বসেছে এখনই। আর পঞ্চাশ বছর পর মানুষ অবন ঠাকুর , উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার রায় কে মনে রাখবে কিনা, তাদের সাহিত্য চর্চা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিচ্ছে।
পরের ভাবনা পরে। অতীত এ ফিরে দেখুন একটু। ঘন্টার পর ঘন্টা নালক, ক্ষীরের পুতুল অথবা রাজকাহিনী নিয়ে সময় কেটে যেত। ছোটো বয়স এ পড়ার বই না পরে ওই সব বই পড়া হত লুকিয়ে লুকিয়ে। সময় যে কি ভাবে কেটে যেত বোঝাই যেত না।শিলাদিত্য, বাপ্পাদিত্য, পদ্মিনী বা সুয়োরানি, দুও রানী আর বাঁদর নিয়ে অথবা শকুন্তলার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে মন চলে যেত রূপকথার দেশে। আপার, আনন্দময় এক জগৎ তৈরি হতো মনের মধ্যে। ইতিহাস আর পূরণের ঘুমন্ত পাতা থেকে জীবন্ত সব চরিত্র উঠে এসে জাদুর কাঠি তে কল্পনার রাজ্যে উরিয়ে নিয়ে যেত শিশু মনকে। ইতিহাস আর পূরণের পাথর প্রতিমায় প্রাণের স্পন্দন অনুভূত হত। অমন সুন্দর করে পুরাণ আর ইতিহাস গল্প করে বলার মধ্যে দিয়ে বাঙালির মননে আত্মমর্যাদা আর আত্মবলিদানের এক বিরল চরিত্র ও তৈরি করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ। পরে তার উত্তরসূরি পেতে অসুবিধা হয় নি। বাংলার সাহিত্য জগতে উঠে এসেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর আর সুকুমার রায়। রমযান আর মহাভারত অমন সুন্দর করে বলা উপেন্দ্রকিশোর ছাড়া সম্ভব হতো না। রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে সেই রামায়ণ আর মহাভারত এর কাহিনী পড়ে শিহরিত হয়ে উঠত বাঙালির শিশু মন।
শুধু কি আর লেখক ছিলেন অবন ঠাকুর । তার আঁকা ছবি দেখলে ও মুগ্ধ হতে হয়। ইংল্যান্ডের প্রিরাফেল্যায়িত চিত্রকলার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংস্কৃত কলেজ পড়ার সময় থেকেই তার ছবি আঁকা শুরু। কিন্তু পাশ্চাত্যের জড়বাদী চিত্রকলা তার পছন্দের ছিল না। পরবর্তী কালে ভারতীয় ঐতিহ্য অবলম্বন করে তার একের পর এক চিত্রকলা মানুষের কাছে প্রদর্শন করেন অবনীন্দ্রনাথ। তার ছবিতে মোঘল চিত্রশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। আরব্য রজনী নিয়ে তার আঁকা ছবিগুলি এর প্রমাণ।
কিন্তু প্রশ্ন এখন অন্য এই সাহিত্য ও চিত্রকলা বাঙালী আর কতদিন আগলে রাখতে পারবে। যদি না পারে তবে আমাদের ভবিষ্যৎ এক মহান ঐতিহ্য থেকে বঞ্চিত হবে।