স্পেনের মাথায় ইউরোপের মুকুট
লাল উচ্ছ্বাসে ভাসলো বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়াম। ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে এক যুগ পর ইউরোপের মুকুট ফিরে পেল স্পেন। ইংল্যান্ডের ৫৮ বছরের অপেক্ষা আরও বাড়লো। স্পেনের পক্ষে দুটি গোল করেন উলিয়ামস ও মিকেল ওইয়ারসাবাল আর ইংল্যান্ডের একমাত্র গোলটি কোল পালমারের। এই নিয়ে স্প্যানিশরা চতুর্থবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হল। ফুটবলে মহাদেশের সেরা হওয়ার এই কীর্তি নেই ইউরোপের আর কোনো দলেরই।
শুরুর দিকের খেলা চিল গতিহীন, ঢিমেতালের, কিন্তু সেই ফুটবল পাল্টে যায় বিরতির পর। এগিয়ে গিয়ে আক্রমণের ঝড় তোলে স্পেন। ওই ঝড়ের মাঝেই ইংল্যান্ডের আশা জাগিয়েছিলেন কোল পালমার। বদলি খেলোয়াড় হিসাবে নেমেই দুর্দান্ত গোলে সমতা নিয়ে আসেন। তবে এই স্পেন যে অন্য ধাঁচে গড়া, খেই না হারিয়ে, চাপ ধরে রেখে শেষ দিকে আরেকবার জালে বল জড়াল তারা। নিকো উইলিয়ামসের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ইংল্যান্ডের আশা জেগেছিল ঠিকই তবে শেষদিকে মিকেল ওইয়ারসাবাল স্পেনের হয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে দেন, আর তাতেই চোখের জলে বিদায় নিতে হয় ইংলিশদের।
এতদিন সর্বোচ্চ ইউরো জয়ের রেকর্ড ছিল যৌথভাবে স্পেন ও জার্মানির। গতিময় ও নান্দনিক ফুটবলের পসরা মেলে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেটা নিজের করে নিল স্প্যানিশরা।ইংলিশদের আরেকটি শিরোপা জয়ের অপেক্ষাও তাতে শেষ হল না। সেই ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকে আরেকটি ট্রফির অপেক্ষায় থাকা দলটি টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর রানার্সআপ হলো।
ইয়ামালের আরেকটি রেকর্ডগড়া রাত
সব মিলিয়ে এবারের ইউরোতে একটি গোল কিন্তু বার্লিনের ফাইনালের এক দিন আগে ১৭ পূর্ণ করা স্পেনের ‘বিস্ময়বালক’ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেন। রেকর্ড ভাঙা শুরু করেছেন আগেই। বার্লিনের ফাইনালের এক দিন আগে ১৭ পূর্ণ করেছেন স্পেনের ‘বিস্ময়বালক’। ২-১ গোলে জেতা ম্যাচে প্রথম গোলটিতে করেছেন অ্যাসিস্ট, হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ বা ইউরো—কোনো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এখন ইয়ামাল। টুর্নামেন্টের মাঝপথেই অবশ্য একবার পেলেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ইয়ামাল। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে বড় কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলার রেকর্ড হয়েছিল তাঁর। সে সময় ইয়ামালকে অভিনন্দনও জানিয়েছিল পেলে ফাউন্ডেশন। ১৯৫৮ সালে সুইডেনের বিপক্ষে ব্রাজিলের ফাইনাল জয়ের দিন পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন। সে ম্যাচে দুটি গোলও করেছিলেন পেলে।
সব মিলিয়ে এবারের ইউরোতে একটি গোল করার পাশাপাশি চারটি অ্যাসিস্ট করেছেন ইয়ামাল। ১৯৮০ সাল থেকে রাখা রেকর্ডে ইউরোর এক আসরে এর চেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট আর কারও নেই। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোর এক আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করা বা সহায়তার রেকর্ডও হয়ে গেছে তাঁর। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ইয়ামাল, ‘এটা একটা স্বপ্ন। স্পেনে ফিরে উদ্যাপন করতে তর সইছে না। এর চেয়ে ভালো জন্মদিনের উপহার আর পেতে পারতাম না। আমি এখন ফিরে পরিবারের সঙ্গে উদ্যাপন করতে চাই।’
কোপার ফাইনালে চোখের জলে মাঠ ছাড়লেন মেসি
এবারের কোপা আমেরিকার আসর মোটেও ভালো যায়নি লিওনেল মেসির। চোটের কারণে কোনো ম্যাচেই তাকে সেরা ছন্দে দেখা যায়নি। ফাইনালেও তার ব্যতিক্রম হলো না। এবার তো চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন এই তারকা ফুটবলার। আর মাঠ ছাড়ার পর সাইডবেঞ্চে বসেই তাকে কাঁদতে দেখা গেছে। মেসি ম্যাচের ৩৭ মিনিটেই মূলত ইনজুরিতে পড়েন মেসি। ওই সময় আক্রমণে যাওয়ার পরেই তাকে কড়া ট্যাকেল করেন কলম্বিয়ার রাইটব্যাক সান্তিয়াগো আরিয়াস। কড়া ট্যাকেলের পর সেখানেই গোড়ালি মচকায় লা পুলগার। এরপরেই ব্যাথানাশক দিয়ে সাময়িক চিকিৎসা চলে মেসির। খেলায়ও ফিরে আসেন খানিক পরেই।
প্রথমার্ধ শেষ করেন সতর্কভাবেই। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে আর নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না মেসি। খেললেন ৬৩ মিনিট পর্যন্ত। প্রেসিং করতে গিয়েই পড়ে যান মাঠে। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি মেসির। ম্যাচের ৬৬ মিনিটে বদলি করা হয় তাকে। বদলি হিসেবে নামেন নিকোলাস গঞ্জালেস। মাঠের চিকিৎসার পর আর্মব্যান্ড তুলে দেন আনহেল ডি মারিয়ার কাছে। ম্যাচে অবশ্য মেসিকে এমন কড়া ট্যাকেলের পরেও কোনো কার্ড দেখতে হয়নি আরিয়াসকে। ব্রাজিলিয়ান রেফারি রাফায়েল ক্লাউস বাজাননি ফাউলের বাঁশিও।