কলকাতা ব্যুরো: দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘন্টায় তিন লক্ষ ৪৭ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। মৃত্যু আড়াই হাজার। এই রাজ্য ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ১৪ হাজার পেরিয়েছে। অক্সিজেনের অভাব, হাসপাতালগুলোতে বেড নেই। ত্রাহি ত্রাহি রব অসুস্থ ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে। অথচ তার বিপরীত ছবি এখানে রাজনৈতিক দলগুলির। এখনও তাদের ভোটের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে সবপক্ষ। সেখানেও চলছে একে অপরকে দোষারোপ এর পালা আর টেক্কা দেওয়া। মালদায় মিঠুন চক্রবর্তী, শুভেন্দু অধিকারীর ভোট প্রচার দেখলে কে বলবে এ রাজ্যে এখনও মহামারীর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা রোগে। সেখানে রাজনীতিকদের এই প্রচারকে নির্লজ্জতার শেষ ধাপ বলেই মনে করছেন বহু নাগরিক।
কলকাতা হাইকোর্ট লাগাতার পিছনে লেগে থাকার পর শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন এরাজ্যে মিটিং মিছিল সভা বন্ধ করার কথা ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেখানেও রাখা হয়েছে ফাক। ৫০০ জনের মধ্যে লোক নিয়ে সভা করা যাবে, কমিশনের এই আইনি ফাঁক গলে রাজনৈতিক দলগুলি প্রচার করছে, এমনই অভিযোগ নাগরিকদের। কেন রাজনৈতিক দলগুলি এই বিপর্যয় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে এখনো ভোটে জেতার জন্য প্রচার চালাচ্ছে, আর মানুষের ভিড় বাড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, হেলদোল নেই নির্লজ্জ রাজনৈতিক দলগুলির। এমনটাই অভিসম্পাত দিচ্ছে নাগরিকদের একটা বড় অংশ।
এই প্রচারে পিছিয়ে নেই শাসকদল তৃণমূলও। তারাও তাদের মত করে কেউ প্রেস কনফারেন্স আদলে, আবার কেউ মাঠে নেমে চালাচ্ছেন প্রচার ফলে মানুষকে এই মহামারীর আবহে ভোটের ময়দানে রেখে দেওয়ার এক চরম নৃশংস খেলায় সব দল মেতেছে বলে অভিযোগ। এই অবস্থাতেই ২৬ ও ২৯ এপ্রিল কয়েক লক্ষ মানুষ বুথে বুথে ভিড় জমিয়ে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে গিয়ে, আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে পড়বেন কতজন, কে তার হিসেব রাখবে?
আর এইখানে উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমের নক্কারজনক ভূমিকার অভিযোগ। সংবাদমাধ্যম সব দলের এই প্রচার সংবাদমাধ্যমে না প্রচার করলে দলগুলি নিরুৎসাহ হয়ে কিছুটা পিছু হটত বলে নাগরিকদের একাংশের মত। কিন্তু তৃণমূল- বিজেপির আগ্রাসনে এ রাজ্যের মিডিয়াও এখন রাজনৈতিক দলের ধামাধরা হয়ে গিয়েছে। ফলে একপক্ষ যদি রাজনৈতিক দলগুলিকে ব্যান করে, তখন অন্যপক্ষ আরো বেশি করে তাদের প্রচার চালাতে পারে, এই আশঙ্কায় বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধতে এগোচ্ছে না কোন সংবাদমাধ্যম গোষ্ঠী। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের পাপের বোঝা সংবাদ মাধ্যমগুলি বাড়াচ্ছে বলে অভিশাপ দিচ্ছে নাগরিকরাও।