কলকাতা ব্যুরো: ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রকে চেপে ধরার সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। কেন্দ্রের এই প্রকল্পের সঙ্গে তৃণমূল যে একমত নয়, ইতিমধ্যেই তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিল্লিতে গিয়ে এ বিষয়ে সরব হবেন তৃণমূল সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, অগ্নিপথ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কী কী সমস্যা হতে পারে প্রথমে মন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা হবে। তারপরও কেন্দ্র অনড় থাকলে তীব্র বিরোধিতার পথে হাঁটবে তৃণমূল। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। ৮ জুলাই প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তিনি দলের অবস্থান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের কাছে স্পষ্ট করবেন বলে জানা গিয়েছে। প্রকল্প স্থগিত রাখার দাবিও জানানো হবে।
কেন্দ্রীয় সরকার ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘোষণামাত্রই উত্তপ্ত হয়েছে দেশ। প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল, কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। রাস্তায় নেমে আন্দোলন হয়েছে। বেশি প্রভাব পড়েছে যুবসমাজে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে হিংসা দাবানলের মতো ছড়িয়েছে। রেল-সহ সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আন্দোলনরত যুবকদের ক্ষোভ প্রশমিত করতে রাজ্য সরকারগুলিকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। এদিকে অগ্নিপথ প্রকল্প প্রত্যাহার করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট আবেদনটি শুনতে রাজি হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে শুনানি করবে। সেই কথাই জানিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে তারা এই নিয়োগ প্রকল্পটি প্রত্যাহার করবে না। অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পও শুরু হয়েছে এবং বিমান বাহিনীতে নিয়োগের জন্য ৫০ হাজার আবেদন গৃহীত হয়েছে।
অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা পিটিশনে বলা হয়েছে যে এই প্রকল্পটি বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। এই আবেদনটি অ্যাডভোকেট মনোহর লাল শর্মা দায়ের করেছেন এবং কেন্দ্রের এই বিজ্ঞপ্তি বাতিল করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছেন। পিআইএলে বলা হয়েছে যে বিচারের পক্ষে ১৪ জুন, ২০২২-এ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করা উচিত কারণ এটি অবৈধ এবং অসাংবিধানিক।
আবেদনে আরও আবেদন করা হয়েছে যে অগ্নিপথ প্রকল্পটি পরীক্ষা করে দেশের নিরাপত্তা এবং দেশের সেনাবাহিনীর উপর প্রভাব মূল্যায়নের জন্য সুপ্রিম কোর্টের একজন প্রাক্তন বিচারপতির সভাপতিত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হোক। তবে এই পিটিশনের শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট অগ্নিপথ নিয়োগ প্রকল্পে অবিলম্বে স্থগিতাদেশ দেয় কিনা তা দেখার বিষয়। যদি এই নিয়োগ প্রকল্প নিষিদ্ধ করা হয়, তবে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসাবে বিবেচিত হবে।
এরমধ্যেই অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। প্রকল্পে আবেদন করার আগে আবেদনকারীকে হিংসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না বলে মুচলেকা দিতে হবে বলে সেনার তরফে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ক্ষোভের আগুন এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ৮ জুলাই বৈঠক ডেকেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি। থাকবেন রাজনাথ সিং। বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে অবধারিতভাবে অগ্নিবীর প্রকল্পের প্রসঙ্গ আসবে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।