থরে থরে সাজানো নানা ধরণেরঅসংখ্য বই।বইয়ের তাকগুলি বিষয় অনুযায়ী আলাদা। পাঠকের যে বিষয়ের বইপ্রয়োজন কিংবা পছন্দ, সে তাক থেকে সেই বইটি নিজেই বের করে নিতে পারে। তারপর শুরু করে দিতে পারে পড়া। কেউএসে কোনও প্রশ্ন করবে না। এখানে বই দেখা বই বাছাই এবং বসে পড়ায় কোনও বাঁধা নেই। কিন্তু মানা করার নেই। কিন্তু এটা বইয়ের দোকান। কেউ এসে বই কেনার কথাও বলবে না।
আমেরিকায় সবচাইতে জনপ্রিয় বইয়ের দোকান এটি। নিউইয়র্কের কুপার ইউনিয়ন বিল্ডিং থেকে ১৮৮৬ সালে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তারপর এটি ছড়িয়ে পরে পুরো আমেরিকা শহরে। বছর দুই-তিন আগেও ‘বার্নস অ্যান্ড নোবেল’-এর তত্ত্বাবধানে ৬৩৮টি দোকান পরিচালিত হত।
সারা বিশ্বে এমন উদ্যোগ আরেকটি খুঁজে পাও্যা যাবে না। বার্নস অ্যান্ড নোবেলের চেষ্টা কিন্তু কীভাবে কত বই বিক্রি করা যায় তা নয়। বরং কীভাবে বই পড়ার প্রতি মানুষের আরও বেশি আগ্রহ বাড়ানো যায়। আর সেই আগ্রহের প্রতি লক্ষ্য রেখেই শুরু এবং সেভাবেই দোকানটি এগিয়ে চলেছে।
থরে থরে সাজানো বিভিন্ন স্বাদের বই। বিষয়ের ভিত্তিতে বইয়ের তাকগুলিও আলাদা। যার যে বিষয় পছন্দ, সে তার পছন্দসই বই তাকথেকেতুলেনিয়ে পড়াশুরু করে। কেউ এসে বই কেনার কথা বলবে না। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই ঘটনা!তার মানে এই নয় যে সংস্থাটি ব্যবসার বিষয়ে উদাসীন। মনে রাখতে হবেএ ধরণের মনোভাব আসলে সুনির্দিষ্ট এবং প্রশংসনীয় ব্যবসায়িক কারনেই।
সব পাঠকই কি এখানে বসে সারাদিন ধরে বসে বই পড়ে আর না কিনে চলে যায়? না তা কিন্তু মোটেও নয়। যার বইয়ের কয়েক পৃষ্ঠা পড়ে ভাল লাগে, মনে হয় সংগ্রহ করা দরকার,সে বইটি কিনে নেন। আর কেউ যদি বার্নস এন্ড নোবেলে বসে পুরো বইটি পড়তে চান, তার জন্যও কোনো নিষেধ নেই।
কিন্তু শুধু মুখে বসে বসে তো আর বই পড়া যায় না। সঙ্গে এক কাপ কফি হলে বেশ হয়। আছে স্টার বাকসের সুস্বাদু কফি। অর্থাৎ ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনাটা কিন্তু আছে। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে আড্ডাও গড়ে ওঠে।
‘বি অ্যান্ড এন’ নামে বিশ্বখ্যাত দোকানের একটি ওয়েবসাইট আছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ওয়েবসাইট থেকে বিক্রি হয় প্রচুর বই। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন স্বাদের বই।
ছোটদের জন্যও আছে আলাদা বিভাগ, যেখানে বই, খাতা, কলম, কার্টুন, খেলনা রাখা আছে। আছে নানা ধরনের পুতুল,সেগুলো নিয়ে ছোটরামেতে থাকে আর তার মা-বাবা দিব্বি পছন্দের বইটি নিয়ে পড়া শুরু করে দেয়।
বার্নস এন্ড নোবেলে প্রায়ই বিখ্যাত কবি-সাহিত্যকদের বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। এতে পাঠকদের সঙ্গে লেখকের সরাসরি ভাবের আদান প্রদান ঘটে। লেখকরা পাঠকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, তাদের বইতে স্বাক্ষর করেন, অনেক লেখক তাদের লেখা পাঠকদের পড়ে শোনান- সব মিলিয়ে লেখক আর পাঠকের মধ্যে সেতু গড়ে ওঠে। অনেক সময় লেখার কর্মশালা হয়। তখন খ্যাত-অখ্যাত সব ধরনের লেখকদের আমন্ত্রণ করা হয়।এর আবেগ ও দাবি যেন চিরন্তন।