ভূতুড়ে বাড়ি বললেই আমাদের মনে একটা ছবি ভেসে ওঠে যার সঙ্গে অতীত দিনের রহস্য বলুন রহস্য, গালগল্প বলুন গালগল্প সব মিলেমিশে একাকার। এরকমই একটি বাড়ির খবর বাঙ্গালোরেও আছে বলেই খবর। তেরা ভেরা নামে এই পুরনো বাড়িটির গল্প নিয়েই এবারকার প্রতিবেদন।

সে গত শতকের কথা। এই বাঙ্গালোরেই থাকতেন এক রীতিমতন রইস অ্যাংলো ইন্ডিয়ান আইনজীবী। নাম এজ ভাজ। এখানে একটা হোটেলও নাকি ছিল ভদ্রলোকের। শোনা যায় এলাকায় ভাজের হোটেলের পশ হিসেবে দেদার নামডাক ছিল। স্যান্ডুইচ, ইংলিশ-টি আর কেক নিয়ে ওই হোটেলে বসা মানে আপনার কোমরে জোর আছে! ভেরা আর দোলচে নামে আদরের দুই মেয়ে নিয়ে রীতিমতন সুখের সংসার ছিল ভদ্রলোকের। মেয়েদের জন্যে মুখ থেকে কথা খসানোর সঙ্গে সঙ্গে এক কথায় আকাশকুসুম অব্দি এনে দিতে রাজি ভদ্রলোক কী দেয়া যায়, কী দেয়া যায় ভাবতে ভাবতে শেষমেশ ঠিক করলেন মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের চেয়ে এই দুনিয়ায় আর কী-ই বা থাকতে পারে! ফলে পেল্লায় একটা বাড়িই না হয় দেওয়া যাক। যা ভাবা সেই কাজ!

বাড়ি তো হল। দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বাড়ি তো নয় ছোটখাটো একটা রাজপ্রাসাদ বললেও কমই বলা হয় নেহাত। হাজার দশেক স্কোয়ার ফুটের বাড়ি, চাট্টিখানি কথা! বাঙ্গালোরে সেন্ট মার্ক’স রোডের ওপর অমন একটা বিশাল যাকে বলে চকমেলানো বাড়ি, দেখে সেকালেও লোকের চোখ ট্যারা হবার যোগাড়! যাই হোক, দিন যায় দিন যায়। এজ ভাজ মারা গেলেন। দুই মেয়ের হাতে বাড়ি। বাড়ির গায়ে পড়েছে সময়ের প্রলেপ। কিন্তু দেখলে চোখ ফিরবে না সমঝদারের।


দোলচে মানে ছোটো মেয়ে পিয়ানো শেখাতেন। ২০০২। দোলচের বয়েস তখন ৭৫। দোলচেকে কে বা কারা ছুরি মেরে ফেলে রেখে গেল। আশি বছরের ভেরা দেখেশুনে মানে মানে ডেরাডান্ডা গুটিয়ে হাওয়া। কুলোকে অবিশ্যি বলে, ভেরার সামনেই নাকি দোলচের পেটে ছুরি বসিয়েছিল আততায়ী। আরেক বোন জো প্রেসটন বিয়ে-থা করে বাড়ি ছেড়েছিল আরো আগে। বাসা নিয়েছিল গিয়ে অ্যালবার্ট স্ট্রিটে। বাড়িতে লোক থাকে না। সত্যিমিথ্যে জানি না, কিন্তু সবাই বলে দোলচেকে কবর দেওয়াও নাকি হয়েছিল ওখানেই। আর তারপর থেকে রাত হলেই, বিশেষ করে ঝড়-বাদলের রাত হলে তো কথাই নেই, কেউ নাকি ও বাড়ির পিয়ানোয় ঝড় তুলত! বসত নাচের আসর। হুল্লোড় জমে উঠত হইহই করে।
তারপর ২০১৪। ভাঙা হল বাড়ি। একটা দামি ভিন্টেজ কার ছিল। সেখানা বেচে দেওয়া হল। বেচে দেওয়া হল দামি আসবাবপত্তরও। বিশ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে গেল জমি। কিন্তু হলে হবে কী, এলাকার মানুষের রেহাই নেই। রাত-বিরেতে চেঁচামেচি তো হয়ই, সঙ্গে বাজনার আসরও নাকি বসে। আজও। এখনও।