গত সংখ্যার পর
আর সহ্য নয়! এবার সরাসরি সম্মুখ সমরে। হেমচন্দ্র গেলেন প্যারিসে। উদ্দেশ্য বোমা, বারুদ ও বিষ্ফোরণ প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ নেওয়া। ক্ষুদিরামকে মেদিনীপুর থেকে আনা হলো ৩২ নং মুরারীপুকুর বাগান বাড়িতে। আগুন পাখি বারীণ জ্বালাময়ী চিঠি লিখলেন প্রিয় দাদা অরবিন্দকে। কুখ্যাত কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ড চরম অত্যাচার শুরু করে দিল। বাঙলায় বিপ্লববাদের মুখপত্র সন্ধ্যা, নবশক্তি, যুগান্তর, বন্দেমাতরম পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকদের সম্পূর্ণ অন্যায় বিচারে সাজা, ধরপাকড় শুরু করেছিল এই কাজি। তাকে বিপ্লবীরা কসাই কাজি বলেই ডাকতেন।
এখানে বলে রাখা ভালো ইংরেজ বিচারশালায় লঘু পাপে দোষী সাব্যস্ত কিম্বা অপরাধী ঘোষণা করে বিচারের নামে অমানুষিক নির্যাতন ও হত্যালীলা চালিয়ে যেত। তেমনি বিপ্লবীদের গোপন ডেরায় বিচার সভা বসতো। সেখানেও নেওয়া হতো মৃত্যুদন্ডের মতো সাজা। যেমন ভাবে অন্তত তিনজনের মৃত্যু দন্ড ঘোষিত হয়। মন্ত্রগুপ্তি, গীতাপাঠ, মাতৃ আরাধনা ও শারীরিক কসরৎ, ব্যায়াম, কুস্তির আখড়ায় প্রশিক্ষণ নিতে হতো বাধ্যতামূলকভাবে। এই ভাবেই অরবিন্দ ও বারীণদের কয়েকশো বিঘার পৈতৃক বাগানবাড়িতে বারীণ অন্যতম উদ্যোগী হয়ে গড়ে তুলেছিলেন বিপ্লবীদের গোপন ডেরা। অরবিন্দ চেয়েছিলেন তাঁর ও সমস্ত বিপ্লবীদের জন্য ভবানী মন্দির গড়ে তুলতে। সেই সব গোড়ার কথা বলার আগে অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, বন্দেমাতরম সহ অন্যান্য বিপ্লববাদী দল ও পত্রপত্রিকা, গোপন ইশতেহার, লিফলেট, পোস্টার মজুদের কথা বলে নেওয়া জরুরি। বিপ্লবী আখড়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুদ্ধ, সমর কৌশল, অস্ত্রশ্ত্র ও সমকালীন পঠনপাঠন ছিল নিত্যদিনের কাজ। কিভাবে শুরু হল এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ?
দুই ভাই লন্ডনের উচ্চশিক্ষা হেলায় সরিয়ে চলে এলেন মাতৃভূমি উদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে। সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে ১৯০৫-এর বঙ্গ বিভাজন রুখতে অগ্নি মন্ত্রে দীক্ষা নিলেন। বিলাস বৈভব ছুঁড়ে ফেলে নিরাসক্ত জীবন বেছে নিলেন মায়ের টানে। অন্য ভাই শুরু করলেন সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি। দুজনেই বেছে নিলেন চরমপন্থার বিপ্লববাদ। একজন চলে গেলেন বরোদার গাইকোয়াড় মহারাজের এস্টেটে। অন্যজন কলকাতার মাটিতে শুরু করলেন- “মন্ত্রের সাধন নয়তো শরীর পাতন”। মুরারীপুকুরের বোমার মাঠে সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল মৃত্যু দন্ডাদেশ। অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড, পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট এবং ছোটলাট এন্ড্রুফ্রেজার সহ বেশ কয়েকজন প্রশাসক, বিচারক টার্গেট হয়ে গেল তাঁদের কাছে। আর এই কাজে বরোদা থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিলেন সেজ দাদা অরবিন্দ। তিনি সদম্ভে ও সগর্বে ছোট ভাই বারীণকে লিখলেন- “এই আমাদের সুযোগ”। ছোট ভাই লিখলেন- “প্রিয় দাদা, সকলকে আমাদের সম্মেলনে যোগদানের জন্য বলিবেন কারণ এখনই উপযুক্ত সময়। ইতিমধ্যে ভারতের সর্বত্র আমাদের মিঠাইয়ের যোগাড় করে রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় কাজে লাগে। আপনার পত্রের অপেক্ষায় রহিলাম।
আপনার স্নেহধন্য
বারীন্দ্রকুমার ঘোষ”
(চলবে)