খেলার দুনিয়ায় বলা হয়ে থাকে যে টেস্ট ক্রিকেট ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টায়। বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির পার্থ টেস্ট ম্যাচ সেই কথার সত্যতা কতখানি তার এক উদাহরণ।অজিদের বিপক্ষে পার্থ টেস্ট জয়ে ৪৬ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে ভারতের সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জয়ের কীর্তি এটাই। এর আগে ১৯৭৮ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারত ২২২ রানে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে ঐতিহাসিক জয় পেল ভারত। ভারতই প্রথম দল যারা পার্থ স্ট্রেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে। ২৯৫ রানে প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বুমরাহ বাহিনী।
রের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারের পর ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। প্রশ্ন উঠেছিল নয়া কোচ গৌতম গম্ভীরের ভূমিকা নিয়েও। রোহিত-বিরাটদের লাগাতার ব্যর্থতা নিয়েও সমর্থকরা ক্ষোভ উগরে দিয়েছিল। পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সমালোচকদের যোগ্য জবাব দিল ভারত।পার্থে অস্ট্রেলিয়াকে কোনও দলই হারাতে পারেনি। অজিদের শক্ত ঘাঁটিতে ভারতীয়দের দাপট দেখে উচ্ছ্বসিত ভারতীয় সমর্থকরা। এই টেস্টে ওপেনিং পার্টনারশিপ রান থেকে শুরু করে বিরাটের সেঞ্চুরি, একাধিক রেকর্ড গড়েছে ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেঞ্চুরির নিরিখে শচীন তেন্ডুলকরকে টপকে গিয়েছেন বিরাট কোহলি। শচীন করেছিলেন ৬টি সেঞ্চুরি। সেখানে বিরাট সাতটি সেঞ্চুরি করলেন।
প্রথম ইনিংসে ১৫০ রানে অল আউট হওয়ার পর দুরন্ত কামব্যাক করে ভারত। বুমরাহ, সিরাজদের দাপটে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১০৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে যশস্বী-রাহুলের রেকর্ড ব্রেকিং ইনিংস লড়াইয়ে ফেরায় ভারতকে। হাফসেঞ্চুরি করেন রাহুল। সেঞ্চুরি করার সুযোগ থাকলেও ৭৭ রানে আউট হন তিনি। যশস্বী ১৬১ রানের ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। ভারতের হাল ধরেন বিরাট কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সপ্তম সেঞ্চুরি করেন তিনি।দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় বোলিং লাইন আপের সামনে মুখ থুবড়ে পরে অজিদের ব্যাটিং লাইন আপ। পার্থ টেস্ট দুই ইনিংস মিলিয়ে জসপ্রীত বুমরাহ নেন ৮ উইকেট। মহম্মদ সিরাজ নেন ৫ উইকেট, ওয়াশিংটন সুন্দর নেন ১ উইকেট। অভিষেক হওয়া হর্ষিত রানা নেন ৪ উইকেট এবং নীতিশ রেড্ডির ঝুলিতে যায় ১টি উইকেট। ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হয়েছেন অধিনায়ক বুমরাহ।
অস্ট্রলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৬ ডিসেম্বর থেকে। এই টেস্ট ম্যাচটি খেলা হবে গোলাপি বলে। অর্থাৎ দিবারাত্রি ম্যাচ হবে। তৃতীয় টেস্ট শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বর, চতুর্থ টেস্ট ২৬ ডিসেম্বর এবং পঞ্চম তথা সিরিজের শেষ টেস্ট শুরু হবে ৩ জানুয়ারি থেকে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৯৮৬ সালে সুনীল গাভাসকর ও শ্রীকান্তের ওপেনিং জুটির গড়া সর্বাধিক রানের রেকর্ড ভাঙলেন কে এল রাহুল এবং যশস্বী জওসোয়াল জুটি। ২০১ রানে থামলো ওপেনিং জুটি। পাশাপাশি এক মরসুমে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক ছয়ের মালিক হলেন যশস্বী। প্রথম ইনিংসে ভারত ১৫০ রানই তুলতে পেরেছিল। জবাবে অস্ট্রেলিয়া অবশ্য ১০৪ রান অল আউট হয়ে যায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং-র ব্যর্থতা মুছে দিলেন যশস্বী এবং রাহুল। একের পর এক রেকর্ড ভাঙতে থাকেন তাঁরা। ২০০৩ সালে আকাশ চোপড়া ও বীরেন্দ্র সেহওয়াগের ১৪৫ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের রেকর্ড ভাঙেন যশস্বী-রাহুল। এরপর ১৯৮১ সালে গাভাসকর-চেতন চৌহানের ১৬৫ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড টপকান রাহুল-যশস্বী।
তৃতীয় দিনের শুরুতেই ১৯৮১ সালে গাভাসকর-শ্রীকান্তের করা ১৯১ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড ভেঙে দেন বর্তমানের দুই তারকা ব্যাটার। ২০১ রানে শেষ হয় এই ওপেনিং জুটি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় ওপেনিং জুটি হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ রান। মিচেল স্টার্কের বলে আউট হয়ে ৭৭ রানে ফিরতে হয় রাহুলকে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যশস্বীর এটা প্রথম টেস্ট। তৃতীয় দিনে এক মরসুমে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বাধিক ছয় মেরে পুরুষদের টেস্টে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন যশস্বী। এখনও পর্যন্ত তিনি ৩৪টি ৬ মেরেছেন। ২০১৪ সালে ব্রেন্ডন ম্যাকুলামের গড়া ৩৩টি ছয়ের রেকর্ড ভাঙলেন তিনি এক মরসুমে (২০২২) টেস্টে ২৬টি ছয় মেরে তৃতীয় স্থানে বেন স্টোকস। ২০০৫ সালে ২২টি ছয় মেরেছিলেন অজি তারকা অ্যাডম গিলক্রিস্ট এবং ২০০৮ সালে বীরেন্দ্র সেহওয়াগও মেরেছিলেন ২২টি ছয়।