মাত্র ৩৬ বছরের টুকরো জীবনে খবরের শিরোনাম হয়েছেন বারবার। অন্তত ৩ বার বিয়ে করেছেন। প্রেমিক? ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা থেকে জন এফ কেনেডি। সেই মেরিলিন মনরোই নাকি ছিলেন সমকামী? অকশনমাইস্টাফ ডটকম নিলামে তুলেছিল মেরিলিনের একটি জিন্সের প্যান্ট। ওই প্যান্টটি নাকি মেরিলিন ভালবেসে উপহার দিয়েছিলেন তার প্রিয়তম বন্ধু নাতাশা লাইটস, মেরিলিনের অভিনয়ের শিক্ষককে।১৯৪৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পযর্ন্ত একসঙ্গে বসবাস করেন তারা। মেরিলিন মনরো বন্ধু অভিনেতা টেড জর্ডানকে মেরিলিন বলেছিলেন, নাতাশার সঙ্গে তার যৌন সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেছিলেন, মানুষ তার সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক তৈরি করে যাকে সে পছন্দ করে। নাতাশা লাইটেসের সঙ্গে মেরিলিনের পরিচয় যখন তাঁর বয়স কুড়ি। হলিউডে তখনও নিজের পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজে পাননি তিনি।
নাতাশার কথা অনুযায়ী, মেরিলিন নিজে যৌনতাকে ঘৃণা করতো। কেউ যখন তাকে আবেদনময়ী বলত সে বিরক্ত হত। নাতাশা আরও জানান, বাড়িতে মেরিলিন সারাক্ষণ নগ্ন থাকত। যতক্ষণ সে বাড়িতে থাকত তাঁর শরীরে একটা সুতোও থাকত না। লুইস ব্যানারের লেখা ‘মেরিলিন: দ্য প্যাশন অ্যান্ড দ্য প্যারাডক্স’-এ লেখা আছে, ‘মিস লাইটেস আমাকে মুক্ত করেছেন। তিনি আমার জীবনকে ভারসাম্য দান করেছেন। আজ আমি যা, তার সবকিছুর জন্যই তার কাছে পুরোপুরি কৃতজ্ঞ’। লুইস ব্যানার বইটিতে মেরিলিন আর নাতাশার সম্পর্ককে বর্ণনা করেছেন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে। আনুষ্ঠানিকভাবে মেরিলিন বিয়ে করেছেন তিনবার। প্রথম স্বামী জেমস ডাওয়েট্রি, দ্বিতীয় স্বামী আর্থার মিলার আর তৃতীয় স্বামী জো ডিম্যাজিও।
এছাড়াও, তখনকার পর্দা কাঁপানো দুই অভিনেতা মার্লোন ব্র্যান্ডো আর ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গোপন ছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ও তাঁর ভাই ববি কেনেডির সঙ্গেও তাঁর প্রেমের সম্পর্কও ঝড় তুলেছিল হলিউড জুড়ে। মেরিলিনের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল সহ-অভিনেত্রী জোয়্যান ক্রফোর্ড, মার্লিন ডিয়াট্রিচ এবং বারবারা স্ট্যানউইকের সঙ্গে। ‘মেরিলিন মনরো: মাই লিটল সিক্রেট’-এ টনি জেরিস লিখেছেন, জেন লরেন্স নামে এক মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মনরো। জেন তখন ১২ বছরের কিশোরী। মনরো তাঁর থেকে বয়সে ১৪ বছরের বড়। একই অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছিলেন মনরো আর জেন। দু’জনের শৈশবের গল্পে মিল ছিল অনেকটাই। কেউই জানতেন না তাঁদের বাবার পরিচয়। দু’জনের ঘনিষ্ঠতা ক্রমশই বাড়তে থাকে। মনরো নাকি জেনকে ‘মাই লিট্ল সিক্রেট’ বলে ডাকতেন। টনি জেরিস নিজের বইয়ে সেই নামটিই ব্যবহার করেছেন। টনির দাবি, মনরোর সঙ্গে কাটানো কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বিবরণও জেন তাঁকে জানিয়েছেন।কেবলমাত্র জেন একা নন। মনরোর সঙ্গে জড়িয়েছিল অভিনেত্রী জোন ক্রফোর্ড, বারবারা স্ট্যানউইক, মারলিন ডিয়েট্রিশ, এমনকী এলিজাবেথ টেলরও। মেরিলিনের মৃত্যুর দু’বছর পরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নাতাশা। কিন্তু ঘনিষ্ঠতার দিনগুলোয় শুটিংয়ের সময়েও অভিনয় শিক্ষিকাকে কাছছাড়া করতে চাইতেন না মনরো। সেটের মধ্যেও ওর সঙ্গে থাকতে হত। ওর হাত ধরে। মনরো নিজেই পরিচালককে বলতেন, আমার আরও একটু কাছে কি ও থাকতে পারে? পরিচালক বলতেন, হ্যাঁ কিন্তু উনিও যে ফ্রেমে চলে আসছেন! কিন্তু নাতাশার দাবি, যে সব শটে মনরোর মাথা বা কাঁধ দেখা যেত, সে সব সময়ে তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রাখতেন মার্কিন অভিনেত্রী। বলতেন, এই ভাবেই সাহস পাই।
আজকের মূল্যে যাঁর ছবি দুই বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছিল। সেই মেরিলিন মনরোর গগনচুম্বী গ্ল্যামারের আড়ালে লুকিয়েছিল একটি ভাঙা মন। মানসিক ভারসাম্যহীন মায়ের গর্ভে পিতৃপরিচয়হীন জন্ম নিয়েছিলেন মেরিলিন।ছেলেবেলা কাটিয়েছিলেন স্নেহ মমতা ছাড়াই। বিখ্যাত হওয়ার পরও তাঁর দেহকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করেছিল আমেরিকার রুপোলি ও রাজনৈতিক জগত। হাজার হাজার কিলোওয়াটের আলোর সামনে থেকেও একাকীত্ব কুরে কুরে খেত মেরিলিনকে। বিরাট সাফল্য, প্রচুর অর্থের পাশাপাশি তাঁকে ঘিরে উড়ত হলিউডের মৌমাছিরা। আবেগের বসে একটার পর একটা সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন মেরিলিন- জেমস ডগার্থি, জো ডিমাজ্জিও এবং আর্থার মিলার প্রমুখের সঙ্গে। তাঁর খ্যাতি আর অর্থকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন, আপন করেননি কেউই। একবার সন্তানসম্ভবা হলেও শারীরিক জটিলতার কারণে তিনি মা হতে পারেননি। একাকীত্ব আর হতাশায় ঘুম আসত না বলে সঙ্গী করেছিলেন ঘুমের ওষুধ আর মদ।
অনেকেই বিশ্বাস করতেন মেরিলিনকে হত্যা করা হয়েছে এবং সরকারি পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি ছিল অসত্য। মনে করা হয়েছিল তিনি প্রচুর ঘুমের পিল খেয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর পাকস্থলীতে একটিও পিল পাওয়া যায়নি। মেরিলিনের নিম্নাঙ্গে কিছু রহস্যময় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ ছিল না। জুনিয়র মেডিকেল এক্সামিনার টমাস নোগুচি, যিনি নিজে মেরিলিনের পোস্টমর্টেম করেছিলেন, তিনিই মেরিলিন মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ফের তিনি মৃত্যুর তদন্তের কথা জানিয়েছিলেন। ডেপুটি করোনার মেরিলিন মনরোর ডেথ সার্টিফিকেটে সই করেছিলেন, তিনিও পরবর্তীকালে বলেছিলেন, তাঁকে সই করতে বাধ্য করা হয়েছিল। কারা বাধ্য করেছিল, সে প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। মানুষের মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল, আমেরিকার মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, দূর্ঘটনা নয়, আত্মহত্যা নয়, মেরিলিন মনরো খুন হয়েছিলেন।
মৃত্যুর ঘন্টা খানেক আগেও নাকি প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি ও তাঁর ভাই রবার্ট কেনেডির সঙ্গে মেরিলিন মনরোর কথা কাটাকাটি হয়েছিল। কল রেকর্ড থেকে জানা যায়, মেরিলিন মনরো জীবনের শেষ ফোনটি করেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডিকেই। তাঁদের সম্পর্ক জনসমক্ষে আনার হুমকি দিয়েছিলেন মরিয়া ও বেপরোয়া মনরো। খুনের তত্ত্বে যাঁরা বিশ্বাস করতেন, তাঁরা বলেছিলেন, কেনেডি ভাইরা সরিয়ে দিয়েছিলেন মেরিলিন মনরোকে। মেরিলিনকে খুন করা হয়েছিল ‘বার্বিচুরেট নেম্বুটাল’ ইনজেকশন দিয়ে।