কলকাতা ব্যুরো: সুড়ঙ্গের ১০ ছিদ্র বন্ধ করা গেলেও বাকি একটি নিয়েই বেজায় বিপাকে পড়েছিল মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার পর সেই ছিদ্রটি বন্ধ করতে সক্ষম হলেন KMRCL-এর কর্মীরা। বর্তমানে আর কোথাও থেকে জল বেরচ্ছে না বলেই খবর। তবে অন্য আর কোথাও কোনও ছিদ্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বউবাজারে মেট্রোর টানেলের তলায় জয়েন্ট বক্স বসানোর জন্য ২৯ মিটারের কংক্রিটের স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে আগেই। বাকি ছিল ৯ মিটারের কাজ। সেই বাকি অংশের কাজ করার সময় দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে জল বেরতে শুরু করে। ১১ টি জায়গা থেকে জল বেরনোয় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয় দুর্গা পিতুরি লেনের। বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল ধরে যায়। ২০১৯ সালের স্মৃতি মনে করে তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। আটকে দেওয়া হয় ওই এলাকা। দ্রুত বন্ধ করা হয় ১০ টি ছিদ্র। কিন্তু একটি ছিদ্র বন্ধ করতে পারছিলেন না KMRCL-এর কর্মীরা। আর সেখান থেকেই অনবরত জল বেরচ্ছিল। অবশেষে সেই ছিদ্রটি বন্ধ করতে সক্ষম হলেন মেট্রো কর্মীরা।
এদিকে, ফের ফাটলের ঘটনায় আবারও ধাক্কা খেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। আগামী বছরের জানুয়ারিতে এই মেট্রো প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। শেষ কেন্দ্রীয় বাজেট অনুযায়ী, ১১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যা আগের বছরের তুলনায় ২০০ কোটি টাকা বেশি। তবে কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের ম্যানেজিং ডিরেক্টর চন্দ্রনাথ ঝাঁ জানান, বিপত্তি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মেট্রো প্রকল্পের কাজ প্রায় ৭-৮ মাস পিছিয়ে গেল।
তবে এমন বিপর্যয়ের পর মেট্রোর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। শুক্রবার কেএমআরসিএলকে নিয়ে পুরভবনে বৈঠকে বসেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুরসভার, KMRCL এবং CESC-এর আধিকারিকরা। KMRCL-এর বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশ করেন ফিরহাদ হাকিম। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দোষ স্বীকার করুক KMRCL, দাবি কলকাতার মেয়রের। কী কারণে ফের বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়িগুলিতে ফাটল ধরল, তা খতিয়ে দেখতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া কলকাতা পুরসভাও সমীক্ষা করবে। KMRCL-এর একটি পৃথক রিপোর্ট পুরসভায় জমা দেওয়ার কথা। বৈঠক শেষে ফিরহাদ হাকিম বলেন, কোন বাড়ি ভাঙতে হবে, কোন বাড়ি সংস্কার হবে তা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা রিপোর্ট দিলে জানতে পারব। কিছু বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। তবে ৮-৯টি বাড়ি থাকার উপযুক্ত। ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু মানুষ জোর করে ওখানে থেকে গিয়েছেন। এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার হাল খারাপ। মেট্রোর কাজ এখনও চলছে। সেক্ষেত্রে স্থানীয়দের রুজিরুটিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা KMRCL-কে খতিয়ে দেখার নির্দেশ মেয়রের। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন মেয়র।
স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে বলেন, মেট্রোর কাজে এখানে অধিকাংশ বাড়ির অবস্থা খারাপ। তার উপর বারবার একই ঘটনা ঘটছে। মেট্রো চালু হলে ফের বাড়িগুলির ক্ষতি হতে পারে। তাই একটা উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা দরকার। যদিও পুরসভা আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি রাখা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। মেয়র বলেন, এখানে বাড়িগুলি পুরনো। ইটের ভিত দিয়ে তৈরি। পাইলিং নেই। মাটি সরে গেলে এই বাড়িগুলি বসে যায়। এইসব বাড়ি আদৌ রাখা সম্ভব কি না, তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।