পর্ব-১
এ রানী কেমন রানী,
রাজা যার ঘুরে বেড়ায় মাঠে ঘাটে, যারা সব ক্ষেতে মাঠে কাস্তে হাতে ধান কাটে, মাঝিরা নৌকা বেয়ে পার হয়ে যায় তটে, ভাটে।
রাজা তাদের সুরের জাদু কুড়িয়ে আনে,
রানী তার কথা বোনে,
রাজা তাতে সুরের মায়া মাখিয়ে রাখে।
এ রানী পরে না তো গয়না চুড়ি,
এ রানীর মনের ভিতর শব্দ সুরের
বাহাদুরি,
এ রানী রামধনু রাগ সুরের তালে,
হৃদয়ে সুর বাহারের তুফান তোলে,
সারাদিন দিলদরিয়া গানের ঘরে,
পঞ্চমে এক গানের শিশু খেলা করে,
ঘর নয় এ, যেন এক সুরেরই হাট,
রাজা আর রানীর আর রাজপুত্রের সরগমেরই রাজ্যপাট।
রাজা আর রাজপুত্তর, তেনাদের তো নামে ডাকে সবাই চেনে,
তবে, রানীমার ঝুলিতে পুরস্কারের এমন তরো আকাল ক্যানে,
বলতে পারো এমন তরো আকাল ক্যানে।
নভি মুম্বাইয়ের একটি অনামা শ্মশান ভূমিতে শেষ বিকেলের আলো নিভে আসার সাথে সাথে একটি চিতার আগুনও ক্রমশঃ নিভে এলো। কোনো মিডিয়া কভারেজ নেই। পরদিন শুধু কাগজে খুব ছোট্ট করে ছাপা হল তাঁর মৃত্যুসংবাদ।
ব্যস, এটুকুই। এর বেশি কি আর কিছু প্রাপ্য ছিল না তাঁর? সারাজীবনের ঝুলিতে না কোনো পুরস্কার, না কোনো স্বীকৃতি, না কোনো যোগ্য সম্বর্ধনা।
অথচ কি অনবদ্য যাদু ছিল তাঁর লেখায় যে সেই কিংবদন্তি গানের লিরিক নিয়ে আজকের প্রজন্মও রিমিক্স বার করে। কি আশ্চর্য!তাই না। এই কি তাহলে একজন অত্যন্ত সফল গীতিকার ও সহ সুরকারের প্রতি আমাদের শ্রোতাদের সঠিক মূল্যায়ন?
কে যাস রে ভাটিগাঙ বাইয়া,
আমার ভাইধন রে কইয়ো নাইওর নিতো বইলা,
তোরা কে যাস, কে যাস।
বছর খানি ঘুইরা গেল, গেল রে,
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না।
কইলজা আমার পুইড়া গেল,
গেল রে, ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না,
ছিলাম রে কতই আশা লইয়া,
ভাই না আইলো গেল গেল রথের মেলা চইলা,
তোরা কে যাস, কে যাস।
প্রাণ কান্দে, কান্দে, ও প্রাণ কান্দে রে,
নয়ন ঝরে ঝরে নয়ন ঝরে রে, নয়ন ঝরে রে,
ও পোড়া মন রে বুঝাইলে বুঝে না
প্রাণ কান্দে, কান্দে, প্রাণ কান্দে,
সুজন মাঝিরে, ভাইরে কইয়ো গিয়া,
না আসিলে স্বপনেতে দেখা দিতো বইলা,
তোরা কে যাস, কে যাস
সিন্দুরিয়া মেঘ উড়িয়া আইলো রে,
ভাইয়ের খবর আনলো না, আনলো না,
ভাটির চরে নৌকা ফিরা আইলো রে,
ভাইয়ের খবর আনলো না, আনলো না।
নিদয় বিধিরে তুমি সদয় হইয়া,
ভাইরে আইনো, নইলে আমার পরাণ যাবে জ্বইলা,
তোরা কে যাস, কে যাস?
সুরের সাম্পান ভেঙে গিয়েছিল ঝড়ে। স্বামী, পুত্র সবাই তো তাঁকে ছেড়ে অকালে চলে গিয়েছিলেন অমৃতের ঠিকানায়। আর আজকে তিনি মিলিত হতে চলেছেন তাঁর সেই অবেলায় চলে যাওয়া প্রিয়জনদের সাথে। তাঁর বিখ্যাত স্বামী, বিখ্যাত পুত্র। তাঁদের অতীব উজ্জ্বলতার মধ্যে তিনি চিরদিন নিজের প্রতিভাটিকে ইচ্ছে করেই কিছুটা ম্লান করে চাপা দিয়ে রেখেছিলেন কি? প্রদীপের নীচে যেমন টলমল করে একটি স্নিগ্ধ ছায়ার ধ্যানমগ্ন আবর্ত।
তাই কি তাঁর রচিত এত সব গভীর কবিতাগুলি যা সুরের রসে, মায়ায় জারিত হয়ে অবিস্মরণীয় গান হয়ে আজও ফেরে লোকমুখে, কেউ তার স্রষ্টাকে নিয়ে তেমন ভাবলোই না, সেই স্রষ্টাকে দিলো না তাঁর সৃষ্টির জন্য উপযুক্ত যোগ্য সম্মান?
(চলবে)
2 Comments
খুব সুন্দর লাগলো পড়ে। লেখার সাথে কবিতার লাইন গুলো ভাটিয়ালি গানের সুরের মূর্ছনার মত মুগ্ধ করে। প্রথমজন সুরের রাজার সাথে তার রাণীর গাঁথা শব্দের যাদু মিলে এক অপূর্ব সুন্দর গান সৃষ্টি হয়। পরের রাণীর ঝুলিতে পুরস্কারের আকাল কথাটি বুঝতে আরো কয়েকটি পর্ব পড়তে হবে আমাকে। একজন সাধারণ পাঠকের মতামত জানালাম।
খুব ভালো লাগলো। তোমার লেখায় থাক সুরের রানীর যথার্থ মূল্যায়ন,পাঠকের হৃদয়ে গাঁথা থাকুক তাঁর কাহিনী।আরো পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।