দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোস্টাল রেগুলেশন জোনে বিধি লঙ্ঘন করে অবৈধ ভাবে হোটেল নির্মাণ চলছেই। অভিযোগ, মাঝে-মধ্যেই নাম কা ওয়াস্তে অভিযান চালিয়ে হোটেল ভবনের বেআইনি অংশ ভেঙে দেয় প্রশাসন।কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ফের হোটেলগুলি মাথা তোলে, প্রশ্নের মুখে পড়ে প্রশাসন। উল্লেখ্য, রাজ্যে ক্ষমতায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দারমণির সমুদ্রতটকে দেশের সৈকত মানচিত্রে ঠাঁই দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী ২০১২ সালে মন্দারমণি লাগোয়া সিলামপুর, সোনামুই, দাদনপাত্রবাড়, মানিয়া, দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর মৌজা দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)-এর আওতায় আসে। এই ৬টি মৌজাই সিআরজেড-১ এর আওতাভুক্ত। সোজা কথায় জোয়ারের সময় প্রায়শই সমুদ্রের জল তট উজিয়ে ওই মৌজাগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। সিআরজেড-এর নিয়মিবিধি অনুসারে ওই ৬টি মৌজাতেই সমুদ্রতটের উচ্চ জোয়ার রেখা থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে জে কোনো ধরনের নির্মাণ কাজ অবৈধ।
যে কারণে ২০১২ সালে মুখ্যমন্ত্রী মন্দারমণিতে এসে সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা হোটেল-লজ দেখে বিরক্ত প্রকাশ করেছিলেন। তারপরেই তিনি সমুদ্রতটে যে কোনও ধরনের নির্মাণ কার্যের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।এর ফল স্বরূপ মন্দারমণিতে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ২০১৪ সালের জুন মাসে তাজপুরে ডিএসডিএ-র উদ্যোগে চারটি হোটেল ভাঙাও হয়। বলা যেতে ওই প্রথম মন্দারমণি সমুদ্র সৈকতে অবৈধ হোটেল ভাঙা হয়। সেই সময় মন্দারমণির একটি হোটেলের দোতলায় ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। দোতলার নির্মীয়মাণ ছাদ ভেঙে দেওয়া হয়। অন্য একটি হোটেল চত্বরে সৈকত দখল করে নতুন করে রেস্তোরাঁর ভবন তৈরি হচ্ছিল, ভেঙে দেওয়া হয় ওই ভবনও। একইভাবে, মন্দারমণির আর একটি হোটেলের পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্টাফ কোয়ার্টারের ভবনও ভেঙে দেওয়া হয়। এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনীও মোতায়েন করা হয়।
প্রসঙ্গত, জাতীয় পরিবেশ আদালত ২০২২ সালে মন্দারমণির ১৪৪ টি হোটেলকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে। এবং তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও দীর্ঘ দু’বছর এই বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে ময়দানে নামে জেলা প্রশাসন। ওয়েস্ট বেঙ্গল কোস্টাল রেগুলেশন জোনের জেলাস্তরের কমিটি এই বিষয়ে নির্দেশিকার জারি করে। ২০ নভেম্বর হোটেল ভাঙার কাজ করার কথা থাকলেও তা বাতিল করা হয়।মন্দারমনির অবৈধ হোটেলগুলি ভাঙার নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হোটেল মালিকরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল কোস্টাল রেগুলেশন জোনের জেলাস্তরের কমিটির জারি করা নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা একাধিক হোটেল মালিকের। আগামী সপ্তাহে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি হতে পারে। মামলায় সর্বোচ্চ আদালত কি নির্দেশ দেয় সেদিকেই নজর সবার।
যদিও ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও হোটেলে বুলডোজার চলবে না। এরপরেও কি আশঙ্কায় সমুদ্রে পাড়ে থাকা হোটেল মালিকরা? উঠছে প্রশ্ন। কলকাতা হাইকোর্টে হোটেল মালিকদের আবেদন, এই হোটেল ব্যবসা থেকে তাদের আয়, সংসার চলে। এই ব্যবসার সঙ্গে কয়েক হাজার পবিবার যুক্ত। তাঁরা এই হোটেল চালু করার আগে প্রশাসনের সব রকম অনুমতি নিয়ে চালু করেছে। তাই এখন অবৈধ ঘোষণা সঠিক পদক্ষেপ নয়। এমনকি এই বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়েছে। হোটেল মালিকদের দাবি, কলকাতা হাইকোর্টে কি নির্দেশ দেয় সেদিকেই সবার নজর রয়েছে।
হোটেল ভাঙার কাজ হবে, এমন কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে যাওয়া মাত্র চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি জেলা প্রশাসনের নির্দেশিকার কথা জেনে স্তম্ভিত হন তিনি। এরপরেই তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, কোনও বুলডোজার চালানো হবে না। ভেঙে দেওয়া কোনও সমাধান নয়। এই বিষয়ে দ্রুত মুখ্যসচিবকে হোটেল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসার নির্দেশও দেন প্রশাসনিক প্রধান। আর এরপরেই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এই সংক্রান্ত যাবতীয় অংশীদারদের সঙ্গে প্রাথমিক সমন্বয় সাধনের কাজ শুরু করেছেন বলেই খবর। এমনকি শীঘ্রই বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। আর এই অশান্তির পরিস্থিতি একেবারে পর্যটন শূন্য মন্দারমণি। কার্যত অশান্তি এড়াতেই সেখানে মানুষ যাচ্ছে না বলেই খবর।