ছবি সৌজন্যে: আদিশক্তি পুজো কমিটি
অতিমারীর মধ্যে এমন থমকে যাওয়া সময়ে, প্রকৃতির সাথে শারদীয় মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্র ভদ্রের মায়াবী কণ্ঠে আগমনী সুর জানান দেয় “মা আসছেন “। দেখতে দেখতে সময়ের মুহূর্তগুলো কেমন ডুব দেয় শারদ আনন্দে, দিনে দিনে শারদীয়ার রেশটাই বাংলা তথা ভারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে, পৌঁছে যায় বিশ্বের কোনায় কোনায়। ২০২০-র উলটপুরানে কলকাতার পাশাপাশি ব্রিটেনেও এবারের দুর্গাপুজোর হুজুগটা অনেকটা কম। বার্মিংহাম, কেমব্রিজ,কার্ডিফ, গ্লাসগো, এডিনবার্গের পুজো বন্ধের খবরটা ইউনাইটেড কিংডমের অনেক বাঙালিরই প্রায় স্বপ্নভঙ্গ বলা চলে। প্রবাসে এমন বিষণ্ণ সময়ে দাঁড়িয়েও এবারের শারদীয়ার রেশটা ধরে রাখলো লন্ডনের ‘আদি শক্তি ‘ র উদ্যোক্তারা।
সময়টা ২০১৭। লন্ডনের কিছু তরুণ বাঙালির উদ্যোগে হেয়ারফিল্ড একাডেমিতে এক সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল ‘আদিশক্তি উমা ‘, তৈরি হল কমিটি। ‘আদি শক্তি’ র সূচনার মুহূর্তটা পুজো উদ্যোক্তাদের স্মৃতির পাতায় এখনও যেন সতেজ রয়েছে। ব্যাস, শুরু হয়ে গেল পথচলা। শোনা যায়, কালীঘাট থেকে উমা পাড়ি জমান এই মণ্ডপে। ওয়েস্ট ড্রেটন কমিউনিটি সেন্টারে এবছর উমার আগমন জানান দেয় বাঙালির সবথেকে বড় কার্নিভাল যেকোনো অশুভ শক্তিকে উপেক্ষা করতে পারে নিমেষেই। কিন্তু করোনা আবহে সরকারি নির্দেশিকা বজায় রেখেই পুজো কমিটির সদস্যরা মণ্ডপে জনসমাবেশের দিকটায় বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে এবারে। ষষ্ঠীর বোধন হয়ে অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধি পুজো, কুমারী মায়ের বরণ সবশেষে দশমীতে সিঁদুরে রাঙা হয়ে প্রবাসের বাঙালিরা মেতে ওঠেন এই পুজো প্রাঙ্গনে। এবারেও তা থাকবে তবে মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে। প্রতিবারই সাবেকিয়ানায় মোড়া একটুকরো কলকাতা ভেসে ওঠে লন্ডনের “আদিশক্তির ” পুজোতে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান একেবারেই ব্রাত্য নয় এখানে। তবে এবারের বেশিরভাগ অনুষ্ঠানই হবে অনলাইনে। তা যাই হোক সঙ্কটকালে সেটাই বা কম কিসের। ২০২০-র সংকটকালে পুজো উদ্যোক্তারা লন্ডনের দুস্থ অসহায়দের জন্য কাজ করা সেবাপ্রতিষ্ঠানে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবছর তারা উদ্যোগ নিয়েছে নিজেরাই খাবার তৈরি করে বিভিন্ন চার্চ, হোমকেয়ার,নানাবিধ সেবাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছে দেবেন। লন্ডনের একাধিক দুর্গা পুজো কমিটির মধ্যে “আদিশক্তি ” সত্যিই একটু আলাদা। ভারতীয় সব ধর্মের সব বর্ণের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে চলাই এই পুজো কমিটির প্রধান উদ্দেশ্য। পুজো কর্তা পার্থ চৌধুরী বলেন, শক্তির আরাধনা আমরা সবাই করি, তাই মা দুর্গা শুধু বাঙালির কেন হবে? মা সবার তাই আদিশক্তির পুজো হলো সবার পুজো এবং মানবতার পুজো। সত্যি, এখানকার ছবিটাও সে কথাই বলে তাই এমন অস্থির সময়েও সাগর পারে বাঙালিদের শারদোৎসবের সার্থকতা চিরন্তন।