মঙ্গলবার শুপ্রিম কোর্টে আরজি কর কাণ্ডের ফের শুনানি। তার আগে আরজি করে নির্যাতিতার ন্যায় বিচারের দাবিতে সোমবার সন্ধ্যায় বেনজির প্রতিবাদের সাক্ষী থাকছে রাজ্য। বাংলা জুড়ে ১২০ টি জায়গায় জ্বলে উঠল ‘দ্রোহের আলো’। তিলোত্তমার ন্যায় বিচারের দাবিতে ফের একবার রাজপথের দখল নিল প্রতিবাদী মানুষ। গত প্রায় তিনমাস ধরে ন্যায়বিচারের দাবিতে রাস্তায় থাকা প্রতিবাদী মানুষ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় রাজ্যজুড়ে ‘জ্বালাও আলো, দ্রোহের আলো’ কর্মসূচী শুরু করল। সুপ্রিম শুনানির আগে আর জি করের পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে রাজপথের দখল নিল বাংলার মানুষ । এই কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছিল ৮০টি সংগঠন সহ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর’স-এর যৌথমঞ্চ ‘অভয়া মঞ্চ। সুপ্রিম শুনানির আগে অভয়া মঞ্চের তরফে ডাক দেওয়া ‘দ্রোহের আলো’ কর্মসূচিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলায় তিলোত্তমার নামে এখনও গর্জে উঠছে প্রতিটা মহল্লা। শাসকের দাঁত, নখ যত তীক্ষ্ণই হোক তাদের দ্রোহের আগুন নিভবে না। সুবিচার আদায় না করে থামব না। সেই লক্ষ্যে পাড়ার মোড়ে একটু জায়গা নিয়ে নেমে পড়েছে তিলোত্তমার ন্যায় বিচারের জন্য। জ্বলে উঠেছে বাতি। স্লোগান, গান, কবিতা, বক্তব্যে স্মরণ শুরু হয়েছে তিলোত্তমাকে।
সোমবার কলকাতা, জেলা সদরগুলি এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ‘জ্বালাও আলো, দ্রোহের আলো’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে অভয়া মঞ্চ-এর নামে, যাদবপুর, আকাদেমি, বেহালা, গড়িয়া মোড়, কলেজ স্ট্রিট সহ উত্তরপাড়া, সোদপুর, বর্ধমান এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূচির আয়োজকের দায়িত্বে রয়েছে চিকিৎসক সহ সমাজের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলি। এই কর্মসুচী মূলত নির্যাতিতার পক্ষে সোচ্চার হয়ে এবং রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে হুমকি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি, ‘অভয়া মঞ্চ’ কর্মসূচির অধীনে একটি মশাল মিছিলের আয়োজন করেছে, যা পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত আয়োজিত হয়। এদিন কলেজ স্ট্রিট চত্বরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ‘অভয়া মঞ্চ’-এর পরবর্তী কর্মসূচি। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত, তারা ঘরে ঘরে এবং পাড়ায় পাড়ায় ন্যায়বিচারের দাবিতে একটি প্রচার কর্মসূচির আয়োজন করে। এই প্রচারের মাধ্যমে তারা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চান, যাতে সবাই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে।‘অভয়া মঞ্চ’-এর সদস্যরা জানিয়েছেন, এর পর আগামী ৯ নভেম্বর রানি রাসমণি রোডে একটি জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে তারা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছেন, যা এ ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথকে সুগম করবে।
আন্দোলনের উদ্যোক্তারা বলেন, তারা নির্যাতিতার পরিবারের পাশে রয়েছেন এবং তাদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সর্বদা সোচ্চার থাকবেন। এই পরিস্থিতিতে, সকলের একযোগে আন্দোলন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন তারা। ‘অভয়া মঞ্চ’ তাদের স্লোগানে বারবার জানায়, “দ্রোহের আলো জ্বালো”। এমন একটি আন্দোলন যে শুধু নির্যাতিতার জন্যই নয়, বরং সমাজের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় বার্তা দেয়, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ‘অভয়া মঞ্চ’ এই আন্দোলনের মাধ্যমে এক নতুন আশা এবং প্রতিবাদের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। সকলের দৃষ্টি এখন একটি বৃহত্তর পরিবর্তনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে চলেছে। অন্যদিকে সোমবার শিয়ালদহ আদালতে আরজি কর-কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এদিন আদালত থেকে বের করে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময়ে সঞ্জয় চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘আমি কিছু করিনি, আমায় ফাঁসানো হয়েছে’। সোমবার দুপুরের আগে থেকেই শিয়ালদহ আদালত চত্বরে ভিড় জমতে শুরু করে। হাজির হন সাংবাদিকেরাও। চার্জ গঠন প্রক্রিয়া শেষে সঞ্জয়কে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় থেকে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন ধৃত সঞ্জয়। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘আমাকে ভয় দেখানো হয়েছে। আমি বিচারককে বলছি, আমি কিছু করিনি। আমাকে উপর থেকে নীচে নামিয়ে দিল। এটা কি কোন ন্যায়? এটা কি ভারত সংবিধানের ন্যায়?’ উল্লেখ্য, আদালতের তরফে এদিন জানানো হয়েছে, আগামী ১১ নভেরম্বর থেকে এই মামলার শুনানি হবে। শুনানি চলবে প্রত্যেক দিন।