কলকাতা ব্যুরো: সত্যিই ইতিহাস।
দিনভর একটা দেশ রামনামে মেতে।
এটা ইতিহাস নয়!
একটি দিনের অর্ধেক বলা সর্বভারতীয়, আঞ্চলিক, সমস্ত টিভি চ্যানেলে অযোধ্যা ছাড়া খবর নেই, এটা ইতিহাস নয়।
কে, কবে দেখেছেন, একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী আপাদমস্তক পূজারীর বেশে।
পুজো অনেক ভিআইপি করেন।
বীরভূমে কীর্ণাহারের ভিটেয় ফি বছর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় পুজো করেন গায়ে ধুতি জড়িয়ে।
সেসব নিতান্তই ঘরোয়া পূজার্চনা।
কিন্তু সর্বজনীন অনুষ্ঠানে পূজারীর বেশে রামলালার মূর্তির সামনে কোন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাষ্টাঙ্গে প্রণাম ইতিহাস নয়!
রামনামে দেশের মেতে ওঠাও তো ইতিহাস বৈকি।
যে রাহুল গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রীর নামে চারটি অভিযোগ না করে রোজ জল খান না মনে হয়, তিনি পর্যন্ত রামনামের গুণকীর্তনে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
ইতিহাস তো বটেই।
পশ্চিমবঙ্গে আসুন।
একটা দলের রাজ্য সভাপতি টিভি ক্যামেরা বাড়ির ছাদে শঙ্খে ফুঁ দিয়ে ছবি প্রচার করলেন অন্য সব সাংগঠনিক, রাজনৈতিক কাজ ফেলে।
তাও বলবো ইতিহাস নয়।
অযোধ্যায় সরযূ নদীতীরে ভারতবর্ষের নতুন ইতিহাসের সূচনা হল নিঃসন্দেহে।
সূচনা করার চেষ্টা হল আরও অনেক কিছুর সঙ্গে একদেশ, এক ভাবধারা প্রতিষ্ঠার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন বটে, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য রক্ষায় কাজ করে যাবেন, নতুন ইতিহাসের সূচনায় সেটা কেমন যেন ক্ষীণকণ্ঠ হয়ে গেল।
দ্বিধার নৌকায় তরী বাইলে যা হয় আর কী।
মমতার দলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায় ২৪ ঘণ্টা আগেই বলেছিলেন, কেউ চাইলে ঘরে বসে রামপুজো করতেই পারেন।
বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য মমতা চাইতেই পারেন, তাঁর দলের অগণিত হিন্দু কর্মী, সমর্থক কিন্তু মনে করলেন, হিন্দুত্বের পথে বেশ কড়া জবাব দেওয়া গেল অযোধ্যায়।
ইতিহাস নিশ্চয়ই।
জয় শ্রীরাম ধ্বনিটাও বদলে দিলেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী।
জয় শ্রীরাম নয়, জয় সিয়া রাম।

নয়ের দশক থেকে জয় শ্রীরাম হয়ে গিয়েছিল আগ্রাসী, কট্টর হিন্দুত্বের ব্র্যান্ড নেম।
উত্তর ভারতে কিন্তু পরস্পরের প্রতি সৌজন্য প্রদর্শনে জয় সিয়ারাম বলার প্রচলন অনেক আগে থেকে।
এই উচ্চারণে আছে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, সংবেদনশীলতার উষ্ণতা।
ধ্বনির উচ্চারণ বদলে মোদী প্রায় নিঃশব্দে হিন্দুত্বের সেই উগ্রতাকেও ঢেকে দেওয়ার বার্তা দিলেন।
ইতিহাস গড়লেন নিশ্চয়ই।
সহনশীলতা ভারতীয় সংস্কৃতির মজ্জায়।
অন্তত বাহ্যিকভাবে সেই শিকড় ছোঁয়ার ভাব দেখালে এই নয়া ভাবধারার রথ ঠেকাবে কার সাধ্য।
রাহুল, প্রিয়াঙ্কা ইতিমধ্যে সেই রথের সামনে শুয়ে পড়েছেন।
অখিলেশ, মায়াবতীও মনে করছেন রামমন্দিরের শিলান্যাসে নতুন যুগের সূচনা হল।
মোদী ভাবধারা আরও অপ্রতিরোধ্য হল।
শুধু রামমন্দিরের শিলান্যাস নয়, এক ইতিহাসের সূচনাকাল আজ।
জয় সিয়ারাম!!!

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version