কলকাতা ব্যুরো: বর্তমান পরিস্থিতিতে নানান কারণেই ব্যক্তি অবসাদে ভুগছে। পরিস্থিতি তো বটেই, খাওয়া-দাওয়াও ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এর ফলে ব্যক্তি অবসাদের শিকার হয়ে যায় ও মনে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা জন্মাতে শুরু করে।
গবেষকদের মতে, ব্যক্তির চিন্তাভাবনা ও বিচার তাঁদের খাবার দাবারের ওপর নির্ভর করে। বিজ্ঞান অনুযায়ী, ব্যক্তি যা খায়, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের ওপর। মস্তিষ্ক আবার অন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তাই প্রচলিত রয়েছে, যে অন্ত্র খুশি থাকলে মানুষ খুশি।

২০০৮ সালে ইউসিএলএ-র গবেষকরা ১৬০টি রিপোর্টের সমীক্ষা করেন। এর থেকে জানা যায়, খাবার দাবার কী ভাবে মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করতে পারে। এখানেই জানা যায় যে, ভারসাম্য পূর্ণ খাবার গ্রহণের পাশাপাশি ব্যায়াম করলে মানসিক বিকার সাড়িয়ে তোলা যেতে পারে।
তবে কোন কোন খাবার মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো, জেনে নিন—


১. কিনোআয় ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান থাকে। চাল ও পাস্তার পরিবর্তে কিনোআ একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প। একটি গবেষণা অনুযায়ী, কোনিআয় ফ্ল্যাভনয়েডস থাকে, যা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি মনকে শান্ত করে, অবসাদমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
২. সালমন মাছ ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উল্লেখযোগ্য উৎস। গবেষণায় জানা গিয়েছে, ব্যক্তির মুড ভালো রাখতে এটি সাহায্য করে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ওমেগা ৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে ত্বক ও চুল উজ্জ্বল হয়। এমনকি ব্যক্তিকে আনন্দে রাখতেও সাহায্য করে। তবে সালমন মাছ না-পেলে এর স্থানে ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করতে পারেন।
৩. ভিটামিন ডি-তে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট গুণ থাকে। যা মুড ঠিক করতে সাহায্য করে। এই ভিটামিনটি মূলত সূর্য রশ্মি থেকে পাওয়া গেলেও, মাশরুম, দুধ, মুরগির লিভার ও ফ্যাটি ফিশ ভিটামিন-ডির ভালো উৎস। ট্রিপ্টোফ্যানকে সেরোটোনিনে পরিবর্তিত করার জন্য ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিমাণে সেরোটোনিন অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।
৪. একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ডার্ক চকোলেট খেলে এন্ডোর্ফিন নামক হরমোনের স্তর বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্যক্তি চিন্তামুক্ত হয়ে আনন্দ অনুভব করে।
৫. প্রোবায়োটিকস আসলে অন্ত্রে উপস্থিত ভালো ব্যাক্টিরিয়া। অন্ত্র পরিষ্কার করে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে এটি সাহায্য করে। এমনকি রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে মজবুত করে এটি। দই সবচেয়ে ভালো সহজলভ্য প্রোবায়োটিকস। প্রোবায়োটিকস মস্তিষ্ক শান্ত রাখে ও ব্যক্তিকে অবসাদমুক্ত থাকতে সাহায্য করে।
৬. ভিটামিন বি৬ টিপ্টোফ্যানকে সেরোটোনিনে পরিবর্তিত করে। সেরোটোনিন এক ধরণের নিউরোট্রান্সমিটার। এটি ব্যক্তির মুড ভালো করে। পোলট্রি, সি ফুড, সবুজ শাক-সবজি, পালক, কেল এই ভিটামিনের উল্লেখযোগ্য উৎস।
৭. আঙুরে রেসবেরাট্রল থাকে যা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ব্যক্তির মুড ভালো করতে সাহায্য করে।
৮. ফলিক অ্যাসিডের অভাবে শরীরে সেরোটোনিনের স্তর কমে যায়। গবেষণা অনুযায়ী, ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য ফলিক অ্যাসিড উপযোগী। পালকের মতো সবুজ শাকপাতা যুক্ত সবজি এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
৯. ব্যক্তির মস্তিষ্ক ও ইমিউন সিস্টেম পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত। যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাঁরা খুব সহজে অবসাদের শিকার হয়ে পড়েন। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন সি যুক্ত ফল-সবজি যেমন, ব্রকোলি, টক ফল, কেল, স্ট্রবেরি, আম ও কিউয়ি খেতে পারেন।
১০. ম্যাগনেশিয়াম মেটাবলিক অ্যাক্টিভিটি ও সেরোটোনিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শাক-সবজি, বাদাম, বীজ, কুমড়োর বীজ, আভাকাডো, অন্ন গ্রহণ করলে সুফল পাওয়া যায়।
তবে এ সমস্ত খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়ামও অবসাদমুক্ত থাকতে জরুরি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version