আপনি নিজে কখনো ভূত দেখেছেন? স্পষ্ট করে হ্যাঁ কিংবা না অনেকেই বলতে পারেন না, কিন্তু ভূতে ভয় পান না এমন মানুষ হাতেগোনা। বিজ্ঞান কখনই ভূতের অস্তিত্বকে আমল দেয় না, যদিও তারপরেও কেউ কেউ ভূত দেখেছেন বলে দাবি করেন। পাশাপাশি পৃথিবীতে অনেক জায়গা আছে, সেখানে এমন দু-একখানা বাড়ি আছে যেখানে গেলে সাংঘাতিক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়। নানা ভৌতিক কাহিনীও মিশে আছে সেই সব বাড়িগুলির সঙ্গে। যদিও বিজ্ঞান সেই ঘটনার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে পারেনা। কিন্তু অনেকেই সাংঘাতিক ঘটনার অভিঙ্গতা অর্জন করেছেন। সেরকমই একটি বাড়ির নাম রেকটরি অবস্থান ইংল্যান্ডের বোরলে গ্রামে।
ইতিহাস বলছে, ১৮৬৩ সালে রেভেরেন্ড হেনরি ডাওসন এলিস বুলের জন্যে এই রেকটরি নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় মানুষদের মুখে প্রচলিত গল্প হল, এক নান বোরলে সম্প্রদায়ের এক সন্ন্যাসিনীর প্রেমে পড়েন। তাঁরা দুজন বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ এই সম্পর্ক মেনে নেবে না বুঝেই তাঁরা পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পথেই ধরা পড়ে যান। শাস্তিস্বরূপ সেই প্রেমিকা সন্ন্যাসিনীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় এবং নানকে এই বোরলে রেকটরি প্রাসাদের উঁচু প্রাচীর থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। অনেকে বলেন, নানকে এই প্রাসাদের মধ্যেই পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় মানুষের মত, এই ঘটনার পর থেকেই ওই প্রাসাদ ঘিরে ঘটতে থাকে অদ্ভূত সব ঘটনা। কিন্তু ১৯৬৩ সালে প্রমান হয় এই ঘটনার কোনো প্রমান নেই। এটি সম্পূর্ন রেকটির পরিবারের বানানো কাহিনী। এছাড়া ধারনা করা হয়, সন্ন্যাসীনীর মতবাদ রাইডর হেগার্ড-এর উপন্যাস মনতেজুমা’স ডটার(১৮৯৩)অথবা ওয়াল্টারের বিয়োগান্তক কবিতা মারমিয়ন(১৮০৮)থেকে এসেছে। তাছাড়া সংবাদপত্রে প্রকাশের আগে পর্যন্ত এই ঘটনা কোনো স্থানীয় পত্রিকা অথবা লিখিত কোনো দলিলে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ১৯৪৪ সালে বিশ্বখ্যাত ‘লাইফ’ ম্যাগাজিন এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু তাতেই ধরা পড়ে মারাত্মক ঘটনা। ম্যাগাজিনের ফটোগ্রাফার যে ছবিগুলি তুলেছিলেন, তাতে অদ্ভূত সব দৃশ্য ধরা পড়ে, যার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এমনকী, ফটোগ্রাফার যখন বাড়িটির ছবি তুলতে যান, তখন বাড়ির ভেতর থেকেই ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারা হয়। কিন্তু ওই ঘটনার পর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরকম নানান ঘটনা ঘটতে থাকে বোরলের ওই রেকটরি নামের বাড়ি ঘিরে। তারপর থেকে বাড়িটি ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ভুতুড়ে জায়গা হিসেবে এবং রেকটরি ভূতের বাড়ি হিসাবে বিখ্যাত হয়ে যায়।
ইংল্যান্ডের ভূতের বাড়ি রেকটোরি ছিল একটি ভিক্টোরিয়ান ম্যানশন। এর মালিক ছিলেন প্রাক্তন রানী অ্যানী। বাড়িটির মূল ভবনে ১৮৬২ সাল উল্লেখ্ করা থাকলেও এর আসল স্থাপিত সাল নিয়ে সন্দেহ আছে। বাড়িটি ১৯৩৯ সালে আগুনে পুড়ে মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং ১৯৪৩ সালে এটি পুরোপুরি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ইংল্যান্ডের এসাক্স এর বোরলি গ্রামে অবস্থিত এই বাড়িটি নিয়ে অনেক ভুতুড়ে গল্প প্রচলিত আছে। কিন্তু ১৯২৯ সালে এই গল্প হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পরে যখন ডেইলি মিরর পত্রিকায় তখনকার বিখ্যাত ভৌতিক গবেষক হ্যারি প্রাইস-এর এই বাড়িতে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। প্রাইস ভৌতিক বিষয় নিয়ে দুটি বিখ্যাত বই লেখার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। ১৯৫৬-এর সেপ্টেম্বরে বিবিসিতে বোরলি রেকটরি নিয়ে একটি অনুষ্ঠান প্রচার করার কথা থাকে, কিন্তু রেকটরের স্ত্রী মারিয়ানি ফয়েস্টারের আইনি পদক্ষেপের কারণে সেটি প্রচার করা সম্ভব হয়নি।
বোরলি রেকটোরির ইতিহাস খুঁজলে বেড়িয়ে আসে অদ্ভুত সব ঘটনা।জানা যায় যে, ১৮৬৩ সালের দিকে কিছু স্থানীয় বাসিন্দারা তার বাড়িটির চারপাশে অদ্ভুত কিছু পায়ের চিহ্ন দেখে। ২৮ জুলাই ১৯০০ সালে রেকটরের চার মেয়ে তারা এক রাতে তাদের থেকে কিছু দূরে সেই সন্ন্যাসীনীর ভূত দেখেছে এবং তারা যখন কাছে যাওয়ার চেষ্ঠা করেছিল তখন ছায়ামূর্তিটি মিলিয়ে যায়। এই বাড়ির সমন্ধে অনেক লোক অনেক অস্বাভাবিক ঘটনার কথা বর্ননা করেছেন। কেউ কেউ নাকি দেখেছেন দু’জন মাথাহীন ঘোড়ার গাড়ি চালক টমটম নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বলেছেন, হঠাৎ করেই বেল বেজে উঠত, যদিও বেলের তার ছেঁড়া ছিলো, এছাড়াও রয়েছে জানালায় আলো ও অদ্ভুত পায়ের চিহ্ন।