কলকাতা ব্যুরো: দেশ ছেড়েছিলেন। ভেবেছিলেন আর হয়তো কখনওই দেশে ফেরা হবে না। কিন্তু একাধিক দেশ ঘোরার পরে অবশেষে সাত সপ্তাহ পর আবার দেশের মাটিতে পা রাখলেন শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। কয়েক মাস আগেই শ্রীলঙ্কা চরম আর্থিক সঙ্কটে ডুবে যাওয়ার পরই দেশবাসীর রোষের মুখে পড়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
শ্রীলঙ্কার বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবারই দেশে ফিরে এসেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রী তাঁকে স্বাগত জানাতে গিয়েছিলেন। তাঁরা রাজাপক্ষেকে গলায় মালা দিয়ে স্বাগত জানান।
মে মাসের শুরু থেকেই ধুঁকতে শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। এরপর জুন মাসের শেষভাগে যখন আর্থিক দেনায় সম্পূর্ণ ডুবে যায় ভারতের প্রতিবেশী দেশ, সেই সময় থেকেই বিক্ষোভে পথে নামেন সাধারণ মানুষ। শ্রীলঙ্কার এই আর্থিক দুরাবস্থার জন্য দেশবাসীরা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষেকেই দোষারোপ করেছিলেন। ধীরে ধীরে আর্থিক সঙ্কট যত বাড়তে থাকে, ততই বিক্ষোভও বাড়তে থাকে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়েই তিনি একদিন মধ্যরাতে স্ত্রী ও দুই নিরাপত্তারক্ষীকে নিয়ে দেশ ছেড়ে পালান। শ্রীলঙ্কা থেকে পালিয়ে তিনি প্রথমে মলদ্বীপে আশ্রয় নেন, কিন্তু সেখানে তাঁর থাকার কথা জানাজানি হতেই সেই দ্বীপরাষ্ট্রেও বিক্ষোভ শুরু হয়। বাধ্য হয়েই তিনি চার্টার্ড বিমানে করে মলদ্বীপ থেকে সিঙ্গাপুরে যান।
সেখানেই তিনি প্রায় এক মাস ছিলেন। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফাও দিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর থেকেই। তবে ভিসার মেয়াদ শেষ হতেই তাঁকে ফের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। শেষে তিনি তাইল্যান্ডে আশ্রয় নেন। বিগত দুই সপ্তাহ ধরে তিনি ব্যাঙ্ককেই একটি হোটেলে কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন।
ব্যাঙ্ককে থাকাকালীনই জানা গিয়েছিল, গোতাবায়া ফের দেশে ফিরে আসতে পারেন। দেশে ফেরার যাবতীয় ব্যবস্থাও শুরু করা হয়। সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হতেই শুক্রবার শ্রীলঙ্কায় ফিরে আসেন পলাতক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। ৫২ দিনে স্বেচ্ছা-নির্বাসন কাটিয়ে আসার পর, দেশের মাটিতে পা রাখতেই কিছুটা আবেগঘন হয়ে পড়েছিলেন গোতাবায়া, এমনটাই সূত্রের খবর।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের সুরক্ষার কথা ভেবে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন একটি নিরাপত্তা ডিভিশন তৈরি করা হয়েছে কেবল গোতাবায়ার নিরাপত্তার জন্য। এই বাহিনীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কম্যান্ডো থাকবে।
এছাড়া শ্রীলঙ্কার সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী, একটি গাড়ি ও থাকার জন্য আলাদা বাড়ির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তাঁর ভাই তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষেও এই সুবিধা পাচ্ছেন।