উষা দত্ত
মহামারীর কালেও ক্যালেন্ডারের পাতার দিনগুলোর সাথে শিউলি ঝরা আশ্বিনের শারদ প্রাতে বীরেন্দ্র ভদ্রের মায়াবী কণ্ঠের আগমনীর সুর জানান দেয় “মা আসছেন”। দু’হাজার কুড়ির উলটপুরানে এতকাল শারদীয়ার আমেজে মজে থাকা তিলোত্তমাই যখন বেমানান, পাশাপাশি প্রবাসের ছবিটা যে একই হবে সেটাই তো স্বাভাবিক। গোটা ইউনাইটেড কিংডম জুড়ে এবারের দুর্গা পুজোর হুজুগটা অনেক কম। এতকালব্যাপী ব্রিটেনে ষাটের বেশি পুজো কমিটির রেষারেষি ছিল তুঙ্গে।
কিন্তু এবছরে মাত্র কয়েকটি মণ্ডপে ‘মা আসছেন’। বার্মিংহ্যাম, সাউথ লন্ডন, কেমব্রিজ, আবার্ডিন, কার্ডিফ, বাঙ্গালী কালচার এসোসিয়েশন, ওয়েলস এর ঘট পুজো স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, এডিনবার্গ এরকম নামিদামী জায়গার এবারের দুর্গাপুজা বন্ধের খবরটা ইউকের অনেক বাঙালিরই প্রায় স্বপ্নভঙ্গ বলা চলে। উলোটপুরানের সময়ে পুজো উদ্যোগতারাই যখন অনিচিয়তায় দিন গুনছে, ঠিক তখনই পিটারবোরো এর “বেঙ্গলি কালচারাল এসোসিয়েশন অফ পিটারবোরো ” এর মণ্ডপে আঁকা হচ্ছে উমার পদচিহ্ন। মহামারীর এমন দিনেও এতদিনের পুরোনো পুজোটা ব্রিটেনের মাটিতে শারদোৎসবের বেরঙিন আমেজটাকে কিছুটা হলেও চেষ্টা করছে রাঙিয়ে দিতে।
সময়টা ছিলো ১৯৮৭ সালে প্রবাসী কিছু বাঙালির উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল “বেঙ্গলি কালচারাল এসোসিয়েশন। ” শুরু হল পথ চলা, ধীরে ধীরে শারদ আনন্দের রেশটাকেই চলে এল শেতাঙ্গদের প্রাচীন শহরে। ২০০৮সালে বেঙ্গলি কালচারাল এসোসিয়েশনের পুজোতে কলকাতা থেকে উমা পাড়ি দিয়েছিলেন এই পিটারবোরো শহরে। ভাবে ভক্তিতে মিলেমিশে দেখতে দেখতে একটা যুগ পার করে আজও অমলিন প্রাচীন এই পুজোটা। আহা ! প্রতি বছর বিদেশের মাটিতে এমন দৃশ্য প্রবাসের যেকোনো বাঙালির কাছে বড়ই আবেগের।
করোনার দাপটে ২০২০ বছরটায় ফিকে হয়েছে একের পর এক উৎসবের আনন্দ। এতদিন পর্যন্ত ভারতীয় নিয়ম রীতির মেনে প্রতিবছরই মায়ের বোধন থেকে বিসর্জন সমাপ্ত করতেন “বেঙ্গলি কালচারাল এসোসিয়েশন অফ পিটারবোরো “-র পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু এবারের সময়টা একেবারেই যে অন্যরকম,তাই ২৫ অক্টোবরএকদিনই সীমিত সময়ের জন্য মায়ের বোধন, অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধি পূজা হয়ে ধুনুচির নাচে তাল মিলিয়ে মায়ের বিদায়বেলায় সিঁদুর খেলা সবই হবে এখানে। এবারের ব্রিটেনের কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই মণ্ডপে লোকসমাগম, মাস্ক, স্যানিটাইজার এসব কিছুর ব্যাপারেই যথেষ্ট বাধ্যতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে পিটারবোরোর “বেঙ্গলি কালচারাল এসোসিয়েশন” এর পুজোকমিটির সদস্যরা।
এখানকার প্রতিবারের দুর্গা পুজোর সময়টা থাকতো জমজমাট, বাঙালি অবাঙালি মিলে মিশে জমিয়ে রাখতো পুজোর আসরটা। নামীদামী তারকার ভিড় , হাজার লোকের সমাবেশ, আনন্দ আড্ডা,স্টাইল সেগমেন্ট, ফটো সেশন, প্রাসাদ বিতরণ হয়ে বারবেলায় খাওয়াদাওয়া এইরকমই পুজোর দিনগুলো মনে করাতো সাগর পারে উঠে আসা সাবেকে মোড়া এক টুকরো কলকাতার কথা। কিন্তু আজ সবই যেন অতীত, অতিমারীর সময়ে এবছরে শারদ আনন্দটা অনেকটাই ফিকে পড়েছে ব্রিটেনের অনেক পুজো প্রাঙ্গনে। সবার প্রার্থনা শুধু একটাই “মহাশক্তির” আগমনে বিলীন হোক অতিমারীর অশুভ সময়, তবুও আশা একটাই তবে তাই এবারটা যাই হোক আসছে বছর ‘আবার এসো মা। ‘