কলকাতা ব্যুরো: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। প্রায় সাড়ে ২৭ ঘণ্টা জেরার পর গ্রেপ্তার করা হলো রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে। শুক্রবার সকাল থেকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রাজ্যের শিল্পমন্ত্রীকে। সূত্রের খবর, গ্রেপ্তারির পর প্রথমে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে মন্ত্রীর। আর সেই মতোই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক পরীক্ষার জন্য জোকা ইএসআইতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। সেখানে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে পার্থবাবুকে। শনিবারই আদালতে তোলা হবে মন্ত্রীকে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কেও। টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসন থেকে ২১ কোটি টাকা উদ্ধারের পর শনিবার সকালে প্রথমে আটক করা হয় তাঁকে। বেলা ১১টা ৫০ নাগাদ গ্রেপ্তার করা হলো মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতাকে।
তবে নাকতলার বাড়ি থেকে তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা জানেন না পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। শনিবার সকালে নাকতলার বাড়ি থেকে ইডি গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় এই দাবিই করলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। একই সঙ্গে, তাঁর আরও অভিযোগ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। পার্থর কথায়, আমি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।
মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন তাঁর আইনজীবী। সিজিও কমপ্লেক্সের পথে পার্থ ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও (Arpita Mukherjee)৷ তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’জনকেই ইডির বিশেষ আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানাবেন আধিকারিকেরা। কোর্টের অনুমতি পেলে ইডি দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
বিশেষত এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত যে সব প্রশ্নের জবাব ঠিকঠাক দেননি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী, তা জানার চেষ্টা করবে তদন্তকারী সংস্থা। শুক্রবার আনুমানিক সকাল 8টা নাগাদ তাঁর নাকতলার বাড়িতে পৌঁছয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে শুক্রবার সকাল থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত জেরা করেছে ইডি। জানা গিয়েছে, এর আগে এত দীর্ঘ সময় ধরে কোনও অভিযুক্তকে জেরা করেনি কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। জিজ্ঞাসাবাদে ইডি আধিকারিকদের সহায়তা না-করার কারণেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী গ্রেফতার বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পর তদন্তে নামে সিবিআই। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্ত শুরুর পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের নজরে আসেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)। সিবিআই জেরার মুখোমুখিও হয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার সকাল থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। রাতভর দফায় দফায় জেরাও করা হয় তাঁকে। শনিবার সকাল থেকে রাজ্যের মন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীতে কার্যত মুড়ে ফেলা হয় গোটা বাড়ি। গ্রেপ্তারির সম্ভাবনা ক্রমশ জোরাল হচ্ছিল। প্রায় সাড়ে ২৭ ঘণ্টা জেরার পর সকাল ১০টা নাগাদ অ্যারেস্ট মেমোয় সই করানো হয় তাঁকে। আজই মন্ত্রীকে আদালতে তোলা হবে বলেই জানান আইনজীবী অনিন্দ্যকিশোর রাউত।
উল্লেখ্য, শুক্রবার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথিপত্র পায় তদন্তকারী সংস্থা। তারপর সেখান থেকে রাতেই শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে অভিযান চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডি সূত্রে খবর, এসএসসি দুর্নীতিকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন অভিনেত্রী-মডেল অর্পিতাও। দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর ডায়মন্ড সিটি সাউথের আবাসনের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ২১ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করে ইডি। এই বিপুল টাকা গোনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে তিনটি মেশিন নিয়ে আসা হয়, ডাকা হয় ব্যাঙ্ক আধিকারিকদেরও। এছাড়াও ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনার গয়না, ২০টি মোবাইল পাওয়া গিয়েছে অভিনেত্রীর ফ্ল্যাট থেকে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়ে বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্রে সই করানো হয়েছে। সেই সইয়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি দাবি করছেন, তাঁর এখন কিছু মনে নেই। এমনকী অনেক প্রশ্নের উত্তরে অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। প্রথম সারির তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে থাকা যাবতীয় জিনিসপত্র তদন্তকারী সংস্থাকে হস্তান্তর করে দেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে। অনুমান, নিরাপত্তার খাতিরে তাঁকে রাজ্যের বাইরে কোথাও নিয়ে যেতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সূত্রের খবর তেমনই।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারি নিয়ে চলছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করে বদান্যতা দেখিয়েছে ইডি, মত সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরী অবশ্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেপ্তারিকে হিমশৈলের চূড়া বলেই মনে করছেন।
বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, নথি, মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তার মাধ্যমে আরও নানা তথ্য সামনে আসবে।
তবে এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই বলে টুইটে আগেই জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।