দুই

দাদু যখন স্কুলে পড়তেন ভূগোলের ক্লাসে ভারতবর্ষের যে মানচিত্র দেখানো হতো তার মাঝে কোনও কাঁটাতার ছিল না। সেই মানচিত্রের স্বপ্ন আজও দেখি। বাস্তবে যা দেখিনি স্বপ্নেই প্রাণভরে দেখি।

স্বপ্নের কথা যখন এল তখন দুর্গাপুজোর কথা না বললেই নয়। দাদু শেষদিন পর্যন্ত ভাবতেন দুর্গাপুজো আবার হবে আমাদের বাড়িতে। ছোটবেলায় দেখেছি বাড়ির কেউ অষ্টমীর অঞ্জলি দিত না। সবাই ওইসময় বাড়ির পুজোর কথা আলোচনা করত। তার প্রধান কথা খাওয়া ও খাওয়ানো। শাক্তবাড়ির পুজোতে অঢেল মাছ মাংসের আয়োজন। নিজেদেরই তিনটে পুকুর কাজেই মাছের কমতি নেই। কলকাতা থেকে পুজোর জামাকাপড় আসত। চারদিন ধরে গ্ৰামে দীয়তাং ভুজ্যতাং।

এসব আলোচনার শেষে দাদুর ছলছল চোখে সংযোজন… নিজের বাড়ি ছাড়া মায়ের অঞ্জলি আর কোথাও দেব না। বড় হয়ে দেখলাম দাদুর দেশ কখন যেন আমার দেশ হয়ে গেছে। দুঃখগুলোও আমার দুঃখ। ইতিমধ্যে বাবা একাত্তর সালে ঘুরে এসেছেন,সে গল্প আর ফুরোয় না। আমার ইচ্ছেরা পোক্ত হয়,মনের ভিতর তাদের শিকড় চারিয়ে দেয়।

কি করব,কার সঙ্গে যোগাযোগ করব কিছুই জানা ছিল না। শুধু জানতাম একদিন যাবই যাব দেশের বাড়ি। ততদিনে দুনিয়ায় ইন্টারনেট এসে গেছে। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপে মানুষ নতুন জগতের সন্ধান পেল। কত দেশের কত লোক। আমার মনে সেই ইচ্ছেরা ডানা মেলে। বাগেরহাটের লোক খুঁজে বেড়াই। বদল ঘটেছে ওদেশেও। এতদিন জানতাম আমি খুলনা জেলার মেয়ে,এখন আমি বাগেরহাটের মেয়ে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা হয়েছে তিনটি আলাদা জেলা।

(চলবে)

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version