(প্রথম পর্ব)

এবার তবে নালিশ করি। ননী চুরি মাখন চুরি… কে করবে নালিশ আর কার কাছেই বা করবে! মাথায় ঘোল ঢালার ঘোল টুকুও যে বাড়ন্ত। ছেলেপুলে ডেকে শিকেয় উঠে হাঁড়ির দই পুরোটা সাবাড় করে তারপর যশোদা মায়ের কাছে মিষ্টি বকুনি। তিনি যে গোপাল ঠাকুর। চুরিকে গ্লোরিফাই করা কাকে আর বলে! যমুনার জলে গোপিনীরা নাইতে নেমেছে;  সেখানেও সেই কেষ্টর লীলা। নদীর ধারে ছেড়ে রাখা বসন পুঁটলি বেঁধে নিয়ে উঠে গেলো সেই তমালের মগডালে। বোঝ এবার। আহা এও যে কৃষ্ণলীলা। ছবি হয়ে দেয়ালে দেয়ালে ঝুলছে। সকাল বিকেল সেই ছবিতে পেন্নাম ঠুকে তবেই প্রাত্যহিক কর্ম শুরু।

উত্তীয় তো শ্যামার প্রেমে গদগদ হয়ে  ‘সুখেন দাস’-এর সিনেমার দু-চামচ স্যক্রিফাইস গুলে খেয়ে কোটালকে কোঁচর থেকে সোনার আংটি বের করে বলেই দিলেন ‘এই দেখো রাজ অঙ্গুরী’। ব্যাস আর যায় কোথায়;  সোজা গরাদে চালান। ‘চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা; যদি না পড়ে ধরা’ … আমার আত্মীয়া বিদেশে ছেলের কাছে ছুটি কাটাতে  গেলো বাড়ি ঘর তালা বন্ধ করে। দুদিন যেতে না যেতেই তালা ভেঙে জামাকাপড়, বাসন কোসন,  এমনকি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারটাও মানে যথাসর্বস্ব ফাঁক করে দিয়ে গেছে। আমি আবার সরল মনে বলতে গেছি পুলিশ ডাকুন। চোর ধরা পড়তে পারে আর ফেরত পেলেও পেতে পারেন চুরি যাওয়া মালপত্র।

আমার শাশুড়ি মা বেশ ‘টু দি পয়েন্ট’ কথা বলতেন। তখনি পাশ থেকে বললেন ‘হ্যাঁ বৌমা,  রবি ঠাকুরের নোবেলও উদ্ধার হয়েছে আর তোমার মামিশাশুড়িও তার জিনিষ ফিরে পেলেন বলে!’ আমি চুপ। ঠিক সেই সময়েই নোবেল চুরি নিয়ে চারদিক তোলপাড় হচ্ছিলো। যাক সে সব ধামা চাপা পড়ে গেছে,  ল্যাঠা চুকেছে। আমার একজন প্রতিবেশী যিনি পরমাত্মীয়ও বটে,  ছোট্ট ছেলেটার ইস্কুলে ভর্তির ইন্টারভিউতে  ‘বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ছবি দেখিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করলেন বলোতো ইনি কে! ছেলেটি চটপট উত্তর দিলো ‘লিচু চোর’। ব্যাস কেল্লাফতে। এক উত্তরেই ইস্কুলে ভর্তি হয়ে গেলো। একবার একটি নামকরা পত্রিকায় এই নিয়ে দারুণ গল্প পড়েছিলুম। ইন্টারেস্টিং গল্প। পকেটমার, চোর এদের একটা ট্রেনিং সেন্টারের গল্প, সেখানে অতি সূক্ষ্মতার সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে পকেটমারি আর চুরির ট্রেনিং দেওয়া হয়। সাফল্যের সঙ্গে এই বিদ্যা কাজে লাগিয়ে তারা কাজ হাসিল করে অথচ ধরা পড়ে না এবং চুরির রাজ্যে তারা যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে। এমন কত খবরই তো বাতাসে উড়ে বেড়ায়। কে বিশ্বাস করবে আর কে করবে না তা নিজেরাই ঠিক করুক।

চুরির ভ্যারাইটি প্রচুর। ঘটি, বাটি,  হাঁড়িকুঁড়ি,  বাড়ি ঘর মায় চাকরি,  চুরির উপকরণের শেষ নেই। যেমন  প্রেমে ‘মন চুরি’। এ ওর আর ও এর। পাল্টাপাল্টির ঘটনা বা এর নাম চোরাচুরি। প্রেমিক প্রেমিকা যুগল কে ভাসিয়ে নিয়ে যায় প্রেমের জোয়ারে। এই যে পাহাড়ে বরফে বেড়াতে প্রাণ উড়ুউড়ু,  অথচ জায়গা বুঝে ফস করে বলে দিলুম আর যাবো না পাহাড়ে,  থাকবো ঘরে নাগাড়ে… ব্যাস হই হই করে উঠলো ভাই বোনেরা। ‘তোমাকে আমরা হাড়ে হাড়ে চিনি,  এ হলো ভাবের ঘরে চুরি! আমাদের পেয়েছোটা কি?’  আবার সেই হাতে নাতে ধরা পড়ে গেলুম।  পালানোর আর পথ পাই না! আবার হেড অফিসের বড়ো বাবুকে সামলানো দায় হয়,  যখন তার নিজস্ব ‘গোঁফ গিয়েছে  চুরি’ বলে হাত পা ছুঁড়ে, শোরগোল ফেলে সে এক বিষম কান্ড ঘটায়। বিংশ শতাব্দী এক অর্থে প্রযুক্তির রমরমার যুগ। সেকেন্ডে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভার্চুয়ালি পৌঁছে যাওয়া যায়! এখনকার প্রজন্ম যেন ডিজিটাল পৃথিবী নিয়ে লোফালুফি খেলে,  সমস্ত দুনিয়া হাতের মুঠোয়। যেমন মডার্ন টাইমস-এ গ্লোব নিয়ে চার্লির শূন্যে ছুঁড়ে খেলার বিস্ময়কর অভিব্যক্তি দেখে কল্পনাও করতে পারিনি ক্রমশঃ আমরা কোন দুনিয়ায় এগোচ্ছি। আর এই ডিজিটাল দুনিয়ার চুরিও ভয়ংকর। এক এক জন রীতিমত ট্যালেন্টেড চোর। ডেটা হ্যাক করে মানে সোজা বাংলায় চুরি করে কপর্দক শূন্য করে দিতে পারে যে কোনো কাউকে যখন তখন। সারা জীবনের গবেষণার ফসলকে তুড়ি মেরে চুরি করে নিজের আসন পোক্ত করে নিতে পারে এই সব ডিজিটাল তাবড় তাবড় বুদ্ধিমান চোর সম্প্রদায়।

(চলবে)

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version