কলকাতা ব্যুরো: আবার শর্তসাপেক্ষে সাগর মেলা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তার দেওয়া আগের কিছু শর্তে অদল বদল করেছে। প্রথমত আগে যে তিনজনের কমিটি করা হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির সদস্য সচিবকে রেখে নজরদারি কমিটি করেছে হাইকোর্ট।
এর আগে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ গোটা সাগরদ্বীপ নোটিফাইড এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে রাজ্য সরকার কপিল মুনির আশ্রম এবং সংলগ্ন মেলা মাঠকে নোটিফাইড এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। হাইকোর্ট ফের নির্দেশ দিয়ে জানিয়ে দিল, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে গোটা সাগরদ্বীপ নোটিফাইড জোন হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
পাশাপাশি এখন থেকে ডবল ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া হয়েছে এমন ছাড়পত্র দেখাতে পারলেই তাদের সাগরদ্বীপে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, ট্রেন বা বিমানে ওঠার ক্ষেত্রে যেমন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে rt-pcr টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ দেখাতে হয়, এক্ষেত্রে কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু বাস্তবে এইসব জিনিস কে দেখবে আর সাগর মেলার মত একটা বিশাল এলাকাজুড়ে চলা মেলায় তা বাস্তবে দেখা সম্ভব কিনা সেই প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবী ও চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে রাজ্যের মুখ্য সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৭ জানুয়ারি ও ১০ জানুয়ারির অন্যান্য যাবতীয় নির্দেশ কার্যকর করতে হবে যদি বিধি লংঘন হয়, তাহলে ওই কমিটি তৎক্ষণাৎ মেলা বাতিলের জন্য রাজ্যের কাছে সুপারিশ করতে পারবেন।
হাইকোর্টের নতুন করে সেই একই রায় নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ এবং প্রশ্ন বাড়ছে নাগরিক সমাজে। নাগরিকদের বক্তব্য, রাষ্ট্র যেখানে নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা ভাবছে না, সেখানে আদালতের কাছে মানুষ বিচার চাইছে। বর্তমানে রাজ্যে সুনামির মতো করোনা বাড়ছে, তা অস্বীকার করছে না রাজ্য সরকার। অথচ সেই সরকারই কোনভাবে মেলা বন্ধ করার ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছেনা।হাইকোর্টে দ্বিতীয়বার মামলাতেও একটা বিষয় স্পষ্ট যে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। এই অবস্থায় কেন আদালত শুধু কিছু শর্ত দিয়েই মেলা চালানোর সুযোগ দিচ্ছে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
পাশাপাশি নাগরিকদের একাংশ মনে করছে, সাগর মেলার অবস্থা সম্পর্কে ও এর ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা না থাকায় এমন সব শর্ত দেওয়া হচ্ছে, যেগুলি বাস্তবে কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব কারণ কাতারে কাতারে মানুষ বিভিন্নভাবে এসে সাগরের যাওয়ার জন্য কাকদ্বীপ লট এইট থেকে ওকে হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে বা ভেসেলে ওঠেন। সেখান থেকে কচুবেড়িয়া ঘাট এ নামার পরেও দৌড়োদৌড়ি চলে বাস বা অন্যান্য যানে ওঠার জন্য। তারপরে কপিল মুনির আশ্রম সংলগ্ন মাঠ। এত লোকের ভিড় সামাল দেওয়া যেখানে দুষ্কর, পদপিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় পদে পদে, সেখানে কিভাবে দেখা হবে কারা নিয়েছেন দুটো ভ্যাকসিন অথবা rt-pcr পরীক্ষার রিপোর্ট কি?
তাছাড়া আরো প্রশ্ন তুলছেন আইনজীবীরা। তাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের ধর্মীয় স্থানে ৫০ জনকে নিয়ে উৎসব করার নির্দেশ হাইকোর্ট কার্যকর করতে যদি বলেই থাকে, তাহলে আবার কেন ডবল ভ্যাকসিন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে প্রথম ৫০ জন যাদের দুটি ভ্যাকসিন রয়েছে এবং ৭২ ঘন্টা আগে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, তাদেরকেই ঢুকতে দিতে বলছে কোর্ট? এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারো।