বাবর আলিকে চেনেন আপনারা? না চেনারই কথা। সে তো আর মন্ত্রী-সান্ত্রী রাজা-উজির নয়। সে নেহাতই একটা গরিব ঘরের সাদামাটা ছেলে। বয়স তার মোটে ছাব্বিশ, বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার কাছে ভাবতা গ্রামে। কিন্তু এর মধ্যে সে এক অনন্য নজির গড়ে তুলেছে। BBC স্বীকার করেছে যে সে হল বিশ্বের কনিষ্ঠতম হেডমাস্টার।
হেডমাস্টার? কোন স্কুলে! এইটুকু ছেলেটা যখন আরো পুচকি ছিল, সেই ক্লাস ফাইভে পড়ত, তখন থেকেই সে নিজের বাড়ির উঠোনে খুলে ফেলেছিল আস্ত একটা স্কুল। তখন বয়স তার ন’বছর। অবাক লাগছে? কিন্তু এটাই সত্যি। তার ভাই বোন আর পাড়ার কয়েকটা তারই বয়সী বাচ্চাকে সে পড়াত। একদিন দুদিন নয়, প্রত্যেকদিন সে স্কুল থেকে যা পড়ে আসতো সেটাই বিকেলবেলা তাদের পড়াতো।
এমনি করে তার স্কুলের ছাত্রছাত্রী বাড়তে লাগল। টাকাপয়সা? যেখানে মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেখানে কে পয়সা দিয়ে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাবে বলুন ? অতএব, ফ্রি। উঠোনের পেয়ারা গাছের নিচেই গড়ে উঠল বিনামূল্যের স্কুল আনন্দ শিক্ষানিকেতন। দিনে দিনে বাড়তে লাগল পড়ুয়ার সংখ্যা। সে হয়ে উঠল এলাকার খুদে মাস্টারমশাই।
পরে, ২০০৯ সালে তার স্কুল উঠোনের পেয়ারাতলা থেকে উঠে যায় পাকা বাড়িতে। সেখানে এখন দশজন শিক্ষক-শিক্ষিকা যাদের মধ্যে ছ’জনই বাবরের স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়া।
আমরা তাকে সেভাবে চিনিনা। কিন্তু তার এই ঐতিহাসিক কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে বি বি সি, তাকে বিশ্বের কনিষ্ঠতম হেডমাস্টারের স্বীকৃতি দিয়ে। সি এন এন ,আই বি এন নিউজ চ্যানেল তাকে দিয়েছে Real hero of India award( রিয়াল হিরো অফ ইণ্ডিয়া) NDTV দিয়েছে Indian of the year award (ইন্ডিয়ান অফ থে ইয়ার আওয়ার্ড)। ফোর্বস এশিয়ার তালিকা অনুযায়ী সে জায়গা করে নিয়েছে অনুর্ধ ৩০ বছর বয়সী এশিয়ার প্রথম ত্রিশ জনে বিখ্যাতদের মধ্যে। বি বি সি তাকে আরো দিয়েছে Education leadership award ( এডুকেশন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড)।
এখন সে একজন সফল মোটিভেশনাল স্পিকার। দেশ বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ও নানান সংস্থা তাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। পৃথিবী শুনতে চায় তার কথা, তার ভাবনা। আর শ্রদ্ধায় মাথা ঝোঁকায় রবীন্দ্রনাথ-বিবেকানন্দের বাংলার প্রতি।
সি বি এস এই তে ক্লাস টেনের ইংলিশ পাঠক্রমে বাবর আলির কথা পড়ানো হয়। কর্ণাটকের পাঠ্যপুস্তকেও জায়গা করে নিয়েছে সে। শুধু আমরাই অনেকে তার কথা জানিনা।
মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন আর বানুয়ারা বিবির এই ছেলেটার নিজস্ব উইকিপিডিয়া পেজ আছে। আছে নিজস্ব ওয়েবসাইটও ( anandasikshaniketan.in )।