তাঁকে এদেশের সব থেকে এক্সপেনসিভ মহিলা চিত্রশিল্পী বলা হয়ে থাকে। কিন্তু জীবিত অবস্থায় তিনি তাঁর আঁকা মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে সমর্থ হয়েছিলেন, তাও মাত্র ২৫০ টাকায়। বছর দুই আগে তাঁর আঁকা ‘দ্য লিটল গার্ল ইন ব্লু’ ছবিটি বিক্রি হল প্রায় ১৯ কোটি টাকায়। এরও কিছুদিন আগে তার একটি পেইন্টিং “ভিলেইজ সীন” বিক্রি হয় ১৬ লাখ ডলারে। এই ঘটনার পর আমরা তাঁর আর ভ্যান গঘের মধ্যে একটা দারুন মিল খুঁজে পাই। প্রসঙ্গত,গগাঁও জীবিত অবস্থায় মাত্র একটি ছবি বিক্রি করতে পেরেছিলেন।

তিনি নিজে তাঁর নিজের আঁকা ছবি সম্পর্কে ছিলেন দৃঢ় বিশ্বাসী। নিজেই নিজের শিল্পকর্ম নিয়ে বলেছিলেন,“আমার আঁকা ভালো ছবির সংখ্যা অল্প। সবাই বলছে আমি দ্রুতই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এমনকি সেই মানুষটাও বলছে যার সমালোচনা আমার কাছে সবচেয়ে দামী- তা হল আমি নিজে।” আবার তিনিই বলেন, ‘Europe belongs to Picasso, Matisse and Braque and many others. India belongs only to me.”

তার একাধিক বিখ্যাত ছবির মধ্যে একটি হল “স্লীপ”। এক কথায় ছবিটি হল-ধবধবে সাদা বিছানায় একজন নগ্ন যুবতী ঘুমিয়ে আছে। পৃথিবীতে অসংখ্য ন্যুড ছবি আছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু ছবি বিখ্যাত। কিন্তু বিখ্যাত ন্যুড ছবিগুলির মধ্যে “স্লীপ” অবশ্যই অনন্য। ছবিটির শিল্পমান বিচারকরতে গেলে আর এক বিখ্যাত ফরাসি চিত্রশিল্পী Amedeo Modigliani’র Red Nude এর তুলনা চলে আসে। কেবল তাই নয়, জর্জিনো, এদুয়ার মনে, তিসিয়ান, বত্তিচেল্লি, রেমব্রান্ট থেকে শুরু করে পৃথিবী বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের আঁকা ন্যুড ছবির মধ্যেও এটি যেন আলাদা। কারণঅন্য শিল্পীদের ন্যুড ছবির পরিবর্তে তাঁর তুলির ব্যঞ্জনা যেন অন্য রকম সুর তুলে চারপাশকে এক গভীর নিস্তব্ধতায় ভরিয়ে দেয়। প্রসঙ্গত আরও একটি কথা বলা যায়, রেমব্রান্ট তাঁর বাথসেবায় যেন কৌশলেনারীর গোপনাঙ্গলুকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তিনি তাঁর “স্লিপ”-এ নারীকে এঁকেছেন সম্পূর্ণ নিজস্বতায়, রাখঢাকহীন অকৃত্রিমতায়- যেখানে নগ্নতার মধ্যে ঘুমের সৌন্দর্য কতটা মোহনীয় ও সুখকর হতে পারে তা অনুভব করা যায়। এছাড়াও তাঁর ন্যুড পেন্টিং নিয়ে Recling Nude, Professional Model, Nude Group, Two girls সিরিজ উল্লেখযোগ্য।

নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। তাঁর ভাবনার গতি প্রকৃতি ছিল কয়েক প্রজন্ম আধুনিক। একদিকে তিনি যেমন নিজের জীবন দিয়েউদাহরণ স্থাপন করেছিলেন অন্যদিকেতিনি বিভিন্নভাবে শিল্পকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, নানা জটিলতা আর প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তাঁর অনন্য সাহসী, চিত্তাকর্ষক ও শৈল্পিক পরিচয়ে তাঁর সৃষ্টির থেকেও বেশি আলোচিত হয়েছেতাঁর এক রোখা ঠোট কাটা স্বভাব, শারীরিক সৌন্দর্য ও ব্যক্তিগত যৌনজীবন। আবার কখনও তাঁকে ছাপিয়ে তাঁর বিশেষ পরিচিতি হয়েছে ‘ভারতীয় ফ্রিদা কালো’ হিসেবে।

ভারতীয় এই চিত্রশিল্পী অমৃতা শেরগিলঅবশ্যনিজেকেযৌনতার প্রতিমূর্তি হিসাবে প্রকাশ করতেন। প্রেম প্রণয় ছিল তার জীবনের উৎস। নগ্ন হওয়া নিয়ে বা যৌনতার ব্যাপারে অমৃতার কোন রাখ ঢাক ছিল না, অমৃতা যে ধারণায় বিশ্বাস করতেন তা হলো – Naked came I out of my mother’s womb and naked shall I return thither.তার পুরুষ বন্ধুও ছিলএকাধিক। যাদের সঙ্গে ছিল তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। অমৃতার সঙ্গে জওহরলাল নেহেরুর দেখা হয় লাহোরে, বলা হয়ে থাকে সেখানে তারা তিন দিন নির্জনে একান্তে ছিলেন। নিজের পুরুষ বন্ধুদের পোট্রেট আঁকা তার ছিল শখ। একজন সাংবাদিক একদিন অমৃতাকে প্রশ্ন করছিলেন কেন তিনি নেহেরুর ছবি আঁকেন নি? উত্তরে লাজুক হেসে অমৃতা বলছিলেন Because he is too good looking! গুড লুকিং পুরুষদের প্রতি অমৃতার ছিল দুর্নিবার আকর্ষন।

অমৃতার ভাইপো শিল্পী ভিবান সুন্দরমের সঙ্গেও তাঁর অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে অমৃতাগর্ভবতী হয়ে পড়েন।কিশোরী বয়সে অমৃতা আকবরপুরের নবাব ইউসুফ আলী খানের কাছ থেকে যৌন অসুখ গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। লাহোরে বসবাস কালে তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক খুশবন্ত সিং। অমৃতা বিয়ে করেছিলেন ভিক্টর ইভানকে। জানা যায় দ্বিতীয় গর্ভপাতের সময় অমৃতা স্বামীর হাতেই মারা যান, তখন তার মাত্র ২৯ বছর বয়স।

অমৃতা প্রথাবিরোধী হয়তো সে কারণেই তাঁর সৃষ্টি চারিদিকে আলোচনা-সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে, তবে তিনি আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন কেবল ব্যক্তি জীবনে নয়, তাঁর তুলির আঁচড়ের টানে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version