তাঁর আসল নাম ছিল পলিক্সেনা। নিজের নাম বদলে রেখেছিলেন মার্তালে। পরবর্তীতে রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের সঙ্গে বিয়ের পরে তিনি নিজের নাম রাখেন অলিম্পিয়াস। ওই বছরই তাঁর গর্ভে আলেকজান্ডারের জন্ম হয়। বছরের পর বছর তিনি সবাইকে এটা বুঝিয়েছেন যে আলেকজান্ডার দেবগণ ও মানবজাতির পিতা জিউসের সন্তান। দ্বিতীয় ফিলিপের বহুগামিতা ও তাঁর প্রতি সন্দেহের কারণে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক সুখকর ছিল না। সম্পর্ক আরও খারাপ হয় যখন দ্বিতীয় ফিলিপ অলিম্পিয়াসের সঙ্গে বিয়ের ২০ বছর পর তাঁর সেনাপতির ভ্রাতুষ্পুত্রী ক্লিওপেট্রা ইউরিদিকেকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের কারণে রাজ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে সংশয়ে পড়েন ক্লিওপেট্রা। ক্লিওপেট্রার সন্তানের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিলো। কারণ এই সন্তান বাবা-মা উভয়ের দিক থেকেই মেসিডোনিয়। এদিকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে আলেকজান্ডার অনিশ্চিত হয়ে পড়লে অলিম্পিয়াস ক্লিওপেট্রা ইউরিদিদি ও তার দুই ছেলেমেয়েকেই হত্যা করেন। কেবল তাঁরা নয়, সিংহাসনের দাবিদার অন্য কোনো উত্তরাধিকারীকেই অলিম্পিয়াস আর জীবিত রাখেন নি। আলেকজান্ডারের প্রতিদ্বন্দ্বী সবাইকেই তিনি বিষ খাইয়ে, আগুরে পুড়িয়ে অথবা অন্য কোন উপায়ে এমনকি স্বামী ফিলিপের হত্যার পিছনেও ছিলেন অলিম্পিয়াস বলে মনে করা হয়। রাজা দ্বিতীয় ফিলিপস মেয়ে ক্লিওপেট্রার বিয়ের দিন দেহরক্ষীবাহিনীর হাতে খুন হয়েছিলেন। এছাড়া অলিস্পিয়াস তাঁর বিরোধী অসংখ্য নেতা ও সৈনিককে হত্যা করেন। যদিও সিংহাসনে বসেছিলেন আলেকজান্ডার।

আলেকজান্ডার সবসময় তাঁর মায়ের কথামতো চলতেন। মায়ের পরামর্শ ছাড়া কোনো কাজই করতেন না আলেকজান্ডার। অলিম্পিয়াস ছেলের রাজ্য নিশ্চিত করতেই রক্ত ঝরিয়েছেন। প্রাচীন গ্রীক রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত অলিম্পিয়াস ছিলেন খুনে, প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রথম নারী।জনশ্রুতি আছে যে অলিম্পিয়াস এবং দ্বিতীয় ফিলিপ উভয়েই তাদের বিয়ের রাতে স্বপ্ন দেখেছিলেন যে তারা একজন শক্তিশালী বিশ্বনেতাকে গর্ভধারণ করবেন। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের জন্ম হয়। কথিত আলেকজান্ডারের জন্মের দিন, তাঁর মা অলিম্পিয়াস তাঁকে সবকিছুর রাজা করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তার জন্য তিনি যেকোনো কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন আর সেই ভাবেই আলেকজান্ডারের ক্ষমতাযর উত্থান শুরু হয়েছিল।অলিম্পিয়াস চাননি অন্য কেউ আলেকজান্ডারের সিংহাসনে আরোহণের পথে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াক। একজন সম্ভাব্য প্রতিযোগী ছিলেন তার সৎ ভাই ফিলিপ অ্যারিডিউস, যাকে অলিম্পিয়াস বিষ খাইয়ে গুরুতরভাবে আহত অবস্থায় রেখে যান। অলিম্পিয়াস তরুণ পুত্র আলেকজান্ডারকে তাঁর ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত করে তুলতে দাবি করেছিলেন যে তাঁরা গ্রীক দেবতা এবং ট্রোজান যুদ্ধের নায়ক অ্যাকিলিসের বংশধর। তাই আলেকজান্ডার তার পূর্বপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ট্রয় ভ্রমণ করেছিলেন এবং ধারণা করা হয় যে তিনি নিজের কাছে সবসময় ইলিয়াড রাখতেন।

আলেকজান্ডার ম্যাসেডোনিয়ার সিংহাসনে আরোহণের পরবর্তী ১৪ বছর ম্যাসেডোনিয়ান সাম্রাজ্য স্পেন থেকে ভারত পর্যন্ত ৩,০০০ মাইল বিস্তৃত ছিল। কিন্তু মাত্র ৩২ বছর বয়সে অসুস্থ হয়ে আলেকজান্ডার মারা যান। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর, অলিম্পিয়াস তাঁর নাতি চতুর্থ আলেকজান্ডারকে রাজা করতে চেয়েছিলেন। তবে, ধারাবাহিক উত্তরাধিকার যুদ্ধের পর ক্যাসান্ডার নামে একজন রিজেন্ট তার নাতির জায়গায় শাসন করেন। ধারণা করা হয়েছিল যে চতুর্থ আলেকজান্ডার বড় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাসান্ডার সিংহাসন হস্তান্তর করবেন। কিন্তু অলিম্পিয়াস আশঙ্কা করেছিলেন যে ক্যাসান্ডার ক্ষমতার উপর তার দখল বজায় রাখবে। তিনি এপিরাস থেকে তার নিজস্ব সেনাবাহিনী নিয়ে ম্যাসেডোনিয়া আক্রমণ করেছিলেন, অলিম্পিয়াসের সেনাবাহিনী ক্যাসান্ডারের প্রতি অনুগত শত শত লোককে বন্দী করেন এবং নির্মমভাবে মৃত্যুদণ্ড দেন। কিন্তু অলিম্পিয়াসের এই ম্যাসেডোনিয়া আক্রমণ ব্যর্থ হয় এবং ক্যাসান্ডার বেঁচে যান। এরপর তিনি অলিম্পিয়াসকে বন্দী করেন এবং প্রথমে তাকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন এবং মৃত্যুদণ্ড দেন।

ইতিহাসে আলেকজান্ডারের মা অলিম্পিয়াস হিংস্র, বর্বর, প্রতিহিংসাপরায়ন এবং ক্ষমতালোভী নারী হিসেবে পরিচিত, যার শেষ পরিণতি চিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। কথিত, আলেকজান্ডরের মৃত্যুর কয়েক বছরের মধ্যে রাজনৈতিক কারণেই কাসান্দার পুরো শহর অবরোধ করে অলিম্পিয়াসকে বন্দি করে ও মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সম্ভব হয়না। কারণ, সৈনিকরা তাদের রাজা মহান আলেকজান্ডারের মাকে হত্যা করতে অস্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত অলিম্পিয়াস যাদের হত্যা করেছিলেন তাদের পরিবারের লোকেরাই তাঁকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করে। তার সমাধি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এটাই ছিল প্রাচীন গ্রীসের খলনায়ক নারীর শেষ পরিণতি। ঐতিহাসিকেরা অলিম্পিয়াসকে বলে হিংস্র, বর্বর, প্রতিহিংসাপরায়ন এবং ক্ষমতালোভী নারী হিসেবে অভিহিত করেন ঠিকই কিন্তু তরুণ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের উপর তার প্রভাব না থাকলে, তিনি হয়তো কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারতেন না।
