রহস্যময়ভাবে মানুষের হারিয়ে যাওয়ার জন্য আটলান্টিম মহাসাগরের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল নামটি বিখ্যাত হয়ে আছে। কিন্তু তার চেয়েও ভয়ংকর রহস্যময় জায়গা হল আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেল। অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এবং রহস্যময় ঘটনাবলীর জন্য এটি বিশ্বব্যাপী আতঙ্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জায়গা থেকে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে, যাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। আলাস্কার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যা আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেল নামে পরিচিত। আমেরিকার আলাস্কা রাজ্যের অ্যানকোরেজ এবং জুনিওর মাঝামাঝি এই জায়গায় নিখোঁজ হওয়া মানুষদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা আইএফএল সাইন্সের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে অ্যানকোরেজ থেকে জুনিওরে যাওয়ার সময় একটি ছোট বিমান হারিয়ে যায়। ওই বিমানে দু’জন রাজনীতিবিদসহ মোট চার আরোহী ছিলেন। হঠাৎ করে বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার পরই আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেল সবার নজরে আসে। বিমানটি খুঁজে পেতে ওই সময় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। তবে বিমান এবং তার আরোহীদের আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরোহীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আমেরিকার আইনসভার প্রধান নেতা থমাস হেল বোগ। তিনি আবার ছিলেন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যা তদন্ত কমিটির সদস্য। হেল বোগ ও তার বিমান হঠাৎ করে হাওয়া হয়ে যাওয়ার পর এ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বের হয়।

কেন এই এলাকায় মানুষ বারবার হারিয়ে যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, সেখানে অদৃশ্য চুম্বকীয় শক্তি কাজ করে। আবার অনেকের ধারণা, এ অঞ্চলে এলিয়েনের উপস্থিতি আছে। তবে গবেষকদের মতে ওই অঞ্চলটি বেশ বিস্তৃর্ণ এবং বড়। সেখানে অনেক জনহীন এবং প্রাকৃতিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে। এই কারণে আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেলে মানুষ হারিয়ে গেলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই জায়গাটিকে বলা হচ্ছে, নিখোঁজ মানুষদের সবচেয়ে রহস্যজনক জায়গা। বিশ্বের আর কোথাও মানুষদের রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার এত ঘটনা ঘটে না। ১৯৭২ সালে প্রথমবারের মতো জায়গাটি আলোচনায় আসে। জানা যায়, ১৯৭০ সাল থেকে আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেল এলাকায় নিখোঁজ হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ভিনগ্রহের বাসিন্দা ইউএফও আর বিগ ফুট সেখানে দেখা যাওয়ার নানা কাহিনি রয়েছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতোই এই অঞ্চলের শক্তিশালী তড়িৎ চুম্বকীয় বিকিরণ ও ভিনগ্রহের প্রাণীদের এর জন্য দায়ী করেছেন কেউ কেউ।

আলাস্কা ট্রায়াঙ্গলের অঞ্চলটির দক্ষিণে দুটি এলাকা হচ্ছে জুনাও এবং অ্যাংকোরেজ এবং উত্তরে উপকূলীয় শহর উটকোয়েগভিগ অবস্থিত। ত্রিভুজাকৃতির এলাকাটি আলাস্কা ট্রায়াঙ্গল নামে পরিচিতি পেয়েছে। আলাস্কার অন্য সব অঞ্চলের মতো এখানেও জনবসতি কম। কিন্তু এখানে মানুষ চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার হার আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলের দ্বিগুণের বেশি। অসংখ্য অস্বাভাবিক এবং রহস্যময়ী ঘটনার গল্পও শোনা যায় এই এলাকায়। ১৯৭০ সাল থেকে গত ৫৪ বছরে জায়গাটি থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছেন ২০ হাজার মানুষ। অবশ্য এই সংখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। রহস্যঘেরা অতিপ্রাকৃত এই এলাকাটি নিয়ে প্রচলিত আছে নানা ধরনের ভয়ের গল্প। এখানে থাকতে পারে সাসকুয়াচ বা বিগফুটের মতো প্রাণীদের বিভিন্ন শহরে আতঙ্ক ছড়ানোর গল্প। যেমন কেনাই পেনিনসুলার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত পোর্টলক নামের এক শহরকে ঘিরে জন্ম নেওয়া সেই কাহিনিটির উদাহরণ টানা যায়। শহরটি ১৯৫০- এর দশকে পরিত্যক্ত হয়। কথিত আছে নানতিনাক নামের একটি অচেনা প্রাণী শহরের বাসিন্দাদের আক্রমণ করে মেরে ফেলছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেল থেকে অনেক মানুষ রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও আলাস্কার কেবল এক শতাংশ এলাকায় মানব বসতি আছে, তারপরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য যেকোনো রাজ্যের তুলনায় এখানে মানুষ নিখোঁজের হার বেশি। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউয়ের তথ্য অনুয়ায়ী, এই সংখ্যা প্রতি লাখে ৪২ দশমিক ১৬ জন। এদিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে অ্যারিজোনা। সেখানে সংখ্যাটি লাখে ১২ দশমিক ২৮। আর দেশটির অন্য রাজ্যে এমন রহস্যজনক নিখোঁজের গড় হচ্ছে সাড়ে ছয়। প্রথম যে নিখোঁজের ঘটনা আলাস্কা ট্রায়াঙ্গেলের প্রতি মানুষের মনে কৌতূহলের জন্ম দেয় সেটি ঘটে ১৯৭২ সালে। মার্কিন কংগ্রেসম্যান হেল বোগস, নিক বেগিচ, তাদের একজন সহকারী এবং পাইলট সন্দেহভাজন উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পরে নিখোঁজ হন। অ্যাংকোরেজ থেকে জুনাও যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ৪০ দিনের অনুসন্ধান অভিযানে কারও দেহ তো পাওয়া যায়ইনি, এমনকি মেলেনি উড়োজাহাজটির কোনো ধ্বংসাবশেষ।

 
		 
									 
					