যুগ যুগান্ত ধরে মেয়েরা পুরুষের পাশাপাশি থেকে মানবসভ্যতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিটি ধর্ম মেয়েদের সমান অধিকার ও সম্মান দেওয়ার কথা বলে। মেয়েদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আইনের চোখে অপরাধ। সাধারণত নারী মানে সহজ-সরল এমন একটা ধারণা সবার মধ্যেই আছে। তারা একটু কোমল, শান্ত হবে, তাদের ব্যবহারে সেই শান্ত কোমল ভাবটা থাকবে এরকমই ধারণা সবার।আর এই কারণেই নারীদের বলা হয়ে থাকে কোমলতা, ভালবাসা ও শান্তির প্রতীক। প্রকৃতিই তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলি দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে, সেটাও কম নয়। নারী যদি হিংস্র বা কুখ্যাত কোন খুনি হয় বা হয়ে ওঠে, তাহলে আমাদের মনে তার ভয়াবহ আচরণ ব্যতিক্রম নয় ভয়ঙ্কর হিসেবেই দাগ কাটবে। এই পৃথিবীতে এমন নারী রয়েছেন যাদের নৃশংসতা ও হিংস্রতা সবকিছুকে হার মানায়। কেড়ে নেয় রাতের ঘুম। যারা ইতিমধ্যেই কুখ্যাত নারী হিসেবেই পরিচিত হয়েছে তাদের গা শিউরে ওঠা কাহিনি সবাইকে চমকে দিয়েছে। সেই রকমই একজন নারী হলেন ক্যাথেরিন নাইট এর কাহিনিও লোমহর্ষক।

অস্ট্রেলিয়ার ক্যাথরিন নাইটকে বিশ্বের ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম একজন নারী হিসেবেই গণ্য করা হয়, যাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল মৃত্যুর বিধান না থাকায়। তার বাবাও ছিলেন একজন মদ্যপ। শোনা যায় তিনি তার স্ত্রীকে দিনে ১০ বার পর্যন্ত ধর্ষণ করেছিলেন। বাবার মতো মেয়ে ক্যাথরিনও অন্যায়ের পথে নেমেছিলেন। জানা যায় ক্যাথরিন তার প্রথম স্বামীর দাঁত উপড়ে ফেলেছিলেন। এই রকম একটা পর ঘটনা থেকে ক্যাথরিনের হিংস্র ও খুনী মানসিকতার প্রমাণ আসতে শুরু করে। এরপর যখন দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে ক্যাথরিনের ঝামেলা শুরু হয় তখন ক্যাথরিন তার স্বামীর পোষা একটি কুকুরের বাচ্চার জিব কেটে নেন এবং পরে কুকুরের চোখ দুটিও তুলে ফেলেন। ক্যাথরিন যখন এই ধরণের ঘটনা একটার পর একটা ঘটাচ্ছেন তারই মধ্যে জন চার্লস প্রাইস নামে একজনের সঙ্গে ক্যাথরিনের গোপন সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

জন চার্লস প্রাইস ছিলেন প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক। হয়তো ক্যাথরিন সেই কারণেই প্রাইসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। অন্যদিকে প্রাইস কিন্তু ক্যাথরিনের হিংস্রতা সম্বন্ধে আগে থেকেই অবহিত ছিলেন। তারপরও সেই সম্পর্ক দানা বেধে ওঠে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্রাইসের সঙ্গে ক্যাথরিন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। সেই দ্বন্দ্ব একটা পর্যায়ে এমন জায়গায় চলে যায় যে ক্যাথরিন প্রাইসকে ৩৭ বার ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এখানেই থেমে থাকে না ক্যাথরিনের হিংস্রতা, এরপর ক্যাথরিন প্রাইসের মৃতদেহের চামড়া ছাড়িয়ে বেডরুমের দরজার পেছনের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। শুধু তাই নয়, প্রাইসের মৃতদেহ থেকে মাথা কেটে নিয়ে সেটা দিয়ে স্যুপ রান্না করে বাচ্চাদের জন্য রেখে বাইরে চলে যান। কিন্তু বাচ্চারা বাড়ি ফেরার আগেই পুলিশ এসে হতভাগ্য প্রাইসের মরদেহ উদ্ধার করে। তখন মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় তাকে প্যারল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

কুখ্যাত খুনিদের মতো একাধিক খুন তিনি করেননি। করেছিলেন একটি খুন। তবে ওই একটি খুনের নৃশংসতা এবং বিভীষিকার কারণেই অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ঘৃণিত অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। অস্ট্রেলিয়ার টেনটারফিল্ডে ক্যাথরিনের জন্ম। ক্যাথরিনের মা বারবারা রাউহান বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বামীর বন্ধু কেন নাইটের সঙ্গে। সেই সম্পর্ক অনেক দূর অবধি গড়িয়েছিল। গর্ভবতী হয়ে পড়েন বারবারা। জন্ম নেন ক্যাথরিন। ক্যাথরিন দাবি করেছিলেন, পরিবারের বেশ কয়েক জন সদস্য বছরের পর বছর তাকে যৌন নিপীড়ন করেছিলেন। ক্যাথরিন নিজের ওপর হওয়া নির্যাতনের ঝাল স্কুলে অন্য বাচ্চাদের ওপর মেটাতেন। বাকি বাচ্চাদের মারধর করা এবং ভয় দেখানোর অপরাধে ক্যাথরিনকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরিবার থেকে তাকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজ ছেড়ে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ক্যাথরিন একটি কসাইখানায় কাজ করতে শুরু করেন। মাংস কাটার কাজ ক্যাথরিন এতটাই পছন্দ করতেন যে, তিনি নাকি নিজের বিছানার কাছে সব সময় কসাইয়ের ছুরির একটি সেট ঝুলিয়ে রাখতেন। ক্যাথরিনকে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ছাড়া পেয়েও তার চরিত্রের বদল হয়নি। মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে ফেরার পর পরই এক গাড়ি মেকানিককে খুন করার চেষ্টা করেন ক্যাথরিন।