অম্লান কুসুম ঘোষ, রাজ্য পুলিশের কর্তা
কয়েকবছর আগের কথা।বছর চারেক হবে। সন্ধ্যার পর মেলার মাঠ অন্ধকারে ঢেকে থাকতো। আর অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানের মাহাত্ম্য তো সকলেরই জানা। মাঝে মাঝে বিশ্বভারতীর সিকিউরিটির গাড়ি টহল দিতো বটে, তবে সেটা খুব একটা কাজের হয়ে উঠেনি। তারপর শান্তিনিকেতন থানাও নেমে পড়ল কাজে।৷ না, তাতেও ফলপ্রসূ হলো না। অতএব একটাই উপায়, অন্ধকার দূর করা। আলো থাকলেই ভালো মানুষেরা আসবে,ভালো কাজ হবে,খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটি, গল্পকথা। তারপর অনেক চেষ্টা, অনেক আবেদন নিবেদন, অনেক চেষ্টাচরিত্র। চোখের সামনে উদাহরন দেওয়া সুরুল মোড়ের হাইমাস্ট লাইট। সমগ্র এলাকাটার প্রকৃতিই বদলে গেছে। তারপর একদিন কর্তৃপক্ষ সাড়া দিলো। মেলার মাঠের জন্য বরাদ্দ হল দুটো হাইমাস্ট বাতিস্তম্ভ।
কাজ শুরু হল।বাতি বসানোর।
কিছুদিন পরে একদিন সকালে পূর্বপল্লী থেকে বেশ কয়েকজন বাসিন্দা এলেন অফিসে। জানতে চাইলেন, সত্যিই কি বাতিস্তম্ভ বসানোর উদ্যোগ গ্রহন করেছি কিনা!
অকপটে জানালাম। পরের প্রশ্ন, তা হলে কি আর মাঠে থেকে তারাভরা আকাশ কিম্বা চন্দ্রালোক কোনটাই আর দেখার উপায় থাকবে না?
— খুব অস্বস্তিতে পড়লাম। এইরকম প্রশ্ন হতে পারে? সব গন্যমান্য গুনিজন। কি বলা যায়। যুক্তিগ্রাহ্য উত্তর হাতড়াচ্ছি।
..……হঠাৎ মনে পড়ল আগের রাতেই টিভিতে উত্তমকুমারের “সবার উপরে” দেখছিলাম, আদালতে কেসের সওয়াল চলছিলো। একটা পয়েন্ট-এ গিয়ে টার্নিং নিল। সাক্ষী বলেছে, রাস্তার ধারের গ্যাসের আলোয় দেখেছে আততায়ীকে। কিন্তু জবাবে জানা গেলো, সেদিন ছিলো পূর্নিমা। আর পূর্নিমার রাতে গ্যাসের বাতি জ্বালানো হত না। মিথ্যা সাক্ষ্য প্রতিপন্ন হল আর বাইশ বছর পর আসামী বেকসুর খালাস পেল।……….
ওনাদের উত্তর দিলাম, যেদিন যেদিন চন্দ্রালোক অবলোকন করতে চাইবেন, সেদিন বলবেন, হাইমাস্ট এর আলো বন্ধ রাখা হবে।
এরপর আর বাধা হয়নি। মেলার মাঠে আলোর ঝরনাধারা বয়ে গেছে, দূর হয়ে গেছে মেলার মাঠের অবাঞ্চিত কাজকর্ম।
চন্দ্রালোক থেকে হাইমাস্টের বাতিস্তম্ভের কোনো ফারাক চুইয়ে পড়েনি মেলার মাঠে।