কলকাতা ব্যুরো: সম্প্রতি জিএসটি-এর সংশোধিত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেই তালিকার আওতায় নতুন করে জিএসটি বসেছে একাধিক পণ্যের উপর। যার মধ্যে অন্যতম হল, মুড়ি। অথচ, পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের আমজনতা, বিশেষ করে দরিদ্রদের একটা বড় অংশই দিনের অধিকাংশ সময় মুড়ি খেয়ে পেট ভরান। তার প্রধান কারণই হল, মুড়ি সস্তা কিন্তু, ৫ শতাংশ জিএসটি বসায় সেই মুড়ির দামও এখন বেড়েছে। ফলে টান পড়েছে গরিবের পকেটে। আর বৃহস্পতিবার ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরব হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।

এ দিনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের এক তৃণমূল কর্মী। তিনি বস্তায় করে মুড়ি এনেছিলেন। সভামঞ্চ থেকে তাঁর কাছ থেকে সেই বস্তা চেয়ে নেন মমতা (Mamata Banerjee)। মঞ্চে একটি ট্রেতে সেই মুড়ি হাতে করে ঢালতে যায় মমতাকেই। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এখানে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা একেবারেই স্পষ্ট। বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের আমলে আমজনতার হাল যে বেহাল, তা বোঝাতেই মঞ্চে মুড়ি হাতে তোলেন তিনি।

এ দিন মমতাকে (Mamata Banerjee) সভা মঞ্চ থেকে সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, মুড়ি আছে? থাকবে না? গ্রামের ছেলে সব। মুড়ি থাকবে না তো কি বিরিয়ানি থাকবে! তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগ, দেশের নানা প্রান্তে ক্ষমতা দখল করতে ইডি, সিবিআই-এর ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি। মমতার কটাক্ষ, এবার ইডি, সিবিআই এলে ওঁদের থালায় করে মুড়ি খেতে দেবেন। সঙ্গে একটু সরষের তেলও দেবেন। তাঁর বার্তা, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখালেও মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই আছে কারণ, তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের কথা বলে, মানুষের কথা ভাবে। তাই মুড়ি, চিঁড়ে, বাতাসার মতো সাদামাটা পেট ভরানো খাবারের দাম বাড়লে উদ্বেগ বাড়ে তৃণমূল নেতৃত্বেরও।

উল্লেখ্য, মমতা (Mamata Banerjee) নিজেও মুড়ি খেতে ভালোবাসেন। যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা জানেন, মমতার বাড়িতে মুড়ি-চপের কোনও বিকল্প নেই। পাশাপাশি এদিনের সভা মঞ্চে অভিনেতা তথা সাংসদ দেবের কাঁধে গ্যাস সিলিন্ডারের রেপ্লিকা দেখতে পাওয়া যায়। আর সেই ইস্যুতেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, সিলিন্ডারের দাম কত? এদিন ডোমজুড় থেকে এক তৃণমূল কর্মী বেতের তৈরি গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে সমাবেশে আসেন। লক্ষ লক্ষ ভিড়ের মধ্যে থেকে সেই রেপ্লিকা মমতার চোখে পড়ে। সেটিকে মঞ্চে তুলে আনার নির্দেশ দেন তিনি। মমতার নিরাপত্তারক্ষীরা রেপ্লিকা সিলিন্ডার মঞ্চে তুলে আনার পরেই, দেবকে পোডিয়ামে ডেকে আনেন তৃণমূল নেত্রী। নির্দেশ দেন সেটিকে ধরে দাঁড়াতে। আর দিদির কথা মতো অভিনেতা তথা সাংসদ দেব সেটিকে কাঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন।

তারপরই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ে সরব হন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)৷ প্রশ্ন তোলেন সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলে রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে চলেছে বিজেপির সরকার ৷ যেখানে স্বভাবসিদ্ধভাবে এলপিজি, পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেন মমতা ৷

তবে এদিন এদিনের শহিদ সমাবেশের অনুষ্ঠানের পরপরই একাধিক ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা কটাক্ষ করেন বিজেপির বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ওনার ভাষণ আজ আমি কিছুক্ষণ শুনছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত ওনার ভাষণ শোনা অত্যন্ত ধৈর্যের কাজ। যা শুনলে সাধারণ মানুষের মাথা ঠিক রাখা মুশকিল।
দিলীপ ঘোষ আরও বলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ শুনেই বোঝা যাচ্ছে ওনার বয়স হয়েছে। এরপরই তিনি মমতার “মুড়ির গল্প”-এর কটাক্ষ করে বলেন আমরা আগে পান্তার গল্প বলতাম।
অন্যদিকে সাংসদ দেবের কাঁধে গ্যাস সিলিন্ডারের রেপ্লিকা নিয়ে শহিদ দিবসের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ দেখানোকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েন নি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, এই সুযোগে তো সাধারণ মানুষ দেবকে দেখতে পেলো, উনি যে এখনও রাজনীতিতে আছেন তা মানুষ বুঝতে পারলেন। এতদিন পরে উনি মঞ্চে ওঠার একটা সুযোগ পেলেন। নাহলে তো মাটিতে বসে থাকতে হয়।
		
									 
					