কলম্বিয়ার পুলিশ ১৯৯৯ সালে একটি এটেম্পটেড ধর্ষণ কেসে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করতে গিয়ে পুলিশের সন্দেহ হয় এই লোকটিই ‘দ্য বিস্ট’। খুনের আগে ‘দ্য বিস্ট’ বা লুইস গারাভিতো শিশুদের ধর্ষণ ও নির্যাতন চালাতো। লুইসের টার্গেট করা শিশুদের প্রায় সবাই ছিল পথশিশু। যেসব খুনের কোনও ক্লু পুলিশের অনুসন্ধানে ততদিনে ধরা পড়েনি। কিন্তু একটি খুনের সময় অকুস্থলে তার বান্ধবীর লেখা একটি চিরকুট লুইসের পকেট থেকে পড়ে যায়। আর সেই চিঠির সূত্র ধরেই ‘দ্য বিস্ট’ নামে পরিচিত ভয়ঙ্কর সিরিয়াল কিলার পুলিশের জালে ধরা পড়ে। যার আসল নাম লুইস গারাভিতো।

কলম্বিয়ার এই লোকটি ১৯৯২ থেকে ১৯৯৯- এই সাত বছরে তিনশোর বেশি খুন করেছে, যাদের প্রায় সবাই ছিল শিশু। গ্রেপ্তারের পর লুইস ১৮৯টি খুনের কথা নিজেই স্বীকার করে। ৮৩৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এই খুনি এখন কলম্বিয়ার ভ্যালেদুপার কারাগারে। বর্তমানে লুইস কলম্বিয়ার একটি জেলে আছে যার ঠিকানা গোপন রাখা হয়েছে। এ বছরই লুইসের সাজা শেষ হয়ে যাবে তবে কলম্বিয়ার আইনে শিশু অপরাধের জন্য কমপক্ষে ৬০ বছর জেল দেওয়া হয়, সেই বিধান অনুযায়ী ২০২১-এ লুইস গারাভিতোকে মুক্তি দেওয়া হবে কিনা বলা যাচ্ছে না। তদন্তের কাজে পুলিশকে সাহায্য করার জন্য লুইসের জেল সময় কমিয়ে ২২ বছর করা হযয়েছে।

দুনিয়ার সিরিয়াল কিলারদের যদি একটি তালিকা তৈরি হয় তাহলে লুইস গারাভিতোর নাম থাকবে সবার উপরে। যে কোনো সিরিয়াল কিলারের চেয়ে বেশী খুন করার পরও সে পুলিশের জাল কেটে বেরিয়ে যেত। ধরা পড়ার পরও আদালত মাত্র ১৪৭টি খুনের প্রমাণ পায়।

নব্বইয়ের দশকে কলম্বিয়ার অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা ছিল আবাসন। লুইস সেই সুযোগকে নিখুঁত ভাবে কাজে লাগায়। লুইস টার্গেট করতো বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১ থেকে ১৬ বছর বয়সী পথশিশু।

গ্রেফতারের পরও লুইস প্রথমে অস্বীকার করে। জেরায় তাকে ভিক্টিমদের কাহিনী শোনালে একসময় সে কান্নায় ভেঙে পরে। তবে লুইসের স্বীকারোক্তি কলম্বিয়া বিচার বিভাগের জন্য যথেষ্ট ছিল না। তারপরও পুলিশ প্রমাণের খোঁজে তদন্ত চালিয়ে যেতে থাকে। লুইসের চোখে ছিল একটি বিরল সমস্যা। যা সাধারনভাবে বয়স্ক মানুষদেরই হয়ে থাকে। তাই তার চশমাটির ডিজাইন ছিল সাধারণ চশমার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। পুলিশ একটি কবরস্থান থেকে সেরকম একটি চশমা খুঁজে পেয়েছিল। এছাড়াও লুইস খুনের পর অনেক জায়গায় মদের বোতল, আন্ডারওয়্যার এবং কখনও কখনও তার জুতো ফেলে আসতো।

একটি খুনের তদন্তে খুন হওয়া পথশিশুর পায়ুপথে ডিএনএ-এর সঙ্গে লুইসের ডিএনএ মিলখুজে পায়। তার চোখ পরীক্ষা করে কবরস্থান থেকে খুঁজে পাওয়া চশমারও মিল পাওয়া যায়। তখন পুলিশের বুঝতে বাকি থাকে না এই হচ্ছে কুখ্যাত খুনি ‘দ্য বিস্ট’

লুইস ছোট ছোট পথশিশুদের সঙ্গে ভাব জমাতে তাদের হাতে লোভনীয় খাবার ও টাকা পয়সা তুলে দিত, তারপর রাস্তা দিয়ে গল্প করতে করতে হাঁটতে থাকতো। খাবার আর পয়সার লোভে দীর্ঘ রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়তো। সেই সুযোগে লুইস তাদের একেবারে জনমানবশূন্য নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে প্রথমে বীভৎস শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, তারপর খুন করতো।

ধর্ষণের জন্য সে শিশুদের পায়ুপথে ছুরি চালিত, অণ্ডকোষ কেটে ফেলতো এই ভাবে শারীরিক নির্যাতনের পর অনেক শিশুর মাথাও সে কেটে ফেলে দিত। অনেক শিশুকে সে  কবরে মাটি চাপাও দিয়েছিল। অনেক শিশুর মৃতদেহে দাঁত দিয়ে কামড়ানোর ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়।     

গৃহযুদ্ধ পরবর্তী কলম্বিয়ায় ১৯৯২ সালের পর বহু মানুষ দরিদ্র ও গৃহহীন হয়ে পড়েছিল। অনাহারে রাস্তার ধারের বহু শিশু সামান্য খাবার আর টাকা পয়সার লোভে ফাঁদে পড়ে যায়। এই সময়ে লুইসের শিকার হয়ে কলম্বিয়ার কয়েকটি শহরের পথশিশুরা নিখোঁজ হয়, যাদের বিষয়ে পুলিশের কোনও রিপোর্ট ছিল না। 

কিন্তু ১৯৯৯ সালে কলম্বিয়ার গেনোভা শহরের বাইরে পাহাড়ের ধারে দুটি শিশুর নগ্ন মৃত দেহ এবং সামান্য দুরে আরেকটি শিশুর মৃতদেহ ও একটি চিরকূট উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ জোরদার তদন্ত চালিয়ে লুইসের বান্ধবীর ঠিকানা পায়, আর সেখান থেকেই তারা লুইসের গতিবিধি অনুসরণ করে লুইসকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। 

সিরিয়াল কিলাররা খুব ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা শিকারকে দূরের কোনও জায়গায় নিয়ে গিয়ে শান্তি মতো হত্যা করে এবং সেই জায়গা থেকে অন্য কোথাও নিয়ে মৃতদেহটি ফেলে রেখে যায়। এই ধরণের ঘটনার তদন্ত করাটা তাই কঠিন হয়ে পড়ে।‘দ্য বিস্ট’ বা লুইস গারাভিতোর ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছিল।

Share.

2 Comments

  1. swapna ray chowdhury on

    যে বা যারা এমন করতে পারে তারা ঠিক কি, জন্তু বা জানোয়ারও এ কাজ করতে পারবে না, তাহলে মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে কিভাবে সম্ভব?

Leave A Reply

Exit mobile version