দ্বিতীয় পর্ব

বহুকাল ধরেই মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি হয়েই আসছে। কিন্তু এসব ঘটনার মধ্যে কিছু হত্যাকাণ্ড সত্যিই ভয়ংকর। পৃথিবীর বুকে এ রকম নৃশংস খুনের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। সেসব খুনের বর্ণনা দেওয়া লোমহর্ষক ব্যাপার। শুধু একটা নয়, খুনিরা একের পর এক খুন করে নিজেদের নাম লিখিয়েছে সিরিয়াল কিলার হিসেবে।সিরিয়াল কিলাররা সাধারণত রাগ, উত্তেজনা, অর্থের কারণে খুন করে থাকে। এমন কয়েকজন সিরিয়াল কিলারের কথা এই প্রতিবেদনে-

জ্যাক দ্য রিপার: পরপর ১১টি খুন করে সিরিয়াল কিলারের খাতায় নাম লিখিয়েছিল জ্যাক দ্য রিপার। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেলের চারপাশ জুড়ে তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছিল ১৮৮৮ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত। লোকচক্ষুর আড়ালে, প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সে একের পর এক খুন করেছিল। অবশেষে লন্ডনের সেন্ট্রাল নিউজের কাছে সব খুনের দায় স্বীকার করে সে চিঠি পাঠায়। চিঠি দিলেও কেউ তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে জানা যায়, সেই সময়ের চিফ কনস্টেবল ম্যালভিল ম্যাকনাগটেন জ্যাক দ্য রিপার হিসেবে তিনজন ব্যক্তিকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিলেন। তার মধ্যে প্রথম জন, এম. জে ডরুয়িট। প্রথম জীবনে তিনি ব্যারিস্টার ছিলেন, পরে শিক্ষক। দ্বিতীয়জন অ্যারন কসমিনিস্কি এবং তৃতীয় জন হলেন এক উন্মাদ, নাম মাইকেল ওস্ট্রং। কিন্তু এই সন্দেহ নিছকই থেকে গিয়েছিল কারণ কোনোটির পক্ষেই জোরালো প্রমাণ ছিল না। তুখোড় ডিটেকটিভ ফেডারিক এভারলিনও সন্দেহ করেছিলেন সেভেরাইন ক্লোসোস্কি এলিস জিওর্গি চেপম্যানকে। সেটাও কোনো কাজের হয়নি।এরপর সন্দেহের তির একাধিক ব্যক্তির দিকে পড়লেও সবই ছিল লক্ষ্যভ্রষ্ট। সুতরাং জ্যাক দ্যা রিপার বন্দি রইল বই ও সিনেমার রুপালি পর্দায়। তাকে ও তার খুনগুলি নিয়ে তৈরি হয়েছে গল্প, উপন্যাস, নাটক, সিনেমা এমনকি ভিডিও গেমস। পূর্ব লন্ডনের সেই সব খুনের জায়গাগুলিতে কিছুকাল আগেও মানুষ ভিড় জমাতো। জানা যায়, রিপার যাদের খুন করেছিল তারা বেশির ভাগ পতিতা। যৌনকর্ম করার সময় শ্বাসরোধ করে হত্যা করাই ছিল রিপারের নেশা। ঠিক কতজনকে রিপার খুন করেছিল, তার সঠিক পরিসংখ্যান আজও অপ্রকাশিত।

পেদ্রো লোপেজ: ইকুয়েডরের এক ভয়ংকর খুনির নাম পেদ্রো লোপেজ। শতাধিক ব্যক্তিকে খুন করা এই খুনি প্রথম মিডিয়ার আলোচনায় আসে ১৯৮০ সালের ৯ মার্চ। অগণিত ধর্ষণের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ধর্ষণের পর ভিকটিমকে জবাই করত সে। এরপর রক্ত দিয়ে ধুতো হাত। লন লেইটন্যার নামের এক সাংবাদিক স্থানীয় এক পত্রিকায় সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে পেদ্রো লোপেজ সম্পর্কে নানা খবর জানিয়েছিল। সেটা ছিল ১৯৮০ সালের কথা। পুলিশ বহু কাঠ খড় পুড়িয়ে পেদ্রো লোপেজকে গ্রেপ্তার  করতে পেরেছিল। ষোল বছর জেল হয় তার। তবে কর্তৃপক্ষ তার ভালো আচরণের জন্য দুই বছর সাজা মাফ করে দেয়।

লুইস গারাভিতো: কলম্বিয়াতে পশু নামে পরিচিত সে। প্রায় ৪০০ খুনের মধ্যে অধিকাংশ ছিল পথশিশু। তবে আদালতে প্রমাণিত ভিকটিম সংখ্যা ১৩৮। জানা যায়, বেশির ভাগ খুন ১৯৯০ সালে ঘটায় সে। ধরা পড়ার পর কলম্বিয়া আদালত তাকে ৩০ বছর সাজা দেয়। তবে লাশ শনাক্তকরণে সাহায্য করাতে তাকে সাজা কমিয়ে ২২ বছর করা হয়। এতে সাধারণ জনগণ খেপে গিয়ে আলাদা প্রসিকিউশন দাবি করে। গণমাধ্যমগুলিও চাপ দিতে থাকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। আগের সাজাই বলবৎ থাকে।

জিল দ্য রাই: ফ্রান্সে আধুনিক সিরিয়াল কিলারদের গুরু বলা হয় তাকে। জিল দ্য রাই শিশু, কিশোর, ব্লন্ড চুল ও নীল চোখ দেখলেই তাদের খুন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ত। সে নিজেও ছোট থেকে ব্লন্ড চুল ও নীল চোখের অধিকারী ছিল।প্রথমে শিশুদের সঙ্গে যৌন অত্যাচার করে সে তাদের হত্যা করত। হত্যা করার পর সে লাশ আগুনে পুড়িয়ে ফেলত। পরিসংখ্যান বলে জিল প্রায় ৮০-২২০টির মতো খুন করেছিল। এরমধ্যে নিজের হাতে করেছিল ১০০টির মতো। তার হাতে খুন হওয়া শিশুদের বয়স ছিল ৬-১৬ এর মধ্যে। আরো ভয়ংকর বিষয় হলো জিল এসব শিশুদের রক্ত দিয়ে স্নান করত। তার সঙ্গীরা যখন বাচ্চাদের ওপর অত্যাচার করত জিল শিশুদের আর্তনাদ শুনে আনন্দে অট্টহাসি হাসত। একের পর এক শিশুকে হত্যা করে রক্তমাখা জামা-কাপড় পুড়িয়ে শান্তি পেত তারা। ফিনকি দিয়ে যখন বাচ্চাদের শরীর থেকে রক্ত বের হতো, জিল তখন সেই রক্ত গায়ে মেখে উল্লাসে ফেটে পড়ত। সিরিয়াল কিলারের খাতায় নাম লেখানোর আগে সে সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন ছিল। অবশেষে জিলকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪৪০ সালে ২৬ অক্টোবর রাতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

রিচার্ড ট্রেটন সেচ: খুনের পর রক্ত ও মাংস খেত ট্রেটন। এই কারণে তাকে ‘ভ্যাম্পায়ার অব স্ক্রেরামেন্টো’ বলা হতো। ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫১ বছর বয়সি ইঞ্জিনিয়ার এমরোস গ্রিফিনকে দিয়ে শুরু করে তার খুনি জীবন। তার দ্বিতীয় শিকার টেরেসা ওয়ালিন নামক এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। তাকে হত্যা করার পর তার সঙ্গে নাকি যৌনকাজে লিপ্ত হয়েছিল সে। এমনকি রক্ত দিয়ে স্নান করেছিল।এরপর তার নিকটতম প্রতিবেশী ৩৮ বছর বয়সি ইভেলিন মিরোথকে গুলি করে হত্যা করে। মেরিডিটথ ও তার পুরো পরিবারকে গুলি করে মেরে তাদের রক্ত ও মাংস খায় রিচার্ড। এর মধ্যে ছিল, মেরিডিটথের ৬ বছরের পুত্র জেসন, ২২ বছর বয়সি ভাগ্নে ডেভিড। বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পাশে চার্চে ফেলা দেওয়ার সময় এক ব্যক্তি দেখে ফেলে। সেই পুলিশকে খবর দেয়। ওই ব্যক্তির স্বাক্ষর ও রিচার্ডের আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। অবশেষে ১৯৮০ সালের ৮ মে তাকে গ্যাস চেম্বারে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কিন্তু শাস্তির আগেই তাকে মৃত অবস্থায় সেলে পাওয়া যায়। ডাক্তারি রিপোর্ট জানায়, অতিরিক্ত নেশার ওষুধ খেয়ে সে আত্মহত্যা করে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version