প্রথম পর্ব

বহুকাল ধরেই মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, খুন-খারাবি হয়েই আসছে। কিন্তু এসব ঘটনার মধ্যে কিছু হত্যাকাণ্ড সত্যিই ভয়ংকর। পৃথিবীর বুকে এ রকম নৃশংস খুনের সংখ্যা একেবারেই কম নয়। সেসব খুনের বর্ণনা দেওয়া লোমহর্ষক ব্যাপার। শুধু একটা নয়, খুনিরা একের পর এক খুন করে নিজেদের নাম লিখিয়েছে সিরিয়াল কিলার হিসেবে। সিরিয়াল কিলাররা সাধারণত রাগ, উত্তেজনা, অর্থের কারণে খুন করে থাকে। এমন কয়েকজন সিরিয়াল কিলারের কথা এই প্রতিবেদনে-

জাভেদ ইকবাল মুঘল: পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া জাভেদ পুরো উপমহাদেশের খুনিদের সম্রাট। নৃশংস এই খুনির হাতে প্রায় ১০০ শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। শুধু হত্যা নয়, সে শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নও চালাত। মানুষ হত্যায় তার রুচি ছিল বিকৃত। ১৯৯৮ সালে দুজন বালককে যৌন হয়রানি অভিযোগে সে প্রথম গ্রেফতার হয়। কিন্তু প্রশাসন তাকে কিছুই করতে পারেনি। আইনের মারপ্যাচ কষে সে রেহাই পেয়ে যায়। সহজে মানুষকে পটাতে সে ছিল ওস্তাদ। মিশুক প্রকৃতির এই খুনির ভাষা ছিল খুব মিষ্টি। তার কথার জালে আটকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে ছুরিকাঘাতে মরতো অনেকে। হত্যার পর সে লাশগুলোকে টুকরো টুকরো করে কাটত। খণ্ডাংশগুলো ফেলে না দিয়ে হাইড্রোলিক অ্যাসিড ভর্তি ড্রামে ডুবিয়ে সেটাকে গলিয়ে তরল বানিয়ে সে নদীতে ফেলে দিত। পুলিশ যখন তার বাড়িতে রেট করতো, তখন সেখান থেকে উদ্ধার হতো অপরাধে ব্যবহৃত ব্যাগ, ছুরি, ছবি, রক্তাক্ত জিনিসপত্র ও অ্যাসিডের বোতল। তার ঘরের সমস্ত দেয়াল জুড়ে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর সে জবানবন্দিতে জানায়, ‘আমি জাভেদ ইকবাল। ১০০ শিশুর হত্যাকারী। এই পৃথিবীকে আমি ঘৃণা করি। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। এসব কাজের জন্যে আমি মোটেই লজ্জিত কিংবা অনুশোচনায় ভুগছি না।’ জাভেদের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে এসব খুন ও যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখ আছে। বিচারে তাকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেওয়া হয়। এবং এইসব বিভীষিকাময় খুনের বর্ণনা শুনে বিচারক জানায়, ফাঁসির রায় তার জন্যে কম। এর সঙ্গে তাকে ১০০ বার ছুরিকাঘাত ও তার লাশকে ১০০ টুকরো করে অ্যাসিডে ডুবিয়ে রাখা দরকার। কিন্তু ফাঁসির রায় কার্যকর হবার আগেই কারাগারে ছুরিকাহত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। জেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সে আত্মহত্যা করেছিল।

আমেরিকার সবচেয়ে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডি। ইতিহাসে স্বরণীয় এই সিরিয়াল কিলারের জন্ম অসংখ্য নিরপরাধ তরুণীকে খুন করেছে। সুদর্শন টেডের সঙ্গে ভিকটিম তরুণীদের পরিচয় হতো পাবলিক প্লেসগুলোতে। যে তরুণীকে সে টার্গেট করত, তার সামনে গিয়ে অসুস্থ হওয়ার ভান করতো।তার গাড়িতে সবসময় শাবল থাকত। যার মাধ্যমে ভিকটিমকে মারা হত। মেরে ফেলার আগে ভিকটিমকে টেড ধর্ষণ করত। মেরে ফেলার পর তরুণীর সাথে আবার যৌন সম্পর্ক স্থাপন করত সে! পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে টেড ৩০ জনের বেশি তরণীকে খুন করে।পরবর্তীতে তাকে ইলেক্ট্রিক্যাল চেয়ারে শক দিয়ে মারা হয়।

জেফরি ডাহমার: আমেরিকার সিরিয়াল কিলিঙের ইতিহাসে জেফরি ডাহমার ভয়ঙ্কর একটি নাম! তার হাতে অসংখ্য মানুষ খুন হয়, তাদের সে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেত এবং নির্মমভাবে হত্যা করত। প্রায় সব ভিকটিমকেই মারার পর তাদের অঙ্গহানি করা হতো। তাদের মাথার খুলি সে সাজিয়ে রাখত! কখনো আবার মৃত ভিকটিমের মাংস খেত সে! পুলিশের হাতে ধরা পড়ে একজন ভিকটিম পালিয়ে যাওয়ায় জেফরি-কে ৯০০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়! কিন্তু জেলের ভেতর সে আত্নহত্যা করে।

এলেকজান্ডার সলোনিক: রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে থেকেই খুনোখুনিতে হাত পাকায় সে। দুই হাতে পিস্তল পরিচালনা এবং মল্লযুদ্ধে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য তাকে রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর আবার সে তার পুরনো পেশায় ফিরে যায়। দুই হাতে অস্ত্র পরিচালনার দক্ষতার কারণে হলিউডে তৈরি হয় “হিটম্যান এজেন্ট-৪৭” সিনেমা সিরিজটি। রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে কাজ করার সুবাধে “এজেন্ট-৪৭”, “সুপারকিলার”- নামগুলো নিজের করে নেয় সে।

জন জর্জ হাই: ‘অ্যাসিড স্নান হত্যাকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিল সে। হত্যার পর সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে লাশটিকে ডুবিয়ে রাখত পচে যাওয়ার জন্য। অ্যাসিডে ঝলসে দিয়ে সেটাকে প্যাকেটবন্দি করে ফেলে দিত। তার সব সময় একথা মনে হতো যে, পুলিশ তাকে কখনো ধরতে পারবে না। লাশকে সে এমনভাবে গুম করে ফেলত যে, তার বিরুদ্ধে প্রমাণ বা অভিযোগ আনা বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কাউকে খুন করার পর সে তার সমস্ত সম্পত্তি ভোগদখল করত। সম্পদ দখলের এই আইডিয়া তার মাথায় কাজ করার সময়ে সে কাজ করত লন্ডনের গুলিসিস্তার সড়কে কিংস্টনের সম্পদশালী ব্যক্তি উইলিয়াম ম্যাক শোয়ানের বাড়িতে। ম্যাকের মা-বাবাকে দেখাশোনা করার কাজ ছিল তার। এরপর জর্জ শোয়ানের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে ড্রামের ভেতর ৪০ গ্যালন সালফিউরিক অ্যাসিড দিয়ে তার মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিল। দুদিন পরে লাশটাকে উঠিয়ে ম্যানহোলে ফেলে দেয় সে। ইংল্যান্ডের অলিতেগলিতে তার পাশবিক নির্যাতন চালাতো সে। অবশেষে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচার করে তাকে ফাঁসি দেওয়া বিচারের সময় তার বিরুদ্ধে ৬ জনকো হয়। হত্যার অভিযোগ আনা হলেও মূলত সে হত্যা করেছিল ৯ জনকে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version