সিল্করুট, নাথাং ভ্যালি ঘুরতে ঘুরতে মনে হলো একবার সিলারিগাঁও গেলে কেমন হয়। সঙ্গে যখন গাড়ি আছে। ব্যাস, ভাবতে দেরি আছে, কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছতে দেরি নেই। আগের থেকে পরিকল্পনা থাকায় দুটো দিন আমাদের হাতে রাখাই ছিল। তাই সিকিম থেকে আমরা ঢুকে পড়লাম আবার এ রাজ্যে। লক্ষ্য ইচ্ছেগাঁও আর সিলারিগাঁও।
সিলারিগাঁও ঢোকার মুখে রাস্তা কিছুটা বেশ খারাপ। যদিও সঙ্গে গাড়ি থাকায় সমস্যা অনেকটাই কম। দুপুর নাগাদ পৌঁছে একটা হোম স্টে নিজেদের জন্য ব্যবস্থা করে ফেললাম।

তারপর যেদিকেই তাকাই শুধুই যেন ছবির মত দেখতে। প্রায় ছয় হাজার ফুট উপরে ছোট্ট এই জনপদে কেন মানুষ আসে, তা উপলব্ধি করলাম নিজেরা পৌঁছনোর পর। শুধুই প্রকৃতিকে দেখা। যারা ফটোগ্রাফার তারা ল্যান্ডস্কেপের খোঁজ করেন। নিশ্চিত করে বলতে পারি তাদের কিন্তু আসতেই হবে সিলারিগাঁও। গ্রামের রাস্তায ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট মুরগি। সে মুরগির ঝোল আর রুটি খেয়েই ঘুম। তাপমাত্রা ৫ – ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

পরদিন সকাল সকাল উঠে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম। কখনো মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে আমাদের, আবার একটু পরেই চকচকে সোনা রোদ। পাহাড়, জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে সূর্যদেব উঁকি দিচ্ছেন আমাদের দিকে। আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল ট্রেকিং করে আমরা যাব ইচ্ছেগাঁও। ফলে আমরা সিলারিগাঁও থেকে ট্রেক করেই এগোতে থাকলাম ইচ্ছেগাঁও এর দিকে। এ যেন যমজ দুটি গ্রাম। একই পাহাড়ের এপাশ-ওপাশ। ট্রেক করে পাহাড়ের মাঝে গিয়েই চমকে উঠলাম। চোখের সামনে তখন খোলা ক্যানভাস। কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমাদের দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে। সিলারিগাঁও বিখ্যাত কাঞ্চনজঙ্ঘার এই রূপ দেখতে পাওয়ার জন্যই।

আমরা ভাগ্যবান সকাল বেলায় আকাশ এতটাই পরিষ্কার ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখে ফেললাম মনের মত করে। আর ঘন্টাখানেক ট্রেক করে পৌঁছে গেলাম ইচ্ছেগাঁও। একেবারে ছোট্ট গ্রাম আর পাঁচটা পাহাড়ি গ্রামের মতোই। যেদিকে তাকানো যায় শুধুই জঙ্গল আর পাহাড়। তার ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ, প্রকৃতি যেন তার যাবতীয় সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানেই। একসময় ছবি তুলতে তুলতে ক্লান্ত লাগতে পারে আপনার, কিন্তু প্রকৃতি আপনাকে পোজ দেওয়ায় কোনো কার্পণ্য করবে না। কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে ফের পাহাড়ের গা বেয়ে একদিকে খাদ, সেখান থেকেই ধীরে ধীরে ফিরে আসা সিলারিগাঁও।

যারা এখানে গিয়ে একটু ভালো থাকা বা খাবার খুঁজবেন, তারা কিন্তু হতাশ হবেন। কারণ এখানে কোন হোটেল নেই। একের পর এক গ্রাম্য বাড়ি। আর সেখানেই হোম স্টে। সাতশো, হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায় আপনি থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন। পাবেন স্বল্পমূল্যে খাবারের ব্যবস্থাও। আমরা সিকিম হয়ে সিলারিগাঁও গেলেও, আসলে এখানে যাওয়া যায় কালিম্পঙ হয়েই। কালিম্পং থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরে সিলারিগাঁও। আগেরবার পেডং, ঋষিখোলা, জুলুকের মত স্পটগুলো দেখা হয়ে গিয়েছিল বলে এবারে আর আমরা সেদিকে যাইনি।

সিলারিগাঁও যাওয়ার জন্য এনজিপি থেকে গাড়ি ভাড়া করা যেতে পারে। এখান থেকে ৯৪ কিলোমিটার দূরে সিলারিগাঁও। অথবা পেডং পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে, সেখান থেকে ৩০ মিনিট মতন সময় লাগবে সিলারিগাঁও পৌঁছতে। অথবা এনজিপি থেকে কালিম্পং পর্যন্ত পৌঁছে, সেখানে থেকে পৌঁছে যাওয়া যাবে সিলারিগাঁও। যদি সিলারিগাঁও থেকে প্রকৃতিকে দেখতে হয় তাহলে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে যাওয়া এক কথায় পয়সা উসুল। অন্যদিকে মনে রাখার মত জায়গা হিসেবে থেকে যাবে সিলারিগাঁও।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version