প্রথম পর্ব

রাঢ় বাংলার পূর্ব বর্ধমান জেলার অর্ন্তগত কালনা মহকুমার বৈদ্যপুর এক প্রাচীন গ্রাম। এলাকায় আছে জমিদার বাড়ি। এছাড়া গ্রামটিকে ঘিরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য হিন্দু দেবদেবীর মন্দির,  যেমন- এই গ্রামের ঝাপান তলার জগতগৌরী মায়ের মন্দির,  অসংখ্য শিব মন্দির, দুর্গা মন্দির, নারায়নের মন্দির। তবে অন্যান্য সবকটি মন্দিরের মধ্যে অন্যতম হল গোপালদাসপুরের রাখাল রাজার মন্দির। বর্তমানে অনেক মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। আজ ধ্বংসের পথে এই অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্য।

এই এলাকায় অসংখ্য মন্দির কালের নিয়মে ধ্বংস হলেও আজও ভক্তিরসের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে প্রাচীন “রাখাল রাজা”। স্থানীয় মানুষদের কাছে রাখাল রাজা এক আবেগ। মন্দির ছাড়াও এলাকার কৃষি-কার্যেরও সুনাম রয়েছে, অনেকেই বিশ্বাস করে রাখাল রাজার কৃপাতেই এলাকার শ্রীবৃদ্ধি৷

বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের অর্ন্তগত গোপালদাসপুর গ্রাম প্রাচীনকাল থেকেই এলাকার ভক্তিরসের অন্যতম পীঠস্থান। এখানেই আছেন “রাখাল রাজা”, তাঁর গায়ের রং আকাশি নীল, রাখাল রাজারবাম হাতে নাড়ু আর ডান হাতে লাঠি। মন্দিরের গর্ভগৃহে রাখাল রাজার দুপাশে রয়েছেন বামদিকে গোপীনাথ, তাঁর গায়ের রং আকাশি নীল আর ডানদিকে রঘুনাথ, তাঁর গায়ের রং সবুজ। মন্দিরটির উচ্চতা চার ফুট। মন্দিরের সামনে বারোটি থামের ওপর বিশাল নাট-মন্দির। শ্রীকৃষ্ণের বাল্য-লীলার নানারকম ছবি দিয়ে সাজানো নাট মন্দিরটি। যেমন- কালিয়া দমন, পুতনা বধ, কংস বধ, ননী চুরি ইত্যাদি।

মাঘ ফাল্গুন মাসে রাখাল রাজার অঙ্গরাগ হয়, রাখি পূর্ণিমার দিন হয়অভিষেক। নাট মন্দিরের পূর্ব দিকে মন্দিরের আদলে তৈরি জায়গায় অভিষেক হয়। কালী পুজোর পর গো-পার্বণ উপলক্ষে হয় গোবর্ধন পুজো।

রামনবমীতে রাখাল রাজার দোল উৎসব হয়। গোপীনাথ মন্দিরের পাশে দোল মন্দিরে গোপীনাথ ও রাখাল রাজা রাজ-বেশ পরে থাকেন। জন্মাষ্টমীতে বড় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, তখন এখানে বহু লোক সমাগম হয়। নন্দোউৎসবে নারকেল কাড়াকাড়ি, দইয়ের হাড়িভাঙানামে মজার উৎসব হয়।

রাখাল রাজার মন্দিরে সকাল থেকে চারবার ভোগ নিবেদন করা হয়, দুপুরে থাকে অন্নভোগ, সন্ধ্যায় শীতল ভোগ। প্রতিদিন কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা আরতি হয়ে যাওয়ার পর মন্দিররের দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তখন প্রাঙ্গণ প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, রাখাল রাজা সেখানে একা ঘোরাফেরা করেন। জনশ্রুতি সন্ধ্যার পর মন্দির চত্বরে যে থাকে তার অমঙ্গল হয়। অনেকে সত্যতা যাচাই করার চেষ্টা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ভয় পেয়ে পালিয়ে এসেছে, অনেকে অন্ধ বধির হয়ে গেছে, আবার অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে।

প্রতিটা মন্দিরেরই কিছু না কিছু ইতিহাস থাকে। রাখাল রাজার মন্দিরের ও সেরকমই এক ইতিহাস আছে যা লোকমুখে প্রচলিত।

রামকানাই গোস্বামী কাটোয়ার খাটুন্তি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। পারিবারিক  সদস্যদের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে ইষ্ট দেবতাকে নিয়ে বৈদ্যপুর অঞ্চলের গভীর জঙ্গলে বসবাস করতে শুরু করেন। রামকানাই ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করতেন। তাঁর পুত্র সন্তান ছিল নিমাই, বলদেব ও রাখাল।

Share.

1 Comment

  1. এ ভাবেই‌‌ অজানা তথ্যগুলো আমাদের কাছে উপস্হাপনা করে তুমি এক নতুন আলোর‌ পৃথিবীতে বিকশিত হচ্ছ ,যা এক মস্ত বড়‌সৃষ্ঠির ‌মাঝে তুমি দাঁড়িয়ে আছো।ঈশ্বর তোমার সহায় হোক প্রার্থণা করি ।

Leave A Reply

Exit mobile version