কলকাতা ব্যুরো: শেষ পর্যন্ত খাঁচাবন্দি হল দক্ষিণরায়। গোসাবার কুমারমারিতে ঘুমপাড়ানি গুলিতে ঘায়েল হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। বাঘটিকে কব্জায় এনে খাঁচাবন্দি করে ফের জঙ্গলে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে বন দফতর। সুন্দরবনের লোকালয়ে ক্রমশ বাড়ছিল বাঘের আতঙ্ক। গোসাবার পরশমনি গ্রামের পর এবার কুমিরমারিতেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। নববর্ষের প্রথম রাতে একেবারে গ্রামবাসীর বাড়িতে ঢুকে পড়েছিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
অবশেষে বন দফতরের তৎপরতায় বাগে আনা সম্ভব হয় তাঁকে। অন্যদিকে, পরশমনি গ্রামের বাঘটি এখনও অধরা। ফলে চরম আতঙ্কিত এলাকাবাসী। গত বছরের শেষলগ্ন থেকেই সুন্দরবনের লোকালয়ে বাঘ চলে আসার খবর প্রায়ই শোনা যাচ্ছিল। তবে একেবারে কারোর বাড়িতে হানা দেওয়ার ঘটনা সাধারণত শোনা যায় না। নতুন বছরের প্রথম রাতে সেটাই ঘটল।
শনিবার রাতে হঠাৎ করেই গোসাবার কুমিরমারিতে হরিপদ মণ্ডল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়িতে বাঘ ঢুকে পড়ে। যদিও বড় কিছু ঘটনা ঘটার আগেই বাড়ির সকলে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তড়িঘড়ি খবর দেওয়া হয় বন দফতরে। আতঙ্ক ছড়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে। তারপর বন দফতরের কর্মীরা রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন এবং বাড়িটির চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। তারপর ঝুঁকি এড়াতে এদিন ভোররাতে ঘুমপাড়ানি গুলি মেরেই বাঘটিকে নাগালে নিয়ে আসেন বন দফতরের কর্মীরা। বাঘটিকে দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি করা হয়েছে এবং এদিন সকালেই খাঁচাবন্দি বাঘটিকে সুধন্যখালিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রের খবর। শনিবার রাতের এই ঘটনায় রবিবার সকালেও যথেষ্ট আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
অন্যদিকে, গোসাবার অপরপ্রান্ত, সাতজেলিয়ার লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পরশমনি গ্রামের বাঘটি এখনও অধরা রয়েছে। বর্তমানে বাঘটি ঠিক কোথায় রয়েছে তারও স্পষ্ট হদিশ নেই। বাঘটির গতিবিধি জানতে রবিবার সকাল থেকে জোর তৎপরতা শুরু করেছে বন দফতর। এদিন সকাল থেকে জঙ্গল লাগোয়া নদীপথ দিয়ে বাঘের সন্ধান শুরু করেছেন বন দফতরের কর্মীরা। জানা যাচ্ছে, সাতজেলিয়া পঞ্চায়েত এলাকা থেকে রাতের অন্ধকারে বাঘটি আবার চলে এসেছে আগের লাহিড়ীপুর পঞ্চায়েতের চরঘেরিতে l বাঘটি খাঁচাতে থাকা ছাগলের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি। তাই খাঁচা বন্দি হবে না ধরে নিয়ে বাঘ যেখানে আছে সেখানে মাচা বেঁধে ট্রাঙ্কুলাইজ করার ভাবনা বন দপ্তরের।
বর্তমানে বাঘটির পায়ের ছাপ পরীক্ষা করে গতিবিধি খতিয়ে দেখছেন বন দফতরের কর্মীরা। বাঘটিকে না ধরে গভীর জঙ্গলে ফেরৎ পাঠাতে শনিবারই গ্রামের দিকে জঙ্গলের পথে জাল দিয়ে গভীর জঙ্গলের দিকটি খোলা রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাঘটি ওই এলাকাতেই রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন বনাধিকারিকরা। তাই গ্রাম লাগোয়া জঙ্গলের বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন করে জাল দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন বনকর্মীরা।
এদিকে, দু-দিন পেরিয়ে গেলেও বাঘটি ধরা না পড়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রাণের ভয়ে নদীতে মাছ ধরতেও যেতে পারছেন না মৎস্যজীবীরা। ফলে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা।