(গত সংখ্যার পর)

একদিকে অনুশীলন সমিতি অন্যদিকে যুগান্তর দলকে নিয়ে নাস্তানাবুদ ব্রিটিশ শাসক। কুখ্যাত কার্জনের বঙ্গভঙ্গ চক্রান্তকে ভেঙে তছনছ করে দিতে সশস্ত্র সংগ্রামী মনোভাবাপন্ন সবাই একজোট হতে লাগলেন। ১৯০৬ এর এপ্রিল মাস নাগাদ বিপ্লবী কর্মকান্ডে বিশ্বাসী কিশোর, তরুন যুবকদের নিয়ে দল গড়ার পাশাপাশি বিপ্লববাদে উদ্বুদ্ধ করতে “যুগান্তর” নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে লাগলো। সম্পাদনার দায়িত্ব নিলেন তরুণ বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত। ছোট ছোট ক্লাব, সভা সমিতি কিম্বা শরীর চর্চার সংঘ ও ব্যায়ামাগারগুলো জোটবদ্ধ হয়ে উঠলো। গোটা বঙ্গদেশ কেঁপে উঠলো “যুদ্ধং দেহী” হুঙ্কারে। অখন্ড বাঙলা জুড়ে শুরু হয়ে গেল অনুশীলন সমিতির শাখা সংগঠন গড়ে তোলার কাজ।

Angry protesters

কোলকাতায় অনুশীলন দলের অন্যতম পরিচালকদের মধ্যে ছিলেন সভাপতি ব্যারিষ্টার প্রমথনাথ মিত্র, সহসভাপতি ব্যারিষ্টার চিত্তরঞ্জন দাশ এবং অরবিন্দ ঘোষ। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ মনোনীত হয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সংগঠনের প্রাথমিক অবস্থায় মুল মাথা ছিলেন অরবিন্দ, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্র বসু ও বারীন্দ্রনাথ ঘোষ। বরোদা মহারাজের নিজস্ব সৈন্যবাহিনীর কাছে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেন অরবিন্দ। সেখানে যতীন্দ্রনাথ ও বারীণ প্রশিক্ষণ নেন। তারপর বাঙলায় ফিরে এসেই তাঁরা যুদ্ধের কাজ শুরু করে দেন। তাঁদের হাত শক্ত করতে সমিতিতে এলেন বিপিন চন্দ্র পাল, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রচন্দ্র মল্লিক, সরলা দেবী প্রমূখ। অন্যদিকে ঢাকা প্রদেশে অনুশীলনের জ্বলন্ত মশাল এনে তরুণ যুবকদের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত করার অমোঘ কাজটি করলেন জাতীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও বিপ্লবী পুলিন বিহারী দাস। সুসংগঠিত করে তোলার বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের সূচনা করলেন তিনি। পাশে পেলেন আনন্দ চন্দ্র চক্রবর্তীকে।

সংগঠনের শুরুতেই ঢাকা সহ বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিন বিহারীর নেতৃত্বে প্রায় আশি জন যুবক মাতৃমন্ত্রে দীক্ষা নিলেন। ১৯০৬ এর সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা অনুশীলন সমিতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠলো ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে। প্রশাসনিক সংস্কার ও বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে পূর্ববাঙলা ও অসম প্রদেশকে নিয়ে একটি বিশেষ অঞ্চল গঠন করে। ১৯০৬ এর ৬ই ডিসেম্বর সেখানকার দায়িত্ব প্রাপ্ত ছোটলাট ট্রেনে চড়ে ভ্রমণে বেরোয়। সেই সময় বিপ্লবী দল বোমা মেরে রেল ট্র্যাক উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। আবার ২৩শে ডিসেম্বর ঢাকার প্রাক্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ অ্যালেনকে গোয়ালন্দে হত্যার উদ্দেশ্যে আচমকা আক্রমণ হানলে প্রমাদ গুণে ইংরেজ বাহিনী। এখান থেকেই শুরু হয়ে গেল মহাসংগ্ৰামের প্রস্তুতি। এই মহাসংগ্ৰামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আগুন পাখি কিম্বা ব্রিটিশ নিধন যজ্ঞের পুরোহিত- হেমচন্দ্র কানুনগো’র কথা বলতেই হয়। শৈশবে যাঁর মন জুড়ে ছিল ছবি আঁকার স্বপ্ন। সেই মেদিনীপুরের রাধানগর গ্ৰামের ছেলেটিই নির্বাচিত হলেন বিদেশে সামরিক ও বিষ্ফোরক নির্মান সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য।

অন্যদিকে শুরু হলো তহবিল গড়ার কাজ। বিপ্লবী কর্মকান্ডের জন্য চাই টাকা। সেই তহবিলের জন্য বারীণের দেখানো পথে হাঁটা শুরু করলেন সমিতির কয়েকজন হার্ডকোর সদস্য। বারীণের নির্দেশে পাঁচজন সদস্য গেলেন পাটনার বাঁকীপুরে। এই ঘটনাটি এন্ড্রুফ্রেজার অ্যাকশনের দশদিন পরের কথা। বাগান বাড়ি থেকে বিভূতিভূষণ, উল্লাসকর, প্রফুল্ল চাকী, সতীশ সরকার এবং উপেন্দ্রনাথ  রওনা হলেন বাঁকীপুরের পথে।

(চলবে)

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version