বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে পৌঁছানো স্বপ্ন বহু অভিযাত্রীর; কিন্তু সেই স্বপ্নের চূড়া বহুদিন ধরেই আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। অভিযাত্রীদের ফেলে দেওয়া অক্সিজেন সিলিন্ডার, খাবারের প্যাকেট, তাঁবু ও অন্যান্য বর্জ্য এখানে জমা হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। এইসব আবর্জনার স্তূপ যেমন পরিবেশের ক্ষতি করছে, তেমনি নষ্ট করছে এভারেস্টের সৌন্দর্যকেও। এবার এই সমস্যার সমাধানে এক নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। ড্রোন দিয়ে এখন এভারেস্টের দুর্গম এলাকা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

প্রায় ৬ হাজার ৬৫ মিটার বা ১৯ হাজার ৮৯৮ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এভারেস্টের ক্যাম্প ওয়ান থেকে আবর্জনা এখন ড্রোনের সাহায্যে বেজক্যাম্পে নামানো হচ্ছে। ক্যাম্প ওয়ান থেকে বেজক্যাম্প প্রায় ৭০০ মিটার নিচে। তবে এবার এই সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোনের সাহায্যে। সম্প্রতি, শেরপারা দুটি বড় এসজেড ডিজেআই (SZ DJI) নামের প্রযুক্তি কোম্পানির ড্রোন থেকে সাহায্য পাচ্ছেন। এই ড্রোনগুলো মাত্র ছয় মিনিটেই সেই কঠিন পথ পাড়ি দিতে পারে। ড্রোন ব্যবহারের মাধ্যমে এভারেস্ট চূড়ায় জমে থাকা আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ অনেক সহজ হয়ে উঠেছে।

এর আগে মাউন্ট এভারেস্টে পর্বতারোহীরা যেসব আবর্জনা ফেলে যেত তার মধ্যে অক্সিজেনের খালি সিলিন্ডার, খাবারের প্যাকেট, ভাঙা মই ও মানুষের মলও থাকতো। এই মলগুলো একটি বড় সমস্যা। কারণ, এভারেস্টের চূড়ায় মাইনাস ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেগুলো বরফ হয়ে যায়। মাটির সঙ্গে মিশে যায় না। এসব আবর্জনা শেরপাদের নিজেদেরই নিচে বয়ে আনতে হযত। একজন শেরপা প্রায় ২০ কিলোগ্রাম আবর্জনা কাঁধে নিয়ে চার ঘণ্টা ধরে বিপজ্জনক হিমবাহ ও ফাটল পেরিয়ে বেজক্যাম্পে ফিরে আসেন। এভারেস্টে আবর্জনা সংগ্রহ করে সাগরমাথা পলিউশন কন্ট্রোল কমিটি। তারা জানিয়েছে, ‘এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি ড্রোনগুলো ২৮০ কিলোগ্রামের বেশি আবর্জনা সরিয়েছে এভারেস্টের চূড়া থেকে।’ এভারেস্ট এত আবর্জনায় জমেছে যে এটিকে এখন ‘বিশ্বের আবর্জনার সর্বোচ্চ স্তূপ’ বলা হচ্ছে। ড্রোন ব্যবহারের ফলে কাজ দ্রুত হচ্ছে। বহু বছর ধরে ভারী আবর্জনা বহনের যে বিপদ শেরপাদের ছিল, তা–ও কমছে। ২০১৯ সাল থেকে নেপালি সেনাবাহিনী ও শেরপারা মিলে পাহাড় ও এর আশপাশের কিছু চূড়া থেকে ১০০ টনের বেশি বর্জ্য সরিয়েছেন। গত ১০ বছরে সেখানকার সরকার একটি নিয়ম করেছে।

৩৩ বছর বয়সী শেরপা লাকপা নুরু ১৫ বার এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন। তিনি জানান, ‘আমরা খুব খুশি। সাধারণত আমাদের দল যে আবর্জনা বয়ে আনত, এ বছর তার প্রায় ৭০ শতাংশই ড্রোনের মাধ্যমে নামানো হয়েছে। ক্যাম্প ওয়ান থেকে নামার সময় যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে, তখন আবর্জনার দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এ গন্ধের কারণে কিছু শেরপার শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। আমরা আরও বেশি ওজন বহন করতে পারে, এমন ড্রোন চাই।’ ১৯৯০ সাল থেকে যখন এভারেস্টের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তখন থেকেই ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উঁচু এই পর্বতে আবর্জনা জমতে শুরু করে। প্রতিবছর এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত যে সময়টায় পাহাড়ে ওঠা যায়, তখন হাজার হাজার মানুষ বেজক্যাম্পে আসে। যদিও এদের মধ্যে মাত্র কয়েক শ জন চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করে।

এভারেস্টে আবর্জনার সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ওপরের দিকের ক্যাম্পগুলোতে। কারণ, সেখানে যাওয়া ও পরিষ্কার করা খুব কঠিন। ২০১৯ সাল থেকে নেপালি সেনাবাহিনী ও শেরপারা মিলে পাহাড় ও এর আশপাশের কিছু চূড়া থেকে ১০০ টনের বেশি বর্জ্য সরিয়েছেন। গত ১০ বছরে সেখানকার সরকার একটি নিয়ম করেছে। যাঁরা বেজক্যাম্পের ওপরে যাবেন, তাঁদের প্রত্যেককে কমপক্ষে ৮ কিলোগ্রাম আবর্জনা নিচে নামিয়ে আনতে হবে। যদি কেউ তা না করে, তাহলে তাদের জমা দেওয়া চার হাজার ডলার বাজেয়াপ্ত করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এভারেস্ট পরিষ্কার করা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, বরফ গলে যাওয়ায় কয়েক দশক ধরে জমে থাকা পুরোনো আবর্জনাগুলো বেরিয়ে আসছে। এই আবর্জনাগুলো নিচের গ্রামগুলোর পানি দূষিত করতে পারে। এতে কলেরার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ছে সেখানে। এ বিপদ ঠেকাতে গত বছর স্থানীয় কর্মকর্তারা নিয়ম করেছেন যে পর্বতারোহীদের নিজেদের মল-মূত্র ‘ডগি ব্যাগ’-এ ভরে বেজক্যাম্পে নিয়ে আসতে হবে।

এভারেস্টে আবর্জনা সংগ্রহ করে সাগরমাথা পলিউশন কন্ট্রোল কমিটি। তারা জানিয়েছে, ‘এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি ড্রোনগুলো ২৮০ কিলোগ্রামের বেশি আবর্জনা সরিয়েছে এভারেস্টের চূড়া থেকে।’ এভারেস্ট এত আবর্জনায় জমেছে যে এটিকে এখন ‘বিশ্বের আবর্জনার সর্বোচ্চ স্তূপ’ বলা হচ্ছে। ড্রোন ব্যবহারের ফলে কাজ দ্রুত হচ্ছে। বহু বছর ধরে ভারী আবর্জনা বহনের যে বিপদ শেরপাদের ছিল, তা–ও কমছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এভারেস্ট পরিষ্কার করা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, বরফ গলে যাওয়ায় কয়েক দশক ধরে জমে থাকা পুরোনো আবর্জনাগুলো বেরিয়ে আসছে। এই আবর্জনাগুলো নিচের গ্রামগুলোর পানি দূষিত করতে পারে। এতে কলেরার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ছে সেখানে।