কলকাতা ব্যুরো: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের একত্রিত করার কাজ শুরু করে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তাঁর নেতৃত্বেই এক ছাতার তলায় চলে এলো ১৭টি বিরোধী দল। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েই শরদ পওয়ার, অখিলেশ যাদব, মেহেবুবা মুফতির, মল্লিকার্জুন খাড়গের মতো নেতারা একজোট হয়ে গেলেন। মমতার ডাকা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একজোট হয়ে প্রার্থী দেবে বিরোধী শিবির।

বুধবার মমতার ডাকা বৈঠকে কংগ্রেস এবং বামেদের প্রতিনিধিরাও হাজির ছিলেন। আম আদমি পার্টি, টিআরএস, অকালি দল, বিজেডি এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেস ছাড়া প্রায় সব বিজেপি বিরোধী দলই এই বৈঠকে যোগ দেয়। বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন শরদ পওয়ার। প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠক শেষে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে বিরোধীরা। যাতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী দিতে চায়। এমন একজনকে প্রার্থী করতে চায় যিনি ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করবেন। এবং এই সরকার যাতে আর দেশের ক্ষতি করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিন বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল নেত্রী জানিয়ে দেন, ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের প্রার্থী হিসাবে বৈঠকে উপস্থিত সব দল একযোগে শরদ পওয়ারের নাম প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তবে, আগামী দিনে পওয়ারকে ফের প্রার্থী হওয়ার জন্য বোঝানো হবে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন মমতা। শেষ পর্যন্ত তিনি রাজি হলে সব বিরোধী দল তাঁকে সমর্থন করবে। না হলে বিকল্প প্রার্থীর কথা ভাবা হবে।

উল্লেখ্য, বিরোধীদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে শরদ পওয়ারকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও শেষপর্যন্ত তিনি রাজি হননি। মঙ্গলবার মমতার সঙ্গে একান্ত বৈঠকেই এনসিপি সুপ্রিমো জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি প্রার্থী হতে চান না। আরও কিছুদিন সক্রিয় রাজনীতি চালিয়ে যেতে চান। বুধবারের বৈঠকে সব বিরোধী দল তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চেপে ধরলেও সেই একই কথা বলেন পওয়ার।

মমতা এদিন বলেন, নরেন্দ্র মোদি সরকার দেশের ঐক্যকে ভেঙে দিচ্ছে৷ সংবিধানকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে ৷ এর বিরুদ্ধে আমাদের জোট বেঁধে লড়াই করতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে বিরোধীদের একজোট হওয়ার দরকার রয়েছে ৷ তাঁদের একমঞ্চে বসার দরকার ছিল ৷ আগামিদিনেও দরকার আছে ৷ আজ সেই কাজ শুরু হল ৷

তৃণমূল সুপ্রিমো আরও বলেন, বিজেপির সরকার দেশের সর্বনাশ করছে ৷ দেশকে বাঁচাতে হবে ৷ দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে৷ সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে ৷ এই সরকার নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশকে ‘বুলডোজ’ করছে ৷ এর বিরুদ্ধে বিরোধীদের একজোট হতে হবে ৷ একসঙ্গে বসে লড়াইয়ের রূপরেখা আঁকতে হবে ৷ একসঙ্গে বসে আলোচনার খুব দরকার ছিল ৷ আজ সেই কাজ শুরু হলো ৷ আমাদের এখনও অনেকটা পথ চলতে হবে ৷ আগামিদিন বিজেপি বিরোধী এই জোটকে আরও বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে ৷ শক্তিশালী করতে হবে ৷ মজবুত করতে হবে ৷

মমতার কথায়, বিজেপির হাত থেকে, মোদির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চের খুব দরকার ৷ আজকের বৈঠকে মমতার আমন্ত্রিত পাঁচটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন না ৷ এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রীর ব্যাখ্যা, এতগুলো বিরোধী দলের নেতা এসেছেন ৷ এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা ৷ এতগুলো বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের একসঙ্গে কোনও মঞ্চে এর আগে দেখা যায়নি ৷ যাঁরা আসেননি তাঁদের অনেক কাজ ছিল ৷ আমরা আলোচনা করেছি ৷ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য আসতে পারেননি বলে জানিয়েছেন ৷ রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার আগে প্রতিটি বিজেপি বিরোধী দলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেব৷

তবে এদিনের বৈঠক শেষে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পওয়ার রাজি না হলে সেই ঐক্যবদ্ধ প্রার্থীটি কে হবেন? ইতিমধ্যে ভেসে আসছে একাধিক নাম। পওয়ারের বিকল্প হিসাবে প্রথম যে নামটি ভেসে আসছে সেটি হল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। সূত্রের দাবি, বিরোধীদের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নামটি প্রস্তাব করেন। গান্ধী পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল। একাধিক দেশে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হিসাবে কাজ করেছেন। তাঁর আরও একটি পরিচয় হল তিনি গান্ধীজির দৌহিত্র। কংগ্রেস এবং তৃণমূল দুই শিবিরের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক ভালো। এর আগে ২০১৭ সালে উপরাষ্ট্রপতি পদেও লড়াই করেছেন তিনি। যদিও রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হওয়া নিয়ে তাঁর বক্তব্য, এখনই এ নিয়ে কিছু বলার সময় আসেনি।

Meeting with Opposition Parties in Delhi

Meeting with Opposition Parties in Delhi

Posted by Mamata Banerjee on Wednesday, June 15, 2022

বিরোধীদের প্রার্থী হিসাবে আরেকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তিনি হলেন ফারুখ আবদুল্লাহ। সূত্রের দাবি কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও মমতার পছন্দের তালিকায় রয়েছেন। এদিনের বৈঠকে তাঁর নামও প্রস্তাব করেন মমতা। কিন্তু ফারুখের ছেলে ওমর আবদুল্লাহই রাষ্ট্রপতি পদে কারও নাম নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হননি।

এছাড়াও বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হিসাবে তৃতীয় আরেকজনের নাম ভাসছে। তিনি হলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া। তিনি নিজেও এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। যদিও তাঁর নাম নিয়ে এদিন আলোচনা হয়নি বলেই শোনা যাচ্ছে।

তবে এদিনের বৈঠকে একটা জিনিস ঠিক হয়ে গিয়েছে। সেটা হল, বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দেবে। সেক্ষেত্রে প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা পরে হবে। ২১ জুন তারিখটিকে প্রার্থী ঘোষণার ডেডলাইন হিসাবে ঠিক করা হয়েছে। সেদিন ফের বৈঠকে বসবে বিরোধী শিবির।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version