৪৩ বছর আগের ৮ ডিসেম্বর, সেই শীতের রাতে আততায়ীর গুলি চিরদিনের মতো স্তব্ধ করে দিয়েছিল তাঁকে। সারা দুনিয়াকে প্রায় থমকে দেওয়া সেই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ফের চর্চা সেই ডিসেম্বর মাসেই। দুদিন আগেই অ্যাপল টিভি প্লাসে মুক্তি পেয়েছে সেই মৃত্যু নিয়ে তিন পর্বের তথ্যচিত্র সিরিজ ‘জন লেনন: মার্ডার উইদআউট আ ট্রায়াল’।

লেননের মৃত্যু হয়েছিল তাঁর এক ভক্ত মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যানের গুলিতে। নতুন এই তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে তাঁর মৃত্যু ও পরবর্তী অবস্থা। এই সিরিজে আইনজীবীর সঙ্গে আততায়ী চ্যাপমানের আলাপচারিতার বেশ কিছু অডিও ক্লিপ জায়গা দেওয়া হয়েছে, যাতে ‘জন লেনন: মার্ডার উইদআউট আ ট্রায়াল’কে ভিন্ন মাত্রা দেয়।

এ ছাড়া সিরিজটিতে রয়েছে এমন কিছু ফুটেজ, যা আগে কখনো প্রচারিত হয়নি। আছে প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান, দুর্ঘটনাস্থলের দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র। সিরিজটিতে ডেভিড চ্যাপম্যান কেন লেননকে হত্যা করলেন, সেটাও তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে, আলাদাভাবে গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর মানসিক অবস্থার বিষয়টি। তাই আততায়ীর আইনজীবী ছাড়াও আছেন তাঁর মনোবিদের সাক্ষাৎকার।

এ ছাড়া আছে অন্য আইনজীবী, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদেরও কথা। সব মিলিয়ে ৪৩ বছর পিছিয়ে গিয়ে ১৯৮০ সালের ৮ ডিসেম্বর আগে ও পরের ঘটনার আদ্যন্ত বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন দুই নির্মাতা রব কোল্ডস্ট্রিম ও নিক হল্ট। তবে বেশির ভাগ সমালোচকের মত, তথ্যচিত্র সিরিজ হিসেবে এটি নতুন কোনো মাত্রা যোগ করতে পারেনি; বরং গায়কের মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’কেই উসকে দিয়েছে।

এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় যখন মাকে হারালেন, তখন তাঁরমাত্র ১৮ বছর। সেই দুঃসহ পরিস্থিতিতে গানকেই বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন করে নিলেন। সঙ্গে ছিলেন দুই প্রিয় বন্ধু পল ম্যাককার্টনি আর জর্জ হ্যারিসন। তাঁরা লিভারপুল ইনস্টিটিউটের, আর তিনি পড়তেন কেয়ার ব্যাক স্কুলে। জর্জ গিটার বাজান, পল আর তিনি মিলে গান লেখেন। ড্রাম বাজান জনি হাচ। কয়েক মাসের মধ্যে এই চারজন মিলে তৈরি করলেন গানের দল ‘কোয়ারিম্যান’। দু’বছর পর কোয়ারিম্যান গান গাইতে গেল জার্মানির হ্যামবুর্গে। ততদিনে ড্রামার হ্যাচের জায়গায় এসেছে রিঙ্গো স্টার। ১৯৬০-এ কোয়ারিম্যান নামটা পালটে রাখা হলো ‘বিটলস্’। হ্যামবুর্গের সফরের পর ক্যাভার্ন ক্লাব থেকে শুরু করে বিবিসি রেডিও, পার্লোফোন রেকর্ড, টেলিভিশন- সর্বত্র শুধু বিটলস্ আর বিটলস্।

১৯৬৪ সালেই বিটলস্ মন জয় করে নেয় আমেরিকার শ্রোতাদের। ১৯৬৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আমেরিকায় পৌঁছলো বিটলস। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে ব্যান্ডের সদস্যরা পেলো বিশাল সম্বর্ধনা। দু’দিন পর টিভি শো। ৭৪ মিলিয়ন দর্শক দেখেছিল সেই শো। আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বিক্রির রেকর্ড সেবার ‘আই ওয়ান্ট টু হোল্ড ইউর হ্যান্ড’, লেনন-ম্যাককার্টনির অমর সৃষ্টি। হিথ্রো বা ফ্রাঙ্কফুর্ট, সর্বত্র এয়ারপোর্টে এই তরুণদের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে কাতারে কাতারে উৎসুক জনতা।

১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকা গেল। জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পা রাখা মাত্র পেল বিপুল সম্বর্ধনা। দু’দিন টিভি শো দেখলো ৭৪ মিলিয়ন দর্শক। আমেরিকার শ্রোতাদের মনজয় করে নিল বিটলস। আমেরিকার সবচেয়ে বেশি বিক্রির রেকর্ড সেবার ‘আই ওয়ান্ট টু হোল্ড ইউর হ্যান্ড’, লেনন-ম্যাককার্টনির অমর সৃষ্টি। বিভিন্ন এয়ারপোর্টে চার তরুণের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে কাতারে কাতারে বিটলসপ্রেমী মানুষ। বিটলস্ মানেই লেনন আর লেনন মানেই একটা যুগ। গান বাজনার প্রচলিত সব আগল ভেঙে দিলেন পঁচিশ বছর বয়সী এক যুবক। ১৯৬৫ সালের মহারানীর তরফ থেকে বিটলসকে দেওয়া হল এমবিই মেডেল। কিন্তু চার বছর পর লেনন ভিয়েতনামের যুদ্ধে ব্রিটেনের আমেরিকাকে সমর্থনের প্রতিবাদে তাঁর মেডেল মহারানীকে ফিরিয়ে দিলেন।

যেখানেই যুদ্ধ, দাঙ্গা, বর্ণবিদ্বেষ সেখানেই লেননের প্রতিবাদ। তিনিই তখন প্রতিবাদী তরুণদের মুখপাত্র। অথচ নিজের বৈশিষ্ট্যতা থেকে একচুলও সরেননি। কখনো কখনো নিউ ইয়র্কের প্রাসাদোপম বাড়ি ছেড়ে থেকেছেন বিট কবিদের আস্তানা গ্রিনউইচ ভিলেজে। জ্যাক কেরুয়াক, অ্যালেন গিনসবার্গ বা গ্রেগরি করসোর মতো তিনিও কবিতা লিখেছেন, তাতে সুর দিয়ে বেঁধেছেন গান। ১৯৭০ পেরতে না পেরতেই বিটলসের জয়যাত্রা থমকে যায়। নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সংঘাত শুরু হয়ে যায়। লেনন নিজের মতো করে কাজ করার লক্ষ্যে বিটলস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরই দলের ভাঙন শুরু হয়ে যায়। তার আগে জনপ্রিয় সঙ্গীতের ইতিহাসে সবচেয়ে বাণিজ্য সফল ব্যান্ড হয়ে উঠেছিল বিটলস। ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া জুড়ে কেবল তাদেরই জয়জয়কার। ‘অল ইউ নিড ইজ লাভ’; ‘স্ট্রবেরি ফিল্ডস ফরএভার’ ইত্যাদি গান তখন মানুষের মুখে মুখে।

ফোর ফ্যাভস’-এর ‘ইন মাই লাইফ, হেল্প!’, ‘ইউ’ভ গট টু হাইড ইউর লাভ অ্যাওয়ে’, ‘নরওয়েজিয়ান উড’, ‘টুমরো নেভার নোজ’, ‘আই অ্যাম দ্য ওয়ালরুস’, ‘স্ট্রবেরি ফিল্ডস ফরেভার’, ‘হ্যাপিনেস ইজ আ ওয়ার্ম গান’, ‘কাম টুগেদার’ যেমন জনপ্রিয় তেমনি লেননের ‘ইনস্ট্যান্ট কর্মা’, ‘মাদার’, ‘গিভ পিস আ চান্স’, ‘মাইন্ড গেমস’, ‘হ্যাপি ক্রিস্টমাস’, ‘জেলাস গাই’ আর ‘ইমাজিন’ তো তুলনাহীন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version