কলকাতা ব্যুরো: বেঁচে থাকার জন্য আমরা একাধিক ফল ও সবজিকে নিজেদের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে থাকি। তবে এই ফল ও সবজি রান্না করার ও খাওয়ার একটি পদ্ধতি রয়েছে। যে বিষয় আমরা অনেকেই অসচেতন। কিছু কিছু সবজি বা ফল কাঁচা খেলে উপকার হয়, আবার কিছু ফল ও সবজি আছে, যা নানান পদ্ধতিতে রেঁধে খাওয়া উচিত। এখানে এমনই কয়েকটি সবজি ও ফল সম্পর্কে জানানো রইল।
ব্রকোলি- অনেকেই ব্রকোলি খেতে পছন্দ করেন। তবে সেদ্ধ করে বা ভেজে ব্রকোলি খেলে এর সমস্ত পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। তাই ব্রকোলিকে সব সময় স্টিম বা ভাপে সেদ্ধ করে খাওয়া উচিত। ব্রকোলিকে স্টিম করলে এর মধ্যে উপস্থিত গ্লুকোসাইনোলেটের মতো যৌগিক উপাদান নষ্ট হয় না। ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগের হাত থেকে গ্লুকোসাইনোলেট মানুষের শরীরকে রক্ষা করে।
রসুন- রসুনের মধ্যে সেলেনিয়ম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বর্তমান, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে। সাধারণত আমরা প্রত্যেকেই রসুন বেটে বা কুচিয়ে মশলা হিসেবে ব্যবহার করি ও এটিকে ভালো ভাবে রান্না করে ফেলি। রসুনের সমস্ত পুষ্টিগুণের লাভ পেতে চাইলে কাঁচা খাওয়াই শ্রেয়।
মাশরুম- এতে ক্যালরি কম থাকে এবং ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। মাশরুমে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান বজায় রাখার জন্য এটিকে স্টিম বা প্রেসার কুক করে খাওয়া উচিত। মাশরুমকে যদি তাড়াতাড়ি রেঁধে ফেলা যায়, তা হলে এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ আরও বাড়ে।
টমেটো- সতেজ টমোটে রান্না করে খেলে এতে উপস্থিত লাইকোপিন ভালো ভাবে শরীরের কাজে লাগে। টমেটোয় উপস্থিত লাইকোপিন নামক এই প্রাকৃতিক উপাদানটি হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো অসুখ থেকে সুরক্ষিত রাখে। বাজার থেকে কিনে আনা টমেটো সসের পরিবর্তে বাড়িতে তৈরি সস খাওয়া ভালো।
গাজর- প্রাকৃতিক ক্যারোটিনয়েড পাওয়া যায় গাজরে। যা দৃষ্টিশক্তির জন্য অত্যন্ত উপকারী। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের হাত থেকেও শরীরকে মুক্ত রাখে। লাইকোপিনের মতো ক্যারটিনয়েডও রান্না করলে খেলে শরীরের সঙ্গে ভালো ভাবে মিশে যায়। তবে অত্যধিক পরিমাণে এর পুষ্টিকর উপাদান গ্রহণের জন্য গাজরকে ভাপে রান্না করা উচিত। সামান্য সাতলেও এটি খাওয়া যায়।
সতেজ ফল- সতেজ ফল ফাইবার ও ভিটামিন সি-তে ভরপুর। এতে ক্যালরিও কম থাকে। ব্লুবেরি, আঙুর ও আপেলের মতো ফল টাইপ ২ ডায়বিটিজের সম্ভাবনা হ্রাস করে। ফলের রসের তুলনায় এগুলিকে গোটা খাওয়া শরীরের পক্ষে অধিক উপযোগী। বাজারজাত জুসে ফাইবার থাকে না এবং এগুলিতে অধিক পরিমাণে চিনি থাকে, যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
লাল আলু- ফাইবার, ভিটামিন এ ও সি, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামে সমৃদ্ধ লাল আলু হাড়ের মজবুতির জন্য উপযোগী। এটিকে খোসা-সহ সেঁকে বা বেক করে খেলে এর সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণের লাভ পেতে পারেন।
উল্লেখ্য, সবজি রান্নার সময় জল ও অধিক তাপমাত্রার ফলে এতে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান কিছুটা কমে যায়। সামান্য সাঁতলে নিলে এর উপাদানগুলি বজায় থাকে। আবার মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে সবজিতে উপস্থিত ভিটামিনও শরীর গ্রহণ করতে পারে। অন্য দিকে, ভাপে রান্না করলে এতে তেল বা মাখনের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়া যায়। উপরন্তু ভিটামিন ও খনিজ উপাদানও সঠিক পরিমাণে উপস্থিত থাকে। তবে কেল, ক্যাপসিকাম ও বাধাকপি উচ্চ তাপমাত্রায় ভাপে রান্না করলে এর পুষ্টি উপাদানগুলি কমে যায়। এই সবজিগুলিকে রান্না করে খাওয়ার পরিবর্তে স্যালাড হিসেবে খাওয়াই শ্রেয়।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version