কলকাতা ব্যুরো: রাজা হননি তিনি। জীবনভর কিং মেকার শিয়ালদহের ছোড়দা। প্রদেশ কংগ্রেসের সর্বময় কর্তার পদ থেকেই চিরবিদায় ঘটল সোমেন মিত্রের। তৃণমূলের জন্মের অন্যতম কারণও তিনি। তাঁর সঙ্গে বিরোধে তৃণমূল গড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে কিছুদিন তাঁর হাত ধরলেও জীবন সায়াহ্নে ফিরে গিয়েছিলেন কংগ্রেসে। রাজ্য-রাজনীতিতে একসময় প্রিয়-সুব্রত জুটি ছিল রাইটার্সের মাথাব্যাথার কারণ। তাঁদের পিছনে মস্তিষ্ক ছিল সোমেন মিত্রের। অথচ জনশ্রুতি আছে, তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল রাইটার্সের তৎকালীন মাথার সঙ্গে। অথচ সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিরোধী রাজনীতির মুখ তখন সোমেন মিত্র। জেলায় জেলায় সিপিএমের লালবাহিনীর কাউন্টার করতে তাঁর হাত ধরেই উঠে এসেছিলেন অধীর চৌধুরী, শঙ্কর সিংয়ের মতো দাপুটে নেতারা। মস্তান বলে যাঁদের পরিচিতি কারও অজানা ছিল না। মস্তান ভাবমূর্তি সোমেনেরও ছিল। কিন্তু সাদা ধপধপে ধুতি, পাঞ্জাবি, সাদা চটি, গলায় সোনার চেনে একেবারে বাঙালি ভদ্রলোক হয়েই সারা জীবন কাটালেন। তাঁর মুখ থেকে আজকের অনেক নেতার মতো কেউ কখনও বিরোধীদের সম্পর্কে কুকথা শোনেননি। নিজের চরম দুঃসময়েও কাদা ছোড়াছুড়ির পথে কেউ তাঁকে দেখেননি।

রাজা হননি তিনি। জীবনভর কিং মেকার শিয়ালদহের ছোড়দা। প্রদেশ কংগ্রেসের সর্বময় কর্তার পদ থেকেই চিরবিদায় ঘটল সোমেন মিত্রের। তৃণমূলের জন্মের অন্যতম কারণও তিনি। তাঁর সঙ্গে বিরোধে তৃণমূল গড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে কিছুদিন তাঁর হাত ধরলেও জীবন সায়াহ্নে ফিরে গিয়েছিলেন কংগ্রেসে।


তিনি যদি ‘৯২ সালে প্রদেশ সভাপতি পদের জন্য ভোটের রাস্তায় না হাঁটতেন, তাহলে হয়তো তৃণমূল কংগ্রেসই তৈরি হত না। জেলায় জেলায় এখন তৃণমূলের পতাকা তোলা নেতাদের একটা বিরাট সংখ্যাকেই একসময় পরিচয় করানো হতো সোমেনদার লোক বলে। তারপর কালের নিয়মে তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বড় নৌকায় চেপে বসেছেন। শেষ পর্যন্ত সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন সোমেন মিত্রও। আর মমতা তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন একদা শত্রু শিবিরের সেনাপতির তরবারি নিজের পায়ের কাছে পড়ে থাকার অহংকার। আমার নেত্রী মমতা বলে ঘাসফুলের পতাকা হাতে তুলেছেন সোমেন।

ডায়মন্ড হারবার থেকে সংসদে গেছেন। আবার রাজ্যে সে দল ক্ষমতায় আসার পর তিনি ফিরেছেন বিধান ভবনে।
সাতবারের বিধায়ক, একবারের সাংসদ, তিনবারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হলেও সোমেন সবসময়ই শিয়ালদহের বাসিন্দাদের কাছের মানুষ। বাম আমলেও ওই এলাকা ছিল তাঁর তৎপর খাসতালুক। এলাকার যৌনপল্লি থেকে বৌবাজারের মুটে-সবজি বিক্রেতা, সবার সমস্যা শুনেছেন ছোড়দা। অথচ সমাধান হয়নি, এমন লোক কম পাওয়া যাবে। মস্তান থেকে মাস্টার-কেউই তাঁর কাছে ফ্যালনা ছিল না। উত্তর বা দক্ষিণ শহরতলি থেকে কলকাতায় ঠাকুর দেখতে ট্রেনে শিয়ালদহ স্টেশন নেমে সোমেন মিত্রের দুর্গা পুজো না দেখে পথে পা রেখেছেন, এমন মানুষের খোঁজ চলতে পারে।কালীঠাকুরের স্বঘোষিত ভক্ত তিনি। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে কাটিয়ে গেলেন বর্ণময় জীবন।

এলাকার যৌনপল্লি থেকে বৌবাজারের মুটে-সবজি বিক্রেতা, সবার সমস্যা শুনেছেন ছোড়দা। অথচ সমাধান হয়নি, এমন লোক কম পাওয়া যাবে। মস্তান থেকে মাস্টার-কেউই তাঁর কাছে ফ্যালনা ছিল না।


বর্তমান রাজনীতিতে যিনি বিরোধীদের সম্পর্কে কিছু বললেই বিতর্ক বাধে, সেই বিজেপি সাংসদ তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য না বললে লেখা মনে হয় অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
এ দিন দিলীপ বাবুর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনীতির পরম্পরা ছিল, তা ধরে রেখেছিলেন যে সামান্য কয়েকজন, সোমেনদা তাঁদের একজন

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version