মশলা নেই। অ্যাকশন বা আইটেম সং কিছুই নেই। তবে ? গল্প আছে। সুন্দর, নিটোল। আর অভিনয়। অমিতাভ বচ্চন ও আয়ুষ্মান খুরানার গল্প। তবে সত্যি বলতে কি, এরা কেউই নায়ক নন। এখানে নায়ক লখনউ শহর আর ভেঙ্গে পড়া হাভেলি। এই হাভেলি আর শহর পুরাতনের প্রতীক যেন। এদের কেন্দ্র করেই গল্পের এগিয়ে যাওয়া। মির্জা সাহেব ( অমিতাভ বচ্চন) আর বাঁকের ( আয়ুষ্মান খুরানা) খিটির মিটির , ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। দুজনেই যেন কাঠ পুতলি – গুলাব সিতাবো। বেশ কিছুদিন হলো অ্যামাজন প্রাইম এ রিলিজ হয়েছে “গুলাব সিতারো” ছবিটি। পরিচালনা সুজিত সরকারের।

খানদানি প্রাসাদ। কিন্তু বর্তমানে খন্ডহার। এক কালে এর কতই না কদর ছিল। দেখানো হয় নি কোথাও। তবে দেখে বোঝা যায়। লখনউ শহরের মতোই অবহেলায়, অনাদরে পরে আছে । বুড়ো হয়ে গেলে আর কোনো দাম থাকে না। না শহর, না হাভেলি, না মানুষের। বিশেষত সাধারণ মানুষের বৃদ্ধাবস্থায় ভারতবর্ষে কোনো কদর আর সন্মান নেই। এটাই ট্র্যাজেডি। এই ট্র্যাজেডিই দেখাতে চেয়েছেন পরিচালক সুজিত এবং লেখিকা জুহি চতুর্বেদী। হাস্যরস আছে। তবে সিচুয়েশনাল কমেডি যা ক্ষেত্র বিশেষে বিদ্রুপের বা স্যাটায়ারের চেহারা নিয়েছে। এ ধরনের ছবি বলিউডে বিরল।

এখানে মির্জা একেবারে সাদামাটা চরিত্র। বাঁকে ও। মির্জা হাভেলির মালিক আর অনেক ভাড়াটের মধ্যে বাঁকে একজন। তবে মির্জার এখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মির্জা পৈতৃক সূত্রে হাভেলি পায় নি। মির্জা এমনিতে লোভী আর চশমখোর। বেগম সাহেবাকে বিয়ে করেছিল সম্পত্তির লোভে। বেগমকে বিয়ের পরই সে বাড়ির মালিক হয়ে বসে। কয়েক ঘর ভাড়াটে। তাদের আবার বড় উপদ্রব। কেউ এক পয়সা ভাড়া বাড়ায় না বছরের পর বছর। বাঁকে আবার আর এক কাঠি ওপরে। ভাড়া তো বাড়াবেই না, পারলে ভাড়া কি করে না দিয়ে বাড়ি দখল করা যায় সেই অপেক্ষায় বসে থাকে। আর মির্জার লোভ ও বাড়তে থাকে আশি বছর বয়সে। মির্জা ভাবে বেগম মরলে পুরো বাড়ির মালিকানাই পেয়ে যাবে সে। বেগম মির্জার থেকে বয়সে অনেক বড়ো। বুঝতে পারে সব। খুব একটা বলে না কিছু। মির্জা তোয়াজ করে চলে বেগমকে।

ইতিমধ্যে বাড়ির দখল নিতে তৈরি হয় আর্কিওলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট। আর প্রমোটারদের উপদ্রব তো লেগেই আছে। কি হবে এই প্রাসাদসম বাড়ির ? এই সবের মধ্যেই অনর্থ ঘটে যায়। বেগম মির্জার ব্যবহার আর নিচ মানসিকতায় রুষ্ট হয়ে একটা চিঠি লিখে ভেগে পরে তার পুরানো প্রেমিকের কাছে। বাকিটা জানতে হলে দেখতে হবে প্রাইম ভিডিওতে গুলাব সীতাবো। অসাধারণ অমিতাভের অভিনয়। এই বুড়ো হারেও ভেলকি দেখিয়েছেন। তাকে দেখে এখনকার সালমান – শাহরুখের এখনো অনেক শেখার বাকি আছে। মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি, পাজামা আর ফতুয়া পরে এই আশির কোঠায় এসেও এমন অভিনয় বিস্মিত করবে অনেককেই।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version