কলকাতা ব্যুরো- প্ররোচনামূলক মন্তব্যের কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী প্রচারে ২৪ ঘণ্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করল নির্বাচন কমিশন। সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচন সংক্রান্ত কোনওরকম প্রচার করতে পারবেন না তিনি। কমিশনের এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর মমতা টুইট করে জানিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গাঁধী মূর্তির নীচে ধর্নায় বসবেন মঙ্গলবার।

ফলত, মমতার মঙ্গলবারের সমস্ত প্রচার কর্মসূচি বাতিল হল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে মঙ্গলবার মুঘ্যমন্ত্রীর বারাসত, বিধাননগর, হরিণঘাটা ও কৃষ্ণগঞ্জে সভা করার কথা ছিল। শনিবার কোচবিহারের শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যুর পরে রবিবার সেখানে যাবেন বলে ঘোষণা করেছিলেন মমতা। সেই ঘোষণার পরেই কমিশন ৭২ ঘণ্টার জন্য যে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের শীতলখুচিতে যাওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এর পরে মমতার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা। তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটাটাই হচ্ছে বিজেপি-র নির্দেশে।

গত ৩ এপ্রিল মমতা হুগলির তারকেশ্বরের সভা থেকে আইএসএফ-এর আব্বাস সিদ্দিকির নাম না করে মন্তব্য করেন। তার পরেই উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন যে সংখ্যালঘু ভোট যেন ভাগ না হয়। বিজেপি এলে সমূহ বিপদ, সবচেয়ে বেশি তাঁদেরই। কমিশনের যুক্তি, ধর্ম বা জাতপাতের ভিত্তিতে ভোট চাওয়া আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী। কোনও প্রার্থীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী তাঁর প্রার্থীপদ খারিজও করা যেতে পারে। তা নিয়েই নোটিস পাঠায় কমিশন।

এর পর কোচবিহারের জনসভা থেকেও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আক্রমণ করেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘নির্দেশে’ই সিআরপিএফ-এর একাংশ নাকি বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন যে সিআরপিএফ যদি গন্ডগোল করে, তাহলে মেয়েদের একটা দল যেন ওদের ঘেরাও করে রাখে। আর একটা দল যেন ভোট দিতে যায়। এর সাথে সাথে সাথে ভোট যাতে নষ্ট না হয় সে কথাও বলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার মন্তব্যে এর আগে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং কোচবিহারের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছিল কমিশন। তার জন্য মমতাকেও নোটিস পাঠানো হয়।

এর আগে মমতাকে দু’টি নোটিস পাঠিয়েছিল কমিশন। তারকেশ্বরে গত ৩ এপ্রিল মমতা বিধিভাঙা মন্তব্য করেছেন বলে কমিশন একটি চিঠিতে জানিয়েছিল। এর পরে একটি জনসভা থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ১০ বার শো-কজ করেও লাভ নেই। একই জবাব দেব।’’ কমিশনের অভিযোগ প্রসঙ্গে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে মুসলিমদের যাঁরা পাকিস্তানি বলেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ক’টা অভিযোগ হয়েছে? খালি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ?’’ এর পর শুভেন্দু অধিকারীকেও নোটিস পাঠায় কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ এবং ৭ এপ্রিল প্রচার সভা থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে মন্তব্যের জেরেও নোটিস পাঠানো হয় মমতাকে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version